লগ্নি টানতে অন্য রাজ্যগুলি যখন টাটা বা অম্বানী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলাটাই রীতি বলে মনে করে, সেখানে অন্য পথে পশ্চিমবঙ্গ। সোমবার দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে রাজ্যের পক্ষ থেকে এই দুই গোষ্ঠীর কোনও কর্তাকেই আমন্ত্রণ না জানানোয় বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়। মঙ্গলবার মহাকরণে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য তাদের ডাকার প্রয়োজন মনে করেনি বলেই ডাকেনি! তাঁর কথায়, “আমরা মনে করেছি, দরকার নেই। তাই ডাকিনি।”
তা হলে কী পশ্চিমবঙ্গে টাটা বা অম্বানী গোষ্ঠীর মতো সংস্থাগুলির লগ্নির প্রয়োজন নেই? |
আনন্দবাজারের করা এই প্রশ্নে পার্থবাবু বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “টাটা তো নিজেই বলেছেন, উনি আসতে চান। সাইরাস মিস্ত্রিও এসে বলে গিয়েছেন যে, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী। যে আসতে চায় আসুক।” শিল্পমন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকার গাড়ি শিল্পে যে কোনও লগ্নিকে স্বাগত জানিয়েছে। ফলে এই শিল্প কেউ আসতে চাইলে আসুক, কিন্তু সেটা লিখিত ভাবে না জানালে বিশ্বাসযোগ্য হয় না বলেই তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গত দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের আগের দিনই সংবাদসংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রতন টাটা ফের সিঙ্গুরে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
দিল্লির ধাঁচে মুম্বইয়ে গিয়েও শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সে সময় অম্বানীদের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে পার্থবাবু এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য রাজ্যে জমি কিনেও মুকেশ অম্বানী গোষ্ঠী সেখানে কারখানা না গড়ায় শিল্পমন্ত্রী এ দিন তাদের সমালোচনা করেন।
দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে রাজ্য সরকার বেশ খুশি। ওই দিন বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সাংবাদিকদের জানান, শিল্পপতিদের অনেকেই রাজ্যে বিনিয়োগ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বৈঠকে যে ৪২ জন শিল্পপতি মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাঁরা কেউ-ই সেই অর্থে প্রথম সারির নন। যে কারণে শিল্পমহলের একটা বড় অংশ ওই বৈঠকটিকে বিশেষ গুরুত্বও দিতে নারাজ। সেই সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার অনেক আগেই হিরো মোটো কর্পের সুনীল মুঞ্জল চলে যাওয়ায় বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ওই দিনের বৈঠকে মুঞ্জল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে রাজ্যের অবস্থান বদলানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন। জবাবে কোনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তার কিছু পরেই মুঞ্জল বৈঠক ছেড়ে চলে যান। এই প্রসঙ্গে পার্থবাবু এ দিন জানান, সুনীল মুঞ্জল বৈঠক থেকে ওয়াক-আউট করেননি। কিছু সংবাদপত্রে এ বিষয়ে যা লেখা হচ্ছে তা ভুল বলে তিনি দাবি করেন। পার্থবাবু জানান, মুঞ্জলের অন্য একটি মিটিং থাকায় তিনি চলে যান। সিআইআই-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুঞ্জল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে নিজের কিছু কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উত্তর দিয়েছেন। পার্থবাবুর দাবি, এই নিয়ে বাড়তি জল্পনার অবকাশ নেই।
পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে ক্ষেত্রে এখন কার্যত খরা চলছে। বণিকসভাগুলির দাবি, সে ভাবে কোনও বড় সংস্থাই এখন এ রাজ্যে লগ্নির কথা ভাবছে না। তবে পার্থবাবু এ দিন রাজ্যে শিল্পের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট উজ্জ্বল বলেই দাবি করেছেন। তিনি জানান, পুনিত ডালমিয়া শালবনীতে সিমেন্ট কারখানা করতে আগ্রহী। হর্ষ সিঙ্ঘল আসানসোল-দুর্গাপুরে ৪০ একর জমিতে সিমেন্ট কারখানা করতে চান। অনেকে এ রাজ্যে পর্যটন ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নিতে আগ্রহী। দিল্লির বৈঠক সম্পর্কে শিল্পমন্ত্রীর বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে শিল্পপতিদের ধারণা অনেক বদলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁরা আস্থা প্রদর্শন করেছেন। জমি নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি।” |