ভাইয়ের ছবি সরিয়ে দিল দিদির পুরসভা
দিদির খাসতালুকে ভাইয়ের ছবিতে কোপ।
দক্ষিণ কলকাতার হরিশ মুখার্জি রোডের দু’পাশে ভাইয়ের বড় বড় ছবি দিয়ে ফ্লেক্স-ব্যানার লাগিয়েছিল স্থানীয় একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন। সোমবার দুপুরে সেই ফ্লেক্স সরিয়ে দিল পুরসভা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামতে হল দিদির পুলিশকে।
আর দিদির পুরসভা-পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হলেন ভাইয়ের অনুগামীরা। সব মিলিয়ে সোমবার দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য টান টান উত্তেজনা তৈরি হল কালীঘাটের অদূরে হরিশ মুখার্জি রোডে।
আপাতদৃষ্টিতে উত্তেজনা কমেছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ফুঁসছেন ভাইয়ের অনুগামীরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, “কার অঙ্গুলি হেলনে আমাদের সুখ দুঃখের সাথী কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সমেত ব্যানার খোলার প্রয়োজন হল?” কার্তিক হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই। মুখ্যমন্ত্রীর ছয় ভাইয়ের মধ্যে কার্তিক চতুর্থ। কার্তিকের ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুরসভা ওই ফ্লেক্স সরিয়েছে। কারণ, কেউ জানুক না জানুক, আমরা জানি, দিদি দিল্লি থেকে ফোনে কার্তিকদাকে খুব বকাবকি করেছেন।” কেন বকাবকি করেছেন দিদি? ঘটনার পরে কার্তিক মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠদের কথায়, “কার্তিকদা দিদিকে ভাঙিয়ে চলেন না। তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। জোর করে পোস্টার-ফ্লেক্স সরিয়ে কার্তিকদাকে আমাদের মন থেকে মুছে দেওয়া যাবে না।”
হরিশ মুখার্জি রোডের পাশে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সমেত ব্যানার। —নিজস্ব চিত্র
কালীঘাট, ভবানীপুরের বিভিন্ন ক্লাব, বিশেষত সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে কার্তিক যুক্ত আছেন। এমনই একটি সংগঠন ‘সৃষ্টি।’ ওই সংগঠনের পক্ষ থেকেই কার্তিকের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স লাগানো হয়েছিল। ফ্লেক্সে লেখা হয়েছিল ‘আমাদের সুখ-দুঃখের সাথী কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ’। পুরসভার এক সূত্রে জানা গিয়েছে, যাতায়তের পথে বড় বড় ওই ফ্লেক্স দেখে মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত হন। তার পরেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবিলম্বে ওই ফ্লেক্সগুলি সরাতে নির্দেশ দেন। এ দিন পুরকর্মীরা ফ্লেক্স সরাতে গেলে বাধা দেয় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। হরিশ মুখার্জি রোড ও মুক্তদল ক্লাবের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে স্থানীয় ক্লাবের কর্তা বিপ্লব দাশগুপ্ত বললেন, “এক জন মানবদরদী ছেলে কার্তিক। উনি তো ওঁর ছবি দিয়ে ফ্লেক্স বানাতে বলেননি! এমন এক জন মানুষ কেন আড়ালে থাকবেন? আমরাই ওঁর প্রচার করছি। এর মধ্যে অন্যায়টা কী হয়েছে?” তাঁরই মতো হরিশ পার্ক ব্যায়াম সমিতির স্বরূপ বসু, সমাজসেবী সংগঠনের তপন মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই অভিযোগ করেন, কোনও রকম নোটিস না দিয়েই পুরসভা এসে বেছে বেছে কার্তিকের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স খুলেছে। তাঁরা প্রতিবাদ জানালে সেখানে বিরাট পুলিস বাহিনী নিয়ে আসা হয়। তপনবাবু জানান, এলাকার বাসিন্দা মহিলাদের অনেকেই প্রতিবাদে পথ অবরোধ করতে গিয়েছিলেন। কার্তিকই তাঁদের নিরস্ত করেন।
মেয়র অবশ্য বলেন,“এটা রুটিন ব্যাপার। কোনও সংগঠনের কর্মসূচি হয়ে গেলে যেমন ব্যানার, ফ্লেক্স খুলে দেওয়া হয়, তেমনই করা হয়েছে।” কিন্তু ওই সংগঠনের সম্পাদক অরূপ দাস ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ওই ফ্লেক্স তো বিশেষ কোনও কর্মসূচির জন্য ছিল না। আমরা কোনও মানুষের অসুবিধা না করে কার্তিকদার ছবি দিয়ে ফ্লেক্স লাগিয়ে ছিলাম। যে ভাবে এ দিন ওই ফ্লেক্স খোলা হয়েছে, তাতে আমাদের প্রতিটি পল্লিবাসী মানসিক ভাবে আহত হয়েছেন।”
অরূপবাবু কালীঘাট থানার অফিসার ইন চার্জ মহাদেব চক্রবর্তীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এই ঘটনা কে ঘটিয়েছে এবং তার কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা এই দাবির প্রতিলিপি মেয়রকেও দিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ফ্লেক্স খোলার সময়ে কয়েক জন বাসিন্দা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁদের বোঝানোর পরে সমস্যা মিটে গিয়েছে।
সমস্যা কিন্তু মেটেনি। তপনবাবুর মতো অনেকেই মনে করছেন, “কার্তিকদা যে মানুষের উপকার করেন, তা বন্ধ করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। বকলমে এ সব করা হচ্ছে দিদিকে দুর্বল করার জন্য।” কার্তিক-ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, ইদানীং দিদি-ভাইয়ের দূরত্ব বেড়েছে।
আবার এলাকার তৃণমূল সমর্থকদের একাংশের ধারণা, কার্তিক ক্লাব, সমাজসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এলাকায় কার্যত তাঁর রাজনৈতিক জমি তৈরির কাজে লেগেছেন। এটা দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না। কার্তিক অবশ্য এ নিয়ে রা কাড়েননি। এ দিনের ঘটনা নিয়ে দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “কী ঘটনা ঘটেছে, আমি জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.