ছাত্র স্কুলে পেন্সিল নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলওই ‘অপরাধে’ ডাস্টার দিয়ে শিক্ষক প্রহার করেন বলে অভিযোগ উঠল বহরমপুরের একটি বিদ্যালয়ে।
শুক্রবার দুপুরে বাঁ হাতের কনুইয়ে ডাস্টারের পিছন দিকের কাঠের অংশ দিয়ে তিন বার ‘জোরে’ আঘাত করার ফলে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্র সৌম্যজিৎ ঘোষের হাতের হাড় সরে যায়। অভিযোগ, ঘটনার পরে ক্লাসের মধ্যেই প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে ওই ছাত্র। সহপাঠীরা চোখে-মুখে জল দিয়ে তার শুশ্রূষা করে। ওই শিক্ষক অবশ্য সবটাই ‘নাটক’ বলে এড়িয়ে যান। পরে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে ব্যথায় কাতর হয়ে পড়লে ওই ছাত্রকে বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই এক্স-রে কনুইয়ের হাড় সরে যাওয়া ধরে পড়ে। তার হাতে প্লাস্টার করানো হয়। চিকিৎসক স্বপন রায় বলেন, “কনুইয়ের জয়েন্ট-এর হাড় সরে গিয়েছে। সাত দিন পরে প্লাস্টার খুলে দেখা হবে। যদি হাড় জোড়া না লাগে তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হবে।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোশ্যাল সায়েন্স পড়ানোর জন্য সাত-আট মাস আগে চুক্তির ভিত্তিতে ওই শিক্ষক ওই স্কুলে যোগ দেন। ঘটনার দিন টিফিনের পরে ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নিতে যান ওই শিক্ষক। সেই সময়ে পেন্সিল দিয়ে পাঠ্যবইয়ে ‘আন্ডার লাইন’ করার কথা বলেন। সৌম্যজিৎ জানায়, “আমি ওই দিন স্কুলে পেন্সিল নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম। স্যারকে সেই কথা বলতেই ‘আমার সঙ্গে ইয়ার্কি হচ্ছে’ বলে ডাস্টারের কাঠের অংশ দিয়ে আমার বাঁ হাতের কনুইয়ে মারতে শুরু করেন। কনুইয়ে তিন বার জোরে আঘাত করার ফলে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আমার মাথা ঘুরতে থাকে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। তখন আমার বন্ধুরা চোখে-মুখে জল দেয়। পরে দুপুর দুটোয় স্কুল ছুটি হলে বাড়ি ফিরে আসি।”
কিন্তু বিষয়টি জানা গেল কী ভাবে?
মা শম্পা ঘোষ বলেন, “সৌম্যজিৎ আমাদের একমাত্র সন্তান। স্যারের মারে হাত ভেঙেছে জানার পরে আমরা যদি কিছু করি, তাই ছেলে বাড়িতে এসে স্কুলে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে বলে জানায়। ওই কথা শুনে শুক্রবার দুপুরেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এক্সরে করানো হয়। হাড় সরে যাওয়ার কথা জানার পরে সেদিনই প্লাস্টার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। কিন্তু পড়ে গেলে তো জামা-প্যান্ট নষ্ট হবে। পরিস্কার জামা-প্যান্ট দেখে রাতে সন্দেহ হয়। তখন ধমক দিতেই ছেলে সত্যি কথা বলে।”
এর পরে শনিবার ওই স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার জন্য শম্পাদেবী স্কুলে যান। শম্পাদেবীর কথায়, “ছাত্র ভুল করলে শিক্ষক একটু-আধটু মারধর করতেই পারেন। কিন্তু এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।” শম্পাদেবী বলেন, “তবে স্কুলে গেলে ওই শিক্ষক আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।”
ওই শিক্ষক অবশ্য ‘পিঠে মারতে গিয়ে কনুইয়ে লেগে গিয়েছে’ বলে শম্পাদেবীর কাছে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেক্ষেত্রে শম্পাদেবীর প্রশ্ন, “তিন বারই ডাস্টারের কাঠের অংশ দিয়ে পিঠে মারার সময়ে ভুল করে কনুইয়ে লেগে যায় কী ভাবে?”
স্কুলের অধ্যক্ষ রাজগুরু সিংহ অবশ্য বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও ছাত্র প্রহারের ঘটনাটি আমার স্কুলে ঘটেছে। রবিবার ওই ছাত্রের অভিভাবক স্কুলে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন।” ওই স্কুলের চেয়ারম্যান মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীবকুমার। অধ্যক্ষ বলেন, “গোটা বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে, তা জেলাশাসক সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ওই ছাত্রের বাবা পেশায় রেলকর্মী গাঙ্গুরাম ঘোষ বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন শিক্ষার পরিবেশ থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়ে আক্রান্ত হয়ে ফিরবে, এটা কোনও অভিভাবক চায় না। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা সেই দাবি জানিয়েছি।” |