যুবভারতী রণাঙ্গন
র‌্যান্টিদের যাত্রা ভঙ্গ করতে গিয়ে নিজের নাক কাটল ইস্টবেঙ্গল
প্রয়াগ ইউনাইটেড-১(র‌্যান্টি)
ইস্টবেঙ্গল-০
ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের আই লিগ জয়-রথের চাকা যুবভারতীতে বসে যাওয়ার পর দু’জনের মুখ মনে পড়ছিল।
রঘু নন্দী এবং সঞ্জয় সেন।
রঘু তিন দিন আগেই মরসুমে প্রথম বার ইস্টবেঙ্গলকে হারতে বাধ্য করেছিলেন। আর সঞ্জয়যিনি প্রয়াগের কোচ থাকার সময় শেষ তিন ম্যাচে জিততে দেননি ইস্টবেঙ্গলকে।
দু’জনই রবিবার অধীর অপেক্ষা নিয়ে টিভির সামনে বসেছিলেন ময়দানের নব্য ডার্বি দেখতে। এবং ম্যাচ শেষের পর রঘু বলে দিলেন, “আমি যে স্ট্র্যাটেজিতে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিলাম একেবারে তার ফটো কপি করেছে প্রয়াগ। মনে হয় আমাদের ম্যাচটা টিভিতে মন দিয়ে দেখেছিলেন ওদের কোচ।” আর যাঁর জায়গায় এলকো এসেছেন সেই সঞ্জয়ের মন্তব্য, “খুব ভাল খেলেছে প্রয়াগ। আগের ডেম্পো ম্যাচের চেয়ে অনেক ভাল। আর মর্গ্যানের টিম তো দু’বছর ধরে জেতেই না এই ম্যাচে। এটা বলতে পারেন পরম্পরার জয়।”
দুই বঙ্গসন্তান কোচের কথা শুনলে মনে হতেই পারে রবিবারের মর্গ্যান-বধে প্রয়াগের নতুন ডাচ কোচের মগজাস্ত্র ব্যবহারই হয়নি। ধারণাটা একেবারেই ভুল, বরং ব্যাপারটা উলটো। বলা যায়, নিখুঁত অঙ্কে ব্রিটিশ কোচকে রিং-এর বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন এলকো সাটোরি। তাঁর স্ট্র্যাটেজি আরও কাজে লেগে গেল গোলমেশিন র‌্যান্টি মার্টিন্স আর বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্ডেজকে নিয়ে মর্গ্যানের টিম অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে পড়ায়।
আতঙ্কটা কেমন? সেটা বোঝার জন্য ব্রিটিশ কোচের স্ট্র্যাটেজিই যথেষ্ট। র‌্যান্টি যাতে গোলের সুযোগ না পান সে জন্য নিজের দুই ডিফেন্ডার উগা ওপারা আর অর্ণব মণ্ডলকে তাঁর পিছনে লাগিয়ে দিয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ! আর বিশ্বকাপার কার্লোসের জন্য মার্কার করে দেওয়া হয়েছিল মেহতাব হোসেনকে। ফলে হল কী, মার্কার হতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গলের তিনটে অস্ত্রই ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে গিয়েই ডুবলেন মর্গ্যান। ১১ জনের দল আট জন হয়ে গেলে যা হয়। মাঝমাঠের দখলটাও চলে গিয়েছিল লালকমল, কার্লোসদের মুঠোয়। ফুটবল মাঠের স্লোগানই হল, মাঝমাঠ যার, ম্যাচ তাঁর। পরিসংখ্যান বলছে, ইনজুরি টাইম নিয়ে ৯৫ মিনিটের ম্যাচে এলকোর টিমের পক্ষে বল পজেশন ছিল ৬৫: ৩৫।
বাসের্লোনা স্টাইলে পাস-পাস-পাস বনাম ব্রিটিশ লং বল স্ট্র্যাটেজি। ম্যাচের ক্যাচ লাইন হতে পারে এটা। আর প্রয়াগের মাটিতে বল রেখে পাস-বুননের ভগীরথ ছিলেন কোস্তারিকার কার্লোসই। দু’টো পা যেন মাখন-কাটা ছুরি। কী নিখুঁত অ্যান্টিসিপেশন! কী বল কন্ট্রোল! কী অসাধারণ কম্পাস মাপা পাস! তা-ও তো পুরো ফিট নন। এতেই এত! র‌্যান্টির কিছুটা পিছনে ফ্রি ফুটবলার হিসেