|
|
|
|
শেষ দিনের পূর্বাভাসে উত্তাপ থাকছে |
রাজীব ঘোষ • নাগপুর |
বল করছিলেন অশ্বিন। সেই সময় জোনাথন ট্রট নন স্ট্রাইকার্স এন্ড ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে গেলেন। অশ্বিনও থেমে গেলেন। ইচ্ছে করলেই ট্রটকে অনায়াসে রান আউট করে দিতে পারতেন। তা না করে হুঁশিয়ারি দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানকে। ট্রটও পালটা কিছু বললেন। কট বিহাইন্ডের আবেদন নিয়ে তার আগেও ট্রটের সঙ্গে ইশান্ত, ধোনি ও কোহলির একচোট হয়ে গিয়েছে। দু’বারই আম্পায়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন বটে, কিন্তু তাতে জামথা স্টেডিয়ামের সবুজ, প্রাকৃতিক গালিচায় উত্তাপ কমেনি। সিরিজ এখনও হারেনি ভারত। তাতেই এই উত্তাপ। সোমবার, শেষ দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। ইংল্যান্ড সিরিজের আবহাওয়ার পূর্বাভাস সে রকমই বলছে।
রবিবারের ছুটিতে জামথার গ্যালারিতে আসা মানুষের চোখের সামনে যখন টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে খারাপ বিজ্ঞাপন চলছে, তখন এই ‘চিট-চ্যাট’গুলোই গরম মশলার কাজ করছিল। জাডেজার হাত থেকে স্লিপ করে বেরিয়ে যাওয়া নো বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে আইনমাফিক অথচ অনৈতিক কাজ করেছেন ট্রট। তখন থেকেই ফুঁসছেন ভারতীয়রা। এই ঘটনা তাতে আরও ইন্ধন জোগালো। দিনের শেষে যিনি ৬৬ রানে অপরাজিত থেকে ভারতের যাত্রা ভঙ্গ করতে চলেছেন, সেই ট্রটকে অশ্বিন রান আউট করে দিলে তা বেআইনি হত না। কিন্তু অশ্বিনের স্পোর্টসম্যান স্পিরিটই তাতে বাধা দিল।
এতে না হয় অশ্বিন জিতলেন, ভারত তো আর টেস্ট জয়ের কাছাকাছি পৌঁছতে পারল না। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো নরমপন্থী ক্রিকেটারও যেখানে বলছেন, “ওই সময় অশ্বিন ট্রটকে আউট করে দিলেই পারত। তাতে বেআইনি কিছু হত না। বরং ভারত কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকত”, তখন অশ্বিন কী মনে করে সুযোগটা ছেড়ে দিলেন, কে জানে। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে যখন এক ব্রিটিশ জিজ্ঞাসা করলেন, আবার এমন সুযোগ পেলে কী করবেন? তখন ভারতীয় দলের নয়া তারকা স্পিনার আরও আক্রমণাত্মক, “ওভাবে কেন আউট করব? ওকে এমনিতেই আউট করে দিতে পারব।” এই তেজ যদি মাঠে দেখাতেন। |
|
বল ছাড়তে গিয়ে বোল্ড পিটারসেন। দিনের শেষে অবশ্য জাডেজাদের এই উচ্ছ্বাস ফিকে হয়ে গেল। ছবি: পিটিআই |
সোমবার প্রথম সেশনে সাত জন ইংরেজ ব্যাটসম্যানকে ফেরানো এবং শেষ চার ঘন্টায় দরকারি রান তুলে নেওয়ার মতো কঠিন কাজটা না করতে পারলে ভারতের পক্ষে এই টেস্ট জিতে সিরিজ বাঁচানো সম্ভব নয়। পারবেন? অশ্বিন বললেন, “একটা সেশনে ৬-৭টা উইকেট তো আগেও আমরা নিয়েছি। বেশি আশাবাদী হওয়ার চেষ্টা করছি না, তবে কাল সকালেই যদি ট্রট আর বেলকে ফিরিয়ে দিতে পারি, তা হলে লড়াই হবে।” গোটা সিরিজ জুড়ে এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই না শেষ দিনও ডোবায়।
