যাত্রী-পরিষেবায় বহু দিন ধরেই হোঁচট খাচ্ছে ট্রাম সংস্থা। এ বার ‘দোকান’ খুলেও তাদের একই হাল।
তিন মাসের মধ্যেই বন্ধের মুখে ধর্মতলার বাস গুমটিতে খোলা যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য-কেন্দ্রের সেই দোকান। স্বাচ্ছন্দ্য-কেন্দ্রের পরিষেবা বাড়ানোর চেষ্টায় দোকানটি খোলা হয়েছিল। কিন্তু স্রেফ পরিকল্পনা ও কর্মীদের পেশাদারিত্বের ঘাটতির কারণেই সেই দোকান বন্ধ করে দিতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি সিটিসি কর্তৃপক্ষের।
ধর্মতলায় সিটিসি বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকে, শহিদ মিনার লাগোয়া রাস্তার সামনে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য-কেন্দ্র। সেখানে প্রায় ৭০ বর্গফুট জায়গায় গড়ে উঠেছে টিনের ছাউনির দোকান। কাচের জানলা বন্ধ। বাইরে থেকে দেখা যায় ভিতরে বিস্কুট, চানাচুর, মশলা-মুড়ির প্যাকেট। প্লাস্টিকের জারে লজেন্স, চুইংগাম। ফ্রিজে মিনারেল ওয়াটারের বোতল। ভিতরে সিটিসি-র কর্মী তথা ‘দোকানদার’। সামনে টিনের ছাউনির নীচে যাত্রীদের বসার জায়গা। কিছু কেনার জন্য জানলায় টোকা মারলে ভিতর থেকে খুলে দেওয়া হয়। কেনাকাটা হলে ফের বন্ধ হয়ে যায় কাচের জানলার পাল্লা। কিন্তু খদ্দের নেই বলেই দাবি কর্মীদের। কোনও দিন ৫০ টাকার, কোনও দিন মেরেকেটে ১০০ টাকার বিক্রিবাট্টা। তা-ও ক্রমেই কমে আসছে। যদিও ওই বাসস্ট্যান্ডেই অনেকগুলি দোকান চলছে রমরম করে। |
ট্রাম কোম্পানির সেই দোকান। —নিজস্ব চিত্র |
ধর্মতলার সিটিসি বাসস্ট্যান্ড চত্বরে আসা যাত্রীরা জানান, কেউ বলে না দিলে কোনও ভাবেই বোঝা সম্ভব নয় যে, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য-কেন্দ্রের মধ্যে একটি দোকান রয়েছে। বাগনানের বাসিন্দা রঞ্জন দাশশর্মা যেমন বললেন, “প্রতিদিন এখান থেকে বাসে উঠি। জানিই না সিটিসি-র দোকান রয়েছে। ঠিক মতো প্রচার না থাকলে কী করে বুঝব? আমরা তো কিছু খাবার কেনার দরকার হলে গুমটি থেকেই কিনি।”
গত অক্টোবরে পুজোর কয়েক দিন আগে ওই দোকানটি উদ্বোধন করেন সংস্থার চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন। কথা ছিল, ধর্মতলা চত্বরের ওই দোকান প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কিন্তু কর্মসংস্কৃতির অভাবের ছাপটা ছিল প্রথম থেকেই স্পষ্ট। বিভিন্ন ডিপো থেকে চার জন কর্মীকে নিয়ে সেখানে কাজে লাগানো হয়। তাঁদের এক জন মহিলা, তিনি আগে নোনাপুকুর ডিপোর সাফাইকর্মী ছিলেন। বাকি তিন জনের এক জন বেলগাছিয়া ডিপোয় লেবার ওয়েলফেয়ার বিভাগে ও অন্য দু’জন গড়িয়াহাট ডিপোয় ট্রাফিক বিভাগে ছিলেন। স্বাচ্ছন্দ্য-কেন্দ্রের দোকানে দুই শিফ্টে ওই চার জনকে নিয়োগ করা হয়।
দোকান চলছে না কেন? সিটিসি সূত্রে খবর, প্রধানত তিনটি কারণে ওই ব্যবসা হোঁচট খাচ্ছে। প্রথমত প্রচারের অভাব। কোনও ব্যবসা চালাতে গেলে যে ধরনের প্রচার প্রয়োজন, তার বিন্দুমাত্রও হয়নি সিটিসি-র এই দোকানের ক্ষেত্রে। দোকানের সামনে কোনও গ্লোসাইন বোর্ড নেই। যা দেখে সাধারণ মানুষ বুঝবেন যে, সেটি একটি দোকান। আবার একটি ঘরের জানলায় ভিতর দিকে খাবারদাবার ঝুলিয়ে রাখলেও কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, সেটি দোকান কি না। তার উপরে অধিকাংশ সময়েই দোকানের কাচের জানলা বন্ধ থাকে।
দ্বিতীয়ত, কর্মীদের দক্ষতার অভাবকেও দোকান না চলার একটি কারণ বলে মনে করেন সিটিসি-র কর্তারা। তাঁদের কথায়, যে চার জন কর্মী দোকানের দায়িত্বে, তাঁরা কেউই ব্যবসার কাজে দক্ষ নন। ক্রেতাকে কী ভাবে সামলাতে হয়, সে সম্পর্কে তাঁদের কোনও অভিজ্ঞতাই নেই।
তৃতীয়ত মানসিকতার অভাব। কর্তাদের মতে, কর্মীদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা আছে। দোকানটি সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ দিনই তা মানা হয় না। কর্মীরা অধিকাংশ সময়েই দোকান বন্ধ করে এ দিক-ওদিক চলে যান।
কিন্তু এ সবই কি পরিকল্পনায় ঘাটতির দিকে ইঙ্গিত করছে না?
ব্যবসায় নামার আগে পরিকল্পনায় ঘাটতির কথা কার্যত মেনে নিয়ে শান্তিলালবাবু বলেন, “প্রচেষ্টা সার্থক হলে পরবর্তী পর্যায়ে এ রকম আরও দোকান খোলা হত। তাই পরীক্ষামূলক ভাবে এটি চালু করেছিলাম। কিন্তু পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। এ ভাবে দোকান চলবে না। তাই বিধি মেনে বেসরকারি সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।” |