সেতুর কাজ থমকে সাড়ে তিন বছর, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী
ঙ্গলমহলের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ঢালছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কিন্তু সাড়ে ছ’বছরেও শেষ হল না রানিবাঁধের কেচোন্দাঘাটের সেতু তৈরির কাজ।
বরাদ্দ করা টাকার তুলনায় সেতু তৈরির খরচ বেশি হওয়ার অজুহাত খাড়া করে ঠিকা সংস্থা সাড়ে তিন বছর আগেই কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সমস্যা মিটিয়ে ফের ওই সেতু তৈরির কাজ শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। প্রশাসনের এই অনীহায় ক্ষুব্ধ দক্ষিণ বাঁকুড়ার মানুষ। অবিলম্বে তাঁরা ওই সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছেন।
বর্ষায় ফুলে ওঠা কংসাবতী নদীর জল কেচোন্দাঘাটের নিচু কজওয়ের উপর দিয়ে বইতে থাকে। সেই সময় ওই কজওয়ের উপর দিয়ে যাতায়াত করে কার সাধ্য! বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকে। দু’পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে খাতড়া, রানিবাঁধ ও রাইপুর ব্লকের প্রায় ৬০টি গ্রামের বাসিন্দারা নদী পার হতে না পেরে সমস্যায় পড়েন। সেই সমস্যা দূর করার জন্যই এই সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০০৫ সালে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কংসাবতী নদীর উপর, খাতড়া-রানিবাঁধ রাস্তায় কেচোন্দাঘাটে নিচু কজওয়ের পাশেই এই উঁচু সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২৭৫ মিটার দীর্ঘ ও ৩৪ ফুট চওড়া এই সেতু নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য পূর্ত দফতর (সড়ক)। ২০০৬ সালের ১ মার্চ বিধানসভা ভোটের আগে সেতুর শিলান্যাস করেন তৎকালীন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী তথা রাইপুরের বর্তমান সিপিএম বিধায়ক উপেন কিস্কু। শিলান্যাসের সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দু’বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হবে। তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্য পূরণ হয়নি। প্রথম থেকেই অত্যন্ত ঢিমেতালে কাজ চলছিল। ১৫টি পিলার তৈরির পরে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেয় সেতু নির্মাণের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থা।
অসম্পূর্ণ স্তম্ভগুলি প্রকল্প থমকে থাকারই ইঙ্গিত বহন করছে। —নিজস্ব চিত্র।
কেন বন্ধ হল কাজ?
রাজ্য পূর্ত দফতরের (সড়ক) বাঁকুড়া ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌগত সরকার বলেন, “ওই সেতু নির্মাণের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, সেই টাকায় কাজ শেষ করতে অস্বীকার করে নির্মাণকারী ঠিকা সংস্থাটি।” উপেনবাবুর স্বীকারোক্তি, “প্রথম থেকেই ঠিকা সংস্থাটি কাজে গড়িমসি করছিল। সেতুর কাজ অসমাপ্ত রেখেই তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। এ জন্য কাজ থমকে গিয়েছে। এ জন্য আমাদেরও ব্যর্থতা রয়েছে।” ওই ঠিকা সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, সেতুর টেন্ডারের সময় রড, সিমেন্ট-সহ কাঁচামালের যা দাম ছিল, পরে সে সবের দাম অনেক বেড়ে যায়। বরাদ্দ করা টাকায় আমাদের পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কাজ ছেড়ে দিই।” সৌগতবাবু জানান, মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ওই সংস্থার কাছ থেকে ৩১ লক্ষ টাকা জরিমানা বাবদ কেটে নেওয়া হয়। পূর্ত দফতরের আশ্বাস, কাজটি ফের শুরু করার জন্য গত জানুয়ারি মাসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বছর পার হতে চললেও, তার অনুমোদন মেলেনি।
ফলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমেনি। রানিবাঁধের দেউলি-শুক্লা হাইস্কুলের শিক্ষক সম্পদ খাঁড়াৎ, বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “বর্ষাকালে কেচোন্দাঘাটের কজওয়ে ডুবে থাকার সময় অম্বিকানগর হয়ে ঘুরপথে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। সেতুর কাজ শুরু হতে দেখে ভেবেছিলাম, সমস্যা মিটবে। কিন্তু তা আর হল কই?”
রানিবাঁধের রামপদ সর্দার, অতীন বেসরা, রাইপুরের রাইমণি সোরেনদের আক্ষেপ, “একের পর এক নির্বাচন পেরিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের সরকারও বদলে গেল। কিন্তু ওই সেতুর দাবি আজও মিটল না।” তাঁদের ক্ষোভ, প্রশাসনের কর্তা থেকে রাজনৈতিক নেতারা জঙ্গলমহলের উন্নয়নের ভূরিভূরি কথা আউড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ওই অসমাপ্ত সেতুই বুঝিয়ে দেয়, ওঁদের কথার সারবত্তা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.