সকালে ম্যাচ শুরুর আগে নেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার বিদ্যাটাই দলের ব্যাটসম্যানদের ঝালিয়ে দিলেন ইংরেজ ব্যাটিং কোচ গ্রাহাম গুচ। খেলোয়াড় জীবনে এমন স্লথ ইনিংস যে তিনি কত বার খেলেছেন, তার কোনও হিসেব নেই বোধহয়। ১৯৮১-তে অ্যাসেজ সিরিজের এক টেস্টে প্রায় দু’ঘন্টা উইকেটে থেকে ২১ রান করেছিলেন। করাচিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছ’ঘন্টারও ওপর উইকেটে থেকে সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিনি, ৯৩-এ থেমে যান। সাত ঘন্টার ওপর ব্যাট করে ৮৪ রান করার রেকর্ডও আছে তাঁর খাতায়। সেই গুচ তাঁর দলের ছেলেদের উইকেটে পড়ে থাকতে হয় কী করে, তা শেখাবেন না? ঘন্টাখানেক অনুশীলন করে নেন বেল, ট্রট, কেপি, প্রায়ররা।
আসলে দিনের প্রথম ঘণ্টা মাত্র ২৯ রান করে যে নষ্ট করবেন অশ্বিনরা, তা ভাবতেই পারেননি ইংরেজরা। ভেবেছিলেন শুরু থেকেই ব্যাট হাতে নেমে পড়তে হবে তাঁদের। জেমস অ্যান্ডারসন বলছিলেন, “সত্যিই আমরা ভাবতে পারিনি ওরা ব্যাট করবে। যখন নামল, তখন ভেবেছিলাম অশ্বিনও আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখাবে।” অশ্বিনের জবাব, র্“যেখােনে আট উইকেট পড়ে গিয়েছে, এই উইকেট, নরম বল, সেখানে অ্যান্ডারসনকে তুলে তুলে মারব? লিডটা কমাতে চেয়েছিলাম বলেই ব্যাট করতে নামি।”
ভারতের স্বাধীনতা লাভের এগারো বছর পর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের চতুর্থ দিনে সারা দিনে ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা ১০৬ রান তুলেছিলেন। সেটাই ইংরেজদের এক দিনে তোলা সবচেয়ে কম রানের নজির। কুকদের বোধহয় ইচ্ছা ছিল, সেই নজির ভাঙার। কুকের যখন ৭১ বল খেলা হয়ে গিয়েছে, তখন তাঁর নামের পাশে ৩! ৫০ বছর আগে তাঁর দেশেরই জন মারে এসসিজি-তে ১০০ বলে তিন রান করেছিলেন। সেই গল্প শুনে কুক এ দিন মাঠে নেমেছিলেন কি না কে জানে। অশ্বিনের বলে কট বিহাইন্ডের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার (আগের বারের মতোই) হয়ে যখন ফিরে গেলেন , তখন তাঁর ৯৩ বলে ১৩। চায়ের পর নেমে স্লিপে সহবাগকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া পিটারসেন যখন জাডেজার বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হলেন তখন ইংল্যান্ড ৯৮ রানে এগিয়ে। দিনের শেষে সেই লিড ১৬৫ রানের। হাতে সাত-সতটা উইকেট। ভারতের কাজ রীতিমতো কঠিন হয়ে গিয়েছে।
এখন শুধু অঘটনের আশা!
|
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩৩০
ভারত প্রথম ইনিংস (আগের দিন ২৯৭-৮) |
অশ্বিন নঃআঃ ২৯
প্রজ্ঞান বো পানেসর ৩
ইশান্ত নঃআঃ ২
অতিরিক্ত ১২
মোট ৩২৬-৯ ডিঃ।
পতন: ১, ৫৯, ৬৪, ৭১, ২৬৯, ২৮৮, ২৯৫, ২৯৭, ৩১৭।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৩২-৫-৮১-৪, ব্রেসনান ২৬-৫-৬৯-০, পানেসর ৫২-১৫-৮১-১,
সোয়ান ৩১-১০-৭৬-৩, ট্রট ১-০-২-০, রুট ১-০-৫-০। |
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস |
কুক ক ধোনি বো অশ্বিন ১৩
কম্পটন এলবিডব্লিউ প্রজ্ঞান ৩৪
ট্রট ব্যাটিং ৬৬
পিটারসেন বো জাডেজা ৬
বেল ব্যাটিং ২৪
অতিরিক্ত ১৮
মোট ১৬১-৩।
পতন: ৪৮, ৮১, ৯৪।
বোলিং: ইশান্ত ১২-৩-২৭-০, প্রজ্ঞান ২৩-১০-৩৯-১, অশ্বিন ১৮-৯-৩৪-১,
চাওলা ১০-২-২০-০, জাডেজা ১৬-৯-২৭-১। |
|
|
|
|
|
|
|