যিনি এত দিন ছিলেন ব্রাত্য। তিনিই আজ ভরসা।
সিনিয়র-ছাঁটাই কর্মসূচিতে রণদেব বসু, সৌরাশিস লাহিড়িদের সঙ্গে বাদ পড়েছিলেন তিনিও। কিন্তু বাংলার রঞ্জি অভিযানের শেষ লগ্নে দেখা যাচ্ছে, তিনি আজও টিমের অন্যতম অন্যতম সেরা লগ্নি।
তিনিঅরিন্দম দাস। মুম্বই ম্যাচে ৯৮ করে ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু’-র পর এ বার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সবুজ পিচে ৭৩। বাংলা ব্যাটিংয়ের শোকের মিছিলে একমাত্র জীবনের সন্ধান।
বাংলার ১১৬ থেকে অরিন্দমের ৭৩ সরিয়ে নিলেই কারণটা বোঝা যাবে। দু’দিন মিলিয়ে থাকলেন ২৮৩ মিনিট। খেললেন ১৭৮ বল। বুঝিয়ে দিলেন, কেন ময়দান তাঁকে ডাকে ‘চিনের প্রাচীর’ বলে। এই একজনের কাছেই তো তরুণ হায়দরাবাদ পেস ব্যাটারির অনভিজ্ঞতা ধরা পড়ল। একবার নয়, বারবার। আর তাঁকেই কি না পঁয়ত্রিশ জনের প্রাথমিক দল থেকে বাদ দিয়ে দেন নির্বাচকরা!
নির্বাচকদের কঠিন চ্যালেঞ্জের উত্তরও অরিন্দম সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। অফিসে যাওয়ার আগে বাড়িতে এক রাউন্ড ‘শ্যাডো’। ফিরে রাতে আর এক রাউন্ড। অভিমানে সিএবি-র ধারেকাছে যাননি বহু দিন। বরং ঠিকানা ছিল মানবেন্দ্র ঘোষের কোচিং ক্লাস। নেটে প্র্যাক্টিস সেরে সেই প্র্যাক্টিসের ভিডিও নিয়ে বসতেন। সৌরাষ্ট্র ম্যাচ খেলে ফেরার পর বাড়ি নয়, ছুটেছিলেন কোচের কাছে। হাতে ম্যাচের সিডি। নিজের ব্যাটিংয়ের ফুটেজ। জানতে হবে, কী কী ভুল থেকে গেল। |
রবিবারের ইডেনের লড়াইটাও কম কঠিন ছিল না। অরিন্দম কতটা সংযমী ছিলেন বোঝা যায় বাউন্ডারির সংখ্যা দেখে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে কাটিয়ে এসেছে মাত্র সাতটা বাউন্ডারি আর একটা ছয়। ইরেশ সাক্সেনার কথাও বলতে হবে। এগারো নম্বরে নেমে ইরেশ করেছেন এক রান, কিন্তু ছিলেন ৮৫ মিনিট। ইরেশের লড়াইটা না থাকলে তো অরিন্দমের একক যুদ্ধ আজ মর্যাদা পায় না।
আর বাংলা পারবে তার মর্যাদা দিতে? খুব স্বস্তিতে তো নেই টিম। লিড মাত্র এক রানের, দিনের শেষে হায়দরাবাদ ১৭২-৭। অথচ শুরুটা হয়েছিল প্রথম ইনিংসের অ্যাকশন রিপ্লে দিয়েই। এক ওভারে সামি আহমেদের দুটো উইকেট, ঘণ্টা আড়াইয়ের মধ্যে হায়দরাবাদ ১১৪-৬। কিন্তু সেখান থেকে টেনে দিলেন আশিস রেড্ডি (৪২)। যা পরিস্থিতি, ম্যাচ এস্পার নইলে ওস্পার। হাতে পড়ে এখনও দু’দিন। আর উইকেট যতই সহজ হয়ে আসুক, দ্বিতীয় ইনিংসের টার্গেট যদি হয় আড়াইশোর কাছাকাছি, পারবে বাংলা?
অরিন্দম শুনে উড়িয়ে দিলেন। “ধুর, আছে তো পড়ে টেল এন্ডার। দু’শোর মধ্যে শেষ করে দেব।” কিন্তু বাংলার ব্যাটসম্যান বলতে এখন তো হাতে গোনা তিন। লক্ষ্মীরতন শুক্ল। ঋদ্ধিমান সাহা। আর অরিন্দম নিজে। বল ছাড়তে জানেন, নতুন বলের বিরুদ্ধে তাঁর টেকনিক সবচেয়ে ভাল। টার্গেট যা-ই হোক শেষ পর্যন্ত, হায়দরাবাদ পেসারদের বিরুদ্ধে ‘দেওয়াল’-টা তাঁকেই তুলতে হবে প্রথম। পারবেন?
‘ডনে’র ছোট্ট উত্তর, “প্রাণপণ চেষ্টা করব।”
|