হুল্লোড়
জীবনের শেষ দিন


বলা যায় না ধ্বংসের আগে শুভশ্রী
কাউকে বিয়েই করে ফেলল
ভাবতেই পারি না সেই মুহূর্তে কী হবে। সাউথ সিটির মতো লম্বা বাড়ি থেকে কী ভাবে রাস্তায় নামব তাও জানি না। রান্না করে সময় কাটানো বরং ভাল। সেই দিন যত পারব আমার রান্না খাওয়াব যাদের আমি বাড়িতে ডাকব তাদের। ওটাই তো হবে আমাদের লাস্ট সাপার। শুভশ্রীকে অবশ্যই ডাকব। বলা যায় না শুভশ্রী হয়তো পৃথিবী ধ্বংসের আগে পছন্দসই কাউকে বিয়েই করে ফেলল। তাই যদি হয়, ওদের দু’জনকেও ডেকে নেব। কিংবা ডুমস্ ডে-র কথা ভেবে রানে আর কোয়েল আগেই বিয়ে করে ফেলল। তা হলে ওদের বিয়ের সাক্ষী থাকব।

দেবকে বাড়িতে
ডেকে নিতে চাই
প্রিয়জনদের সবাইকে আমার বাড়িতে আসতে বলব। সবাই এত আনন্দ করব যে, মৃত্যুর কথা মনেই হবে না। গল্পে আড্ডায় এমন মজে যাব যে, কয়েক ঘণ্টা বাদে সব শেষ সেটা ভুলে যাব। আর একটা ইচ্ছে শেষ মুহূতের্, মায়ের হাতের রান্না খাব। দেবকেও চলে আসতে বলব বাড়িতে। কিন্তু ও তো সুপারস্টার। হয়তো অন্য কোনও বন্ধুর বাড়িতেও চলে যেতে পারে। তবুও বলে দেখব যদি ও সঙ্গে থাকে তা হলে আরও ভাল লাগবে। ও আমার প্রিয়জনদের একজন তো বটেই।

ধ্বংসের গল্পটা লিখে যাব,
কে পড়বে জানি না
২১ তারিখ আমি তো থাকব মেয়ে -জামাইয়ের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে। মেয়ে জামাই নাতি-নাতনি, বরকে নিয়ে। তাই পৃথিবী ধ্বংস হলেও খুব একটা দুঃখের কিছু থাকবে না। তার আগে নাতি-নাতনিকে নিয়ে একটু নেচে নেব। যদি বুঝি পৃথিবী সত্যিই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বহু দিনের হারিয়ে যাওয়া প্রেমিককে একবার ফোন করব। আমি চলে গেলাম, আর ব্যাঙ্কের টাকাগুলো রয়ে গেল এমন যদি হয় সেটাও খুব দুঃখের হবে। ধ্বংসের আগে খানিকক্ষণের জন্য লেখায় মন দেব। লিখে যাব ধ্বংস নিয়ে একটা গল্প। হয়তো কেউ পড়ার থাকবে না। যদি পড়ে, এই আশায়...

প্রচুর বিরিয়ানি খেতে খেতে
ধ্বংসের মানসিক প্রস্তুতি নেব
যদি ডুমস্ ডে-তে পৃথিবী শেষ হয়ে যায় তার আগে আমি পার্ক সার্কাস চলে যাব। ওখানে বিভিন্ন দোকানের বাদশাহি খাবার জিভের জল ঝরিয়ে পেট পুরে খেয়ে নেব। পৃথিবীই তো থাকবে না, তাই পেট খারাপ হওয়ার ভয়ও থাকবে না। বিশেষ করে খাব বিরিয়ানি। পার্ক সার্কাসের একেকটা দোকানের বিরিয়ানির একেক রকম স্বাদ। প্রত্যেকটাই শেষ বারের মতো চেখে দেখব। আমি এ পর্যন্ত প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি। মুখের সামনে এসে কেউ নিন্দে করেনি। আড়ালের নিন্দাও কম শুনেছি। কিন্তু কিছু লোক নিশ্চয়ই আমার নিন্দে করেন। আমি চাইব তাঁরা আমার সামনে এসে খোলাখুলি শেষ বারের মতো নিন্দে করুক প্রাণ ভরে। তাতে তাঁরাও শান্তিতে মরবেন। আমিও শান্তিতে যাব। কারণ নিন্দুকদের চেনা হয়ে যাবে। তাঁদের তো আমি এখনও চিনি না।

