প্রায় দরজা বন্ধ হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর ‘সাধের’ কিংফিশার এয়ারলাইন্স। আর তিনি, বিজয় মাল্য, নিজের ৫৮তম জন্মদিনে দেবতার দরজায় হাজির হলেন তিন কেজি সোনা নিয়ে। তিরুমালার বেঙ্কটেশ্বরের পায়ে ভেট হিসেবে। মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানালেন, প্রায় কোটি টাকার ওই সোনায় বিগ্রহের ঘরের দরজা বাঁধিয়ে দেওয়া হোক।
পরিবারের সঙ্গে একান্তে জন্মদিন কাটাতে সোমবারই তিরুমালা-তিরুপতি দেবস্থানমে এসে পৌঁছেছিলেন কিংফিশারের কর্ণধার। উঠেছিলেন অতিথিশালা বেঙ্কট বিজয়মে। পনেরো বছর আগে যা তৈরিতে টাকা দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার সেখানে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের পর মঙ্গলবারই গভর্গৃহের দরজা সোনায় মুড়ে দিতে ওই ‘প্রণামী’ দিয়েছেন ইউবি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। এই বিশেষ পুজোর কথা জানিয়েছেন তিরুমালা-তিরুপতি দেবস্থানমের ডেপুটি এগ্জিকিউটিভ অফিসার চিন্নমগড়ি রামন। |
মন্দির থেকে বেরিয়ে আসছেন বিজয় মাল্য। ছবি: পিটিআই |
টাকার অঙ্ক চোখ কপালে তোলার মতো হলেও, মাল্যের এমন ‘দেবভক্তি’ কিন্তু নতুন নয়। অগস্টে কর্নাটকের কুক্কে সুব্রহ্মণ্য মন্দিরে একই ভাবে ৮০ লক্ষ টাকার সোনায় মোড়া দরজা দিয়েছিলেন তিনি। শোনা যায়, কিংফিশারের জন্য কেনা প্রতিটি বিমান প্রথমে তিরুপতিতে নিয়ে যেতেন মাল্য। চাইতেন, প্রথমে বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরকে এক বার চক্কর কেটে তবেই তা যোগ দিক যাত্রী পরিবহণের কাজে।
তবে এক সময়ে দেশে দু’নম্বরে থাকা এই বিমান পরিবহণ সংস্থা গত ১ অক্টোবর থেকে তালাবন্দি। উড়ান বন্ধ। মাসের পর মাস বেতন পান না পাইলট, কর্মীরা। মাথার উপর চেপে রয়েছে পাহাড়-প্রমাণ দেনা। এই পরিস্থিতিতে কি নিজের এবং সংস্থার ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর আর্জি নিয়েই দুই মন্দিরে গিয়েছিলেন মাল্য? না কি কিংফিশারের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাওয়ার পর মানসিক ভাবে কিছুটা দুর্বল দেখাচ্ছে তাঁকে? এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
তেমনই অনেকে আবার বলছেন, এটা নিছকই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তা ছাড়া, প্রয়োজনে ভাঁড়ার থেকে অর্থ জুগিয়েও কিংফিশারকে চাঙ্গা করার কথাও তো সম্প্রতি বার বার বলেছে তাঁর সংস্থা। তাই এ সবের সঙ্গে তাঁর ‘ভক্তি’কে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও একটা খচখচানি থেকে যাচ্ছে অনেকের মধ্যেই। তাঁদের মতে, এই জন্মদিন উদ্যাপনে মাল্যের বিলাসবহুল জীবন কিংবা ‘ফ্ল্যামবয়েন্ট’ ভাবমূর্তি আরও চাঙ্গা হল বটে। কিন্তু একই সঙ্গে হয়তো প্রশ্নও উঠল সংস্থার কর্ণধার হিসেবে তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে। মাত্র কোটি টাকায় কিংফিশারের বরাত ফিরবে না, তা সকলেরই জানা। কিন্তু যে সংস্থার কর্মীরা দীর্ঘ দিন বেতন পান না, তার কর্ণধারের এমন রাজকীয় দেবদর্শনকে বাঁকা নজরে দেখছেন অনেকেই। তিরুপতি থেকেই অবশ্য টুইট করেছিলেন মাল্য। লিখেছিলেন, “বালাজি আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন।” এখন সেই আশীর্বাদে কিংফিশারের উড়ান ফের আকাশের দিকে মুখ তোলে কি না, সে দিকেই চোখ সকলের। |