বিজেপি-র সাহায্য নিয়ে আর্থিক সংস্কারের পথে আরও এক কদম এগোলো মনমোহন সিংহের সরকার।
কংগ্রেস যখন বিজেপি-র সাহায্য নিচ্ছে, তখন তৃণমূল ও বামেরা জোট বেঁধে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাল। কিন্তু খানিকটা আপস করতে হলেও লোকসভায় ব্যাঙ্ক আইন সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে শেষ হাসি হাসলেন পি চিদম্বরম এবং কমল নাথরাই। শরিকি বাধায় দীর্ঘদিন হাত গুটিয়ে থাকার পরে কেন্দ্র এখন সংস্কারে মরিয়া। যার একটা বড় পদক্ষেপ ব্যাঙ্ক আইন সংশোধন। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রয়োজনীয় পুঁজির সংস্থান হবে, ব্যাঙ্ক শিল্পে বিদেশি পুঁজি আসবে এবং বাজারে টাকার জোগান বাড়বে বলেই সরকার আশাবাদী।
বেসরকারি সংস্থাকে নতুন ব্যাঙ্ক খোলার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের কাছে অনেক দিন ধরেই আবেদন করছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ডি সুব্বারাওয়ের অনড় অবস্থান ছিল, আগে ব্যাঙ্ক আইন সংশোধন করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হোক। কিন্তু বিজেপি-র সাহায্য ছাড়া সেই আইন সংশোধন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে নিজে কথা বলেন চিদম্বরম। পণ্য কেনাবেচার ফাটকা বাজারে ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা ঢালার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে বিজেপি-র আপত্তি ছিল। তা মেনে নিতে হয়েছে সরকারকে।
বিজেপি যখন কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে, তখন অভূতপূর্ব সমন্বয় দেখালেন বাম ও তৃণমূল সাংসদরা। কে বলবে, ক’দিন আগেই বিধানসভায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল দু’পক্ষ! লোকসভায় গুরুদাস দাশগুপ্ত যখন ‘মনমোহন-চিদম্বরম অর্থনৈতিক মডেল’-কে আক্রমণ করেছেন, তখন টেবিল চাপড়েছেন সৌগত রায়। আবার স্পিকারের টেবিলের সামনে জড়ো হয়ে যখন স্লোগান দিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি বামেরা তাতে গলা মিলিয়েছেন।
এই সময়ই আসরে নামেন সংসদীয়মন্ত্রী কমল নাথ। চিদম্বরমকে নিয়ে বামেদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। মুলায়ম-বিএসপি-শরদ যাদবদের সরকারের পক্ষে ভোট দিতে রাজি করান। বামেরা শেষ পর্যন্ত বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। অনুপস্থিত থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল।
বাম-তৃণমূলের আপত্তির উত্তরে অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির জন্য অবিলম্বে ১৫ হাজার কোটি টাকার পুঁজি দরকার। না হলে তারা ঋণ দিতে পারবে না। এত দিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কোনও ব্যক্তি বা বেসরকারি সংস্থার অংশীদারিত্ব যতই থাকুক না কেন, পরিচালন সমিতিতে তাদের ভোট কখনওই মোট ভোটের এক শতাংশের বেশি হতে পারত না। এ বার তা বাড়িয়ে দশ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে ব্যাঙ্ক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার উৎসাহ বাড়বে বলে অর্থ মন্ত্রকের আশা। বামেরা অবশ্য মনে করছে, এর ফলে ঘুরপথে ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। আইন সংশোধনের পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্ক খোলার লাইসেন্স দিতে রাজি হবে বলেও অর্থ মন্ত্রক আশাবাদী। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভয় ছিল, বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলি ব্যাঙ্ক খুলে নিজেরাই তাদের অন্য ব্যবসার জন্য সেখান থেকে ঋণ নিতে পারে। সেই ব্যবসায় লোকসান হলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ই জলে যাবে। তাই প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়া এবং ওই সব ব্যাঙ্কের শাখা সংস্থাগুলির তহবিল খতিয়ে দেখার ক্ষমতা চেয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই বিলে তা দেওয়া হয়েছে। |