ডি’ ক্যাপ্রিওর সঙ্গে আল্পসের
চূড়ায় যেতে ইচ্ছে করবে
ডুমস্ ডে-তে লিওনার্ডো ডি’ ক্যাপ্রিওর সঙ্গে থাকতে চাই। হলিউডে চলে যেতে ইচ্ছে করবে। অনেকটা কেট উইন্সলেট আর ক্যাপ্রিও যে ভাবে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময় জলে ভেসেছিল, সে ভাবেই ক্যাপ্রিওর সঙ্গে থাকব। কিংবা ক্যাপ্রিওকে নিয়ে পৌঁছে যেতে চাই আল্পসের চূড়ায়। বহু দিনের শখ বিশ্ব ভ্রমণের। যদি বুঝি সেটা আর হবে না, তা হলে আল্পসের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ক্যাপ্রিওর আলিঙ্গনে শেষ নিশ্বাস ফেলতে চাই। এ সব যদি কিছু না করতে পারি, যদি এই কলকাতাতেই থেকে যেতে হয়,  শেষের কয়েক ঘণ্টা কাটাব যে কোনও বড় শপিং মলে। যে যে জিনিস কেনার ইচ্ছে আছে সব কিনে ফেলব।

ইগলুতে তবলা বাজাব।
সঙ্গে থাকবে ছেলে বউ
যদি ডুমস্-ডে আইসল্যান্ডে কাটাতে পারতাম বেশ হত। বিশাল একটা ইগলুতে বরফের পাটাতন ফেলে, স্টেজ বেঁধে পারফর্ম করতাম। প্রচুর এস্কিমো আমার বাজনা শুনত। খাবার হিসেবে খেতে ইচ্ছে আছে ঝলসানো শিল মাছের মাংস। স্লেজগাড়ি করে ইগলুতে অনুষ্ঠান করতে যেতাম। তাতে থাকত আমার বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট আর অন্য শিল্পীরা। বলা যায় না ওই রকম একটা জায়গা ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচেও যেতে পারে। তা হলে তো আমি আর আমার দলের সব লোকজন বেঁচে যাব। ইগলুতে পারফরম্যান্স হলে ছেলে-বউকেও সঙ্গে নিতে চাই। কিন্তু এক দিনের মধ্যে কি আর আইসল্যান্ড যাওয়ার ভিসা পাব!

লুচি ছোলার ডাল খেতে খেতে
‘হীরক রাজার দেশে’ দেখব
মায়ার বাঁধনে আর জড়াতে চাইব না ওই রকম একটা মুহূর্তে। ছেলে বউয়ের সঙ্গে দেখা করে সোজা নিজের ঘরে চলে যাব। একা থাকব। লুচি আর ছোলার ডাল খেতে খেতে ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিটা দেখতে থাকব। ‘নহি যন্ত্র’ গানটা শুনব বারবার। এটা আমার খুব প্রিয় গান। আমরা যে যন্ত্র নই, রক্ত মাংস আর অনুভূতির মানুষ তা এই গানটা শুনে আমার আরও গভীর ভাবে মনে হয়। সেই গভীর অনুভূতি দিয়ে প্রকৃতিকে কুর্নিশ জানিয়ে মেনে নেব সমাপ্তি মুহূর্তকে। প্রকৃতির অসীম শক্তিই তো সবচেয়ে বড় সত্য। তার ক্ষমতা বা শাসনের থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও বৃথা পথ খোঁজার চেষ্টা করব না।

পান্নালালের গান গাইব, সঙ্গে
গিটার, গোল করব যুবভারতীতে
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই খবরটা রাষ্ট্র হয়ে গেলে নিজের কোনও গান গাইব না। গাইব পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান, “সময় তো থাকবে না গো মা/কেবলমাত্র কথা রবে গো মা।” আমার মতে, এটাই আমার শেষ গান হবে। বরাবরের ইচ্ছে ছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একটা ফুটবল ম্যাচ খেলার। আমি তা হলে ডিফেন্স থেকে বল নিয়ে ছুটতে ছুটতে দশ জন প্লেয়ারকে কাটিয়ে, পেনালটি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে একটা জোরালো কিক নেব, গোলকিপার কিছু বোঝার আগেই বল জালে জড়িয়ে গেছে। গোটা স্টেডিয়ামে উত্তেজনা আর হাততালি। তখন যে আনন্দ হবে তাতে ধ্বংসটংসের কথা আর মনেই থাকবে না।

ভয় নেই, পৃথিবী ধ্বংস
হবে না, হলে চাঁদে চলে যাব
ডুমস্ ডে নিয়ে কোনও আশঙ্কা নেই। এখন ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ ছবিতে অভিনয় করছি। ২১ তারিখেও শু্যটিংয়ে যাব। আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্যের কৃপা আছে আমার ওপর। তার কৃপা থাকা মানে তো সপ্তম স্বর্গে উড়ে বেড়ানো। যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। পৃথিবী যখন ধ্বংস হব হব, সেই দৈত্যের কাঁধে ভর দিয়ে আমার সব প্রিয়জন নিয়ে পাড়ি দিতে চাই চাঁদের মাটিতে। চাঁদের আবহাওয়া বা জলবায়ু এখন কেমন তা তো জানি না। বউকে বলব, গিজার, হিটার, সব সঙ্গে নিতে। যদিও আমি জানি এ সব কিছুই ঘটবে না। বড়জোর একটা সুনামি বা বড়সড় ভূমিকম্প হতে পারে। এ রকম তো কতই হয়। তেমন কিছু ঘটার থাকলে পশুপাখিদের আচরণ বদলে যেত। ওদের চলাফেরা দেখেই তো বোঝা যায় পৃথিবীতে বিপদ আসছে কি না।

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া
আর কোনও উপায় থাকবে না
জীবনে বহু বার মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েছি। মৃত্যুকে পার হয়েও এসেছি বহু বার। তাই ‘ডুমস্ ডে’ নিয়ে বিশেষ চিন্তা নেই। তা ছাড়া এটা বেশ নেগেটিভ থট মনে হয়। শেষ ইচ্ছে বলতে একটাই, ওই রকম ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েও ভাবব, যাঁরা বেঁচে যাবেন, তাঁদের মধ্যে আমার ছেলে যেন থাকে। ও যেন মানুষ হয়। আর একটা ইচ্ছে, এই পৃথিবীতে থেকে যাঁরা দীর্ঘ দিন নানা কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁদের সব যন্ত্রণার যেন অবসান হয়। আর কী? প্রবল ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। একমনে প্রার্থনায় বসতে চাই।

ফোন করে পুরোনো বান্ধবীর
সঙ্গে দেখা করব ভিক্টোরিয়ায়
যে বান্ধবী এ জীবনে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল, তাকে একটা ফোন করব। পারলে তার সঙ্গে একবার দেখা করে নেব ভিক্টোরিয়ায়। বাড়ি ফিরে যতটা সম্ভব পাঁঠার মাংস আর চিংড়ি মাছ খাব। যে সময়টা ঠিক পৃথিবী ধ্বংস হব হব, তখন ডিভিডিতে চলবে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। এ সব অবশ্য সবটাই কৌতুকে বললাম। মনের গভীরে থাকবে অন্য ইচ্ছে। আমি আমার স্ত্রী যদি চলেও যাই, চাইব ছেলেমেয়েরা যেন সব বিপদ কাটিয়ে বহাল তবিয়তে থেকে যায়।

নাটক করব, দেবব্রত বিশ্বাসের
গান শুনব এক বার অন্তত
প্রথম ইচ্ছে আমার দুটো নাটক শেষবারের মতো মঞ্চস্থ করার। ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ আর ‘কন্যাদান’। নিজে বাজারে যাব। সেরা কুকের হাতের রান্নায় খাব ভাত, মুসুরির ডাল, পোস্তর বড়া, কালোজিরে দিয়ে ইলিশ মাঝের ঝোল। দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া ‘গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা’ গানটা শুনতে থাকব। ওটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় গান। চার পাশের মহাপ্রলয়ের সঙ্গে ম্যাচ করে যাবে গানটা। পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলা কোনওটার মধ্যেই আমি নেই। তখন থাকব একেবারে বর্তমানে, স্ত্রী-য়ের সঙ্গে।


ডুমস্ ডে-র দিন একটাই শেষ ইচ্ছে। আমার মেয়ে দুটো যেন বেঁচে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.