জরুরি বিভাগ থেকে ছাদে ওঠে মঙ্গল
|
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কী করে সে চম্পট দিয়েছিল, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তার বিবরণ দিল শান্তিনিকেতনে রেণু সরকার হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত মঙ্গল সাহানি। হত্যাকাণ্ড কী ভাবে ঘটানো হয়েছিল, মঙ্গলবার তারও বর্ণনা সে ফের দিয়েছে।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে শান্তিনিকেতনের বাগানপাড়ায় নিজের বাড়িতেই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা রেণু সরকার খুন হয়েছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই মঙ্গল-সহ তিন জন গ্রেফতার হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ায় অক্টোবরের গোড়ায় তাকে বোলপুর উপ-সংশোধনাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বর্ধমানে পাঠানো হয়েছিল। ১৫ অক্টোবর রাতে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকেই সে পালিয়ে যায়। এর পর থেকেই রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি) মঙ্গলকে খুঁজছিল। ১৫ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে সে ধরা পড়ে। প্রথমে কলকাতায় ভবানী ভবনে, সেখান থেকে এ দিন বর্ধমানে নিয়ে গিয়ে তাকে জেলা আদালতে তোলা হয়। তার আগে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা তাকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন। বর্ধমানের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন আহমেদ তাকে ছ’দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |
আদালতে মঙ্গল সাহানি। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দাবি, মঙ্গল জেরায় কারারক্ষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। তার কথা অনুযায়ী, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকাকালীন মুখ থেকে রক্ত পড়ায় দুই কারারক্ষী তাকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্যালাইন দেওয়ার জন্য এক হাতের হাতকড়া খোলা হয়। অন্য হাতের হাতকড়ার স্ক্রু-ও ঢিলে করে রেখেছিল মঙ্গল। ইতিমধ্যে কারারক্ষী দেবপ্রসাদ গড়াইয়ের নিজের গ্রাম, বর্ধমানেরই ভাতারের নাসিগ্রাম থেকে সাপে কাটা এক রোগী আসায় তিনি মঙ্গলকে ফেলে রেখে তদারকি করতে যান। সেই সুযোগে জরুরি বিভাগ থেকে বেরিয়ে বহির্বিভাগের ছাদে উঠে পড়ে সে। সেখানে গুঁড়ি মেরে শুয়ে দেখে, কারারক্ষীরা কেমন পাগলের মতো তাকে খুঁজছেন।
সিআইডি সূত্রের খবর, জরুরি বিভাগ থেকে পালানোর সময়ে কোনও কারারক্ষী তাকে সাহায্য করেছিলেন কি না, কী করে চিকিৎসকের বদলে কম্পাউন্ডার তাকে হাসপাতালে ‘রেফার’ করলেন, এ সব নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ, রক্ষীদের বাঁচাতে মঙ্গল হয়তো মিথ্যে বলছে। রক্ষীদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করলে তবেই জট খুলতে পারে।
সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার শেখ রৌশন আলি বলেন, “আমাদের জেরার মুখে মঙ্গল স্বীকার করেছে, টানা দশ বছর ধরে নানা অপরাধের যুক্ত।” তবে মঙ্গল গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছে, সে খুন করতে চায়নি। এক কাঠমিস্ত্রির কাছে সে শুনেছিল, রেণুদেবী এক বাক্সে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে এসেছেন। তা হাতাতেই সে বাড়ির রেলিং ভেঙে দোতলার ঘরে ঢোকে। কিন্তু ঘুমন্ত রেণুদেবী হঠাৎ জেগে উঠে চিৎকার শুরু করায় সে লোহার রড চালিয়ে দেয়। তা সোজা বৃদ্ধার মাথায় গিয়ে লাগে। দু’টি দাঁত খুলে পড়ে যায়। বেগতিক বুঝে মাত্র দেড়শো টাকা ও একটি মোবাইল নিয়ে মঙ্গল সরে পড়ে।
ঘটনার পরেই মঙ্গল বোলপুরের শুঁড়িপাড়ায় নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে ধরে। তাকে জেরা করে আগেই খুনে ব্যবহৃত রড উদ্ধার হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে ফের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে সিআইডি সূত্রে জানানো হয়েছে। |