কলকাতা ফুটবলে রবিবার মানেই কি গণ্ডগোল!
গত রবিবার বাঙালির চিরকালীন ডার্বি ভেস্তে গিয়েছিল গ্যালারি থেকে ছোড়া ইটে। ঝরেছিল রহিম নবির রক্ত।
এক সপ্তাহ পরের আর এক রবিবার। ময়দানের ‘নব্য ডাবির্’তেও ঝরল রক্ত। এ বার বেলো রজ্জাকের। গ্যালারির তাণ্ডবে নয়। এ দিন মাঠের ভিতরেই মারামারি। ম্যাচের শেষে ঘটনা ঘটায় তা সামাল দিয়েছেন দু’দলের বাকি ফুটবলার আর পুলিশ। ম্যাচের পর প্রয়াগ ইউনাইটেড কর্তা নবাব ভট্টাচার্য অবশ্য বললেন, “গ্যালারি থেকে ইটও পড়েছে, যাতে আমাদের আসিফ আহত হয়েছে।” ইস্টবেঙ্গল এবং পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন ডার্বি ম্যাচে দল তুলে নিয়ে শাস্তির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মোহনবাগান কর্তারা। অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলে দিলেন, “ওরা বলেছিল লাল-হলুদ জার্সি পরে যুবভারতীতে বাইরের লোক ঢুকে গণ্ডগোল পাকাবে। দেখা গেল মাঠের মধ্যেই লাল-হলুদ জার্সি পরে থাকা ফুটবালররাই জার্সি খুলে বিপক্ষের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। আর রেফারি দাঁড়িয়ে তা দেখছে।”
ঘটনাটিকে অবশ্য কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। “দুই নাইজিরিয়ান ফুটবলারের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। ওরা নিজেরাই মিটিয়ে নেবে,”বলে দিলেন তিনি। জার্সি খুলে মারমুখী উগার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেননি তাঁর দলের কোচ ট্রেভর মর্গ্যানও। বলে দিলেন, “আমি তখন ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিলাম। কী ঘটেছে জানি না। কারও কাছে কোনও রিপোর্টও চাওয়ার ইচ্ছে নেই।” |
কেরলের রেফারি সন্তোষ কুমার কোনও কার্ড না দেখালেও ম্যাচ কমিশনার গোয়ার অ্যান্টনি ডি’কোস্টা ফেডারেশনের কাছে এই গণ্ডগোলের রিপোর্ট জমা দিচ্ছেন। ফলে ওপারা এবং বেলো, দু’জনই শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। তাঁদের ম্যাচ-নির্বাসন বা জরিমানা হতে পারে। গত মরসুমেও আই লিগের ডার্বি ম্যাচে রেফারির সঙ্গে ঝামেলা করায় ওপারাকে দু’ম্যাচ নির্বাসিত করেছিল ফেডারেশন।
গণ্ডগোলের সূত্রপাত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে। ইস্টবেঙ্গল কর্নার পাওয়ার পর প্রয়াগ বক্সে উঠে আসেন ওপারা। তখনই তিনি প্রয়াগের বেলোকে কনুই দিয়ে মেরে হলুদ কার্ড দেখেন। ওপারার কনুইয়ের আঘাতে বেলোর ঠোঁটের অনেকটাই কেটে যায়। রক্ত ঝরতে থাকে। এর পর ম্যাচ চলার সময় আরও দু’-একবার ঝামেলায় জড়ান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নাইজিরিয়ান স্টপার। তবে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ওপারার সঙ্গে বেলো হাত মেলাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও ক্ষুব্ধ থাকা ওপারা তেড়ে যান বেলোর দিকে তেড়ে যান। এর পরই দুই ফুটবলারের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি শুরু লেগে যায়।
ইস্টবেঙ্গল এবং প্রয়াগের বাকি ফুটবলাররা কোনও ক্রমে উগা আর বেলোকে আলাদা করেন। জার্সি খুলে বেলো গজরাতে গজরাতে ড্রেসিংরুমের পথ ধরলেও শান্ত হননি ওপারা। নিজের জার্সি খুলে বেলোর পেছনে উন্মত্তের মতো তেড়ে যান তিনি। তাঁকে থামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন প্রয়াগের র্যান্টি মার্টিন্স। কিন্তু গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে ওপারার ঘুষি এসে লাগে প্রয়াগের রফিকের মুখে।
ম্যাচ শেষ হওয়ার দু’ঘণ্টা পরেও ওপারার রাগ কমেনি। উত্তেজিত হয়ে বলছিলেন, “হাত মেলাতে এসে বেলো আমাকে প্রচণ্ড গালাগালি করেছে। ওর জন্যই পুরো ঝামেলাটা।” উল্টো দিকে বেলো কিন্তু স্বাভাবিক ছিলেন। নিজেদের ড্রেসিংরুমে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “এটা খেলার অঙ্গ। ম্যাচের উত্তেজনার কারণে এ রকম হতেই পারে।” |