জমি নীতির জন্যই পশ্চিমবঙ্গে অন্তত এখনই বড় শিল্পের আশা দেখছে না অ্যাসোচ্যাম। বণিকসভাটির দাবি, রাজ্য জমি অধিগ্রহণে রাজি নয় বলেই শিল্পের জন্য নতুন জমি পাওয়া একটা বড় সমস্যা। তাই মুখ্যমন্ত্রী যতই লগ্নি টানতে ঘরে-বাইরের তাবড় শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করুন না কেন, বণিকসভাটির মতে, ছোট ও মাঝারি শিল্পই ভরসা। মুখ্যমন্ত্রীও সম্প্রতি ছোট-মাঝারি শিল্পের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন। যদিও ছোট ও মাঝারি শিল্প বড় শিল্পের সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অ্যাসোচ্যামেরই একাংশ। শিল্পমহলের এই সংশয়েই স্পষ্ট, লগ্নিকারীদের মনে বিভ্রান্তি বাড়ছে বই কমছে না।
পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে বড় শিল্পের জন্য জমির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব শিল্পমহলের বড় অংশ। অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট রাজকুমার ধুতের অবশ্য বক্তব্য, শিল্পের জন্য জমির এই সমস্যা অন্য রাজ্যেও রয়েছে। শিল্পপতিদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে জমির যা চরিত্র, তাতে এক লপ্তে বড় জমি পাওয়াটাই কঠিন। কিছু সংস্থা নিজেরা জমি কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে। সঙ্গে রয়েছে দালালরাজ। তাই শিল্পমহল চায়, জমি জোগাড়ে সাহায্য করুক রাজ্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারেবারেই জানিয়েছেন, বেসরকারি শিল্পকে নিজেকেই জমি জোগাড় করতে হবে। সাম্প্রতি কলকাতায় ও দিল্লিতে পরপর কয়েকটি বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী নিজের অবস্থান বদলাননি। এক দিকে লগ্নির আর্জি নিয়ে বৈঠক, অন্য দিকে জমি প্রশ্নে তাঁর অবস্থান, রাজ্যের এই মনোভাবের কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না শিল্পমহল। |
বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম ও অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট রাজকুমার ধুত। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র |
মঙ্গলবার অ্যাসোচ্যাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের উদাসীনতা জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা। সরকারি দফতরের হাতে থাকা জমিও বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও বা তা মেলে, তা এত দূরে, যে যেখানে কোনও শিল্প গড়ার উপযুক্ত পরিকাঠামোই নেই। এই অবস্থায় এ দিন অ্যাসোচ্যামের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুনীল কানোরিয়া বলেন, “এই মুহূর্তে এখানে শিল্পের জন্য উপযুক্ত জমি পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর জোর দেওয়াই ভাল।” অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকারেরও গলায় ছিল একই সুর। যদিও অ্যাসোচ্যামেরই সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত প্রশ্ন তোলেন, বড় শিল্পের মতো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবে ছোট ও মাঝারি শিল্প? রাওয়াতের স্পষ্ট বক্তব্য, শিল্পায়ন চাইলে রাজ্যকে জমি অধিগ্রহণ করতেই হবে।
তবে কি রাজ্যে বড় শিল্প আর হবে না? সুনীল বলেন, “একেবারে সম্ভাবনা নেই, তা নয়। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে।” প্রশ্ন ওঠে, জমির অভাবেই তো এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প কার্যত গোটানোর মুখে। সুনীলের দাওয়াই, “বড় জমি পাওয়া যখন সমস্যার, তখন ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া হোক। তা হলে জমি কম লাগবে!” জমি ছাড়াও এসইজেড-সহ অন্যান্য বিষয়ে রাজ্যের যে সব আপত্তি রয়েছে, তা নিয়েও সরব শিল্পমহল। যেমন খুচরোর ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে রাজ্যের বিরোধিতা প্রসঙ্গে ধুত জানান, বিভিন্ন রাজ্য বিরোধী হলেও তাঁরা কিন্তু এর পক্ষে।
রাজারহাটের অর্থ তালুকে লগ্নির সম্ভাবনা নিয়ে এ দিন সভার আয়োজন করেছিল অ্যাসোচ্যাম। সেখানে রাজারহাটে ইনফোসিস-এর অর্থতালুকের প্রসঙ্গ ওঠে। কিন্তু নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ফের জানান, ইনফোসিসকে তাঁরা এসইজেড-এর মর্যাদা দেবেন না। |