স্বাগত জানাতে গিয়ে দূরে সরতে হল উপাচার্যকে
|
মহেন্দ্র জেনা • শান্তিনিকেতন |
নানা বিতর্কে বিড়ম্বিত বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত আবারও বিব্রত হলেন সর্বসমক্ষে। হেলিপ্যাডে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাতে গিয়েও ফিরে যেতে হল তাঁকেই! সন্ধ্যায় অবশ্য রথীন্দ্র অতিথিগৃহতে তিনি অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতিকে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানের গোড়াতেই যেন সুর কেটে গেল।
এমনই বলছেন শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর একাধিক প্রাক্তনী।
তাঁদের বক্তব্য, বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা আচার্যই (প্রধানমন্ত্রী) হোন বা পরিদর্শক (রাষ্ট্রপতি) নিজস্ব রীতি মোতাবেক তাঁকে অভ্যর্থনা জানান বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই শান্তিনিকেতনের বিনয়ভবনের কুমিরডাঙা মাঠে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন সাধারণ মানুষ। বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ নিরাপত্তার বেষ্টনী পার করে বিশ্বভারতীর জনা পনেরোর একটি দল তখন হাঁটা লাগায় হেলিপ্যাডের দিকে।
|
সংবর্ধনা জানাতে না পেরে মাঠ ছাড়লেন উপাচার্য (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র |
সেই দলে ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, কর্মসচিব ডি গুণশেখরণ, আধিকারিক মণিমুকুট মিত্র এবং শিক্ষাসত্র ও পল্লি সম্প্রসারণ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। রবীন্দ্র সঙ্গীত ও জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি সারা।
কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি না থাকায় বীরভূমের পুলিশ সুপার আটকে দিলেন সুশান্তবাবুদের। সঙ্গীদের নিয়ে হেলিপ্যাডের অদূরেই নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তখন তিনি দৃশ্যতই অস্বস্তিতে। চারটে নাগাদ বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে নামলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। জনতার উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে মাটিতে পা রাখলেন রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে নেমে এলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও। স্বাগত জানালেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। পাশে তখন বর্ধমানের ডিভিশনাল কমিশনার হরি রামালু, রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা ও পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা।
কেন এই বিভ্রাট?
পুলিশ সুপার বলেন, “রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে আসা তালিকায় হেলিপ্যাডে উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিশ্বভারতীর কোনও প্রতিনিধির নাম ছিল না। তাই রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার প্রোটোকল মেনেই উপাচার্য বা অন্যদের হেলিপ্যাডের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া যায়নি।” সন্ধ্যায় কর্মসচিব বলেন, “বিশ্বভারতীর তরফ থেকে ই-মেল করা হয়েছিল। সম্ভবত রাষ্ট্রপতির দফতর তা পায়নি। কোনও নির্দিষ্ট কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে এটা একটা ছোট্ট ফাঁক।”
পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত বিরক্তিকর। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান। তাতে যোগ দিতে আসছেন রাষ্ট্রপতি। অথচ কার্যত ঢুকতে দেওয়া হল না উপাচার্য ও পড়ুয়াদের। এমনটা একেবারেই অভিপ্রেত ছিল না।” |