ট্রাক্টর বোঝাই মাটি ক্রমান্বয়ে পড়ে চলেছে। রাতারাতি বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে পুকুর। ছবিটা নতুন নয়। নতুন এটাই, এ ব্যাপারে অভিযুক্ত খোদ পুরসভা।
বামফ্রন্টের দখলে থাকা জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার বিরুদ্ধে পুকুর বোজানোর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। শীতের রাতে পাড়া নিঝুম হয়ে গেলেই করে বাইরে থেকে মাটি নিয়ে এসে গত সাত দিন ধরে পুকুর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একজোট হয়ে গত শুক্রবার রাতে মাটি ফেলার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
কে ভরাট করছিল পুকুর? পুরসভার দাবি, তারা ওই জায়গায় ওয়াটার পার্ক গড়ে তোলার কথা ভাবছে। তাহলে মাটি পেলার প্রয়োজন হল কেন? পুরসভার সাফাই, পাড় বাঁধানোর জন্যই মাটি ফেলা হচ্ছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মলয় রায়ের অভিযোগ, “রাতের অন্ধকারে ট্রাক্টরে করে বাইরে থেকে মাটি এনে পুকুর বোজানোর কাজে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। তা মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা একজোট হয়ে ওই কাজে বাধা দেন। তার পর থেকেই পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ রয়েছে।” |
নির্বিচারে পুকুর ভরাট করছে পুরসভা। —নিজস্ব চিত্র। |
পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়াগঞ্জ মেন রোড বরাবর রাস্তার গা-লাগোয়া মাঠ প্রায় ১৯ বিঘা জায়গা জুড়ে। আগে সেখানেই ছিল একটি পোস্ট অফিস। পরে তা অন্যত্র উঠে যাওয়ায় জমির লাগোয়া প্রায় ২ বিঘা জায়গা জুড়ে যে পুকুর রয়েছে, তা-ই মাটি ফেলে বুজিয়ে পেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৃবাসিন্দাদের এমনই দাবি। স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আইনজীবী প্রিয়নাথ রায় বলেন, “ওই সম্পত্তি আজিমগঞ্জ রাজবাড়ির জমিদার বিজয় সিংহ দুধোরিয়াদের। কলকাতার আজিমগঞ্জ হাউসে তাঁদের বর্তমান বংশধরেরা থাকেন। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ওই জমি এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়।”
আর, পুরপ্রধান সিপিএমের শঙ্কর মণ্ডলের দাবি, “রাজা বিজয় সিং-এর নাতি গৌতম কুমার দুধোরিয়ার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় পুরসভা ওই পুকুর কিনেছে। তার আগে গৌতমবাবু মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির জন্য ১৩ কাঠা জমি দান করে ছিলেন ওই জায়গায় মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে হকারদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। এ বার ওই পুকুরের জায়গায় ওয়াটার পার্ক গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়েছে।” তিনি জানান, ওই ওয়াটার পার্কে সুইমিং পুল গড়ে তোলা হবে। তাঁর দাবি, তিন বছর আগে পুর বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু ওয়াটার পার্ক তৈরি করতে মাটি ফেলে পুকুর বোজানোর প্রয়োজন হচ্ছে কেন? শঙ্করবাবু বলেন, “ওই এলাকায় যে জলনিকাশি রয়েছে, পুকুর তার চেয়ে চার ফুট নীচে। সুইমিং পুলের নিকাশি বাবস্থা সাজাতে ওই জায়গায় মাটি ফেলা হচ্ছে।” প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান কাউন্সিলর মনোজ সরকার বলেন, “সুইমিং পুলের নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও মাটি দিয়ে পুকুর বোজানোর মধ্যে যে ফারাক তা মানুষ বোঝেন। পুরপ্রধানের মিথ্যাচারিতা চলবে না। মানুষের স্বার্থে উন্নয়ন করছি বলে পুরসভার সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।” |