আমরির ঘটনায় শিক্ষা নিয়েছে ইমামবাড়া
দোতলা ও তিনতলায় একাধিক লাল রঙের দরজা। সেখান দিয়ে নেমে গিয়েছে বাঁকানো সিঁড়ি। সিঁড়ির রঙও লাল। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে বেরিয়ে আসতে পারেন সে জন্যই এই ব্যবস্থা। হুগলির ইমামবাড়া হাসপাতালের আপাত অগ্নিসুরক্ষার ব্যবস্থা এমনই।
ঠিক এক বছর আগে কলকাতায় আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রশাসন। হুগলিও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কথা ছিল রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বার্থে অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে কোনও ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না। বছর পেরোতে চললেও সরকারি সেই নির্দেশ কিন্তু ফিকে হয়ে গিয়েছে। সরকারি নির্দেশের সঠিক পালনে বহু হাসপাতালেই দেখা গিয়েছে অনীহা। চন্দননগর বা শ্রীরামপুর ওয়ালশদু’টি হাসপাতালেই এখনও বজায় রয়েছে মান্ধাতা আমলের অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক বা নার্সদের না আছে আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ, না আছে বিপদের সময় অন্যদের প্রাণ বাঁচানোর উপায় সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা। দমকল বিভাগের সঙ্গেও কার্যত কোনও সমন্বয় নেই দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
ওয়ার্ডে টাঙানো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
যদিও এরই মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গিয়েছে হুগলির সদর হাসপাতাল ইমামবাড়ায়। আমরির ঘটনার পরে একটি দু’টি নয়, গত এক বছরে মোট ৬টি ‘ইমার্জেন্সি এক্জিট’ (আপৎকালীন দরজা) তৈরি করা হয়েছে এই হাসপাতালে। ৭০টিরও বেশি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। শুধু যন্ত্র লাগালেই তো হবে না, যন্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণও থাকা প্রয়োজন। সেটা কী আছে? হাসপাতালের সুপার শ্যামলকুমার চক্রবর্তী জানান, একাধিকবার এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থেকে চিকিৎসক বা নার্সদেরও দেওয়া হয়েছে সেই প্রশিক্ষণ। হাসপাতাল চত্বরে রীতিমতো হাতে-কলমে সে সব শেখানো হয়েছে দমকলের কর্মী এবং অফিসারদের উপস্থিতিতে।
প্রশিক্ষণ যে কাজে লেগেছে, তার প্রমাণও মিলেছে ইতিমধ্যেই। চলতি বছরে পুজোর আগে দু’বার আগুন লেগেছিল এই হাসপাতালে। তার মধ্যে এক বার রান্নাঘরে। দমকল আসার আগেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হাসপাতালের কর্মীরাই সেই আগুন রুখে দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানছেন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ না থাকলে ওই আগুন থেকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটার আশঙ্কা ছিল।
আপৎকালীন দরজা এবং সিঁড়ি।
হাসপাতাল ঘুরেও দেখা গেল, অতীতের চেহারা বদলেছে অনেকটাই। জরুরি বিভাগ থেকে অন্তর্বিভাগসব জায়গাতেই চোখে পড়েছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের উপস্থিতি। প্রতিটি যন্ত্রের পাশে অবধারিত ভাবে ঝোলানো রয়েছে একটি বোর্ড। তাতে রয়েছে দমকলের ফোন নম্বর। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “অগ্নিসুরক্ষায় এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।” ফার্মাসি বিভাগের এক কর্মী বলেন, “আগুনের মোকাবিলা করার যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাতে অনেক উপকার হবে।” তবে এ সব সত্ত্বেও আগুন মোকাবিলার পুরোপুরি বন্দোবস্তে এখনও ঘাটতি রয়েছে। মূল ভবন থেকে কিছুটা দূরে যেখানে চর্ম বিভাগের বহির্বিভাগ রয়েছে। রয়েছে বার্ড ফ্লু বিভাগ সেখানে ওই ধরনের যন্ত্র চোখে পড়ল না। গোটা হাসপাতাল চত্বরে কোনও জলাধার নেই।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, জলাধার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সেই বাবদ টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। ওই জলাধারে বৃষ্টির জল ধরা থাকবে। প্রয়োজনে আগুন নেভানোর কাজে তা ব্যবহার করা যাবে। শ্যামলবাবু বলেন, “অগ্নিসুরক্ষায় অনেকটাই কাজ হয়েছে। যে কাজগুলি বাকি আছে, সেগুলি দ্রুত শেষ করাই এখন আমাদের লক্ষ্য।”
আমরির অগ্নিকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়েছে ইমামবাড়া। অন্য হাসপাতালগুলির ঘুম ভাঙবে কবে?
--নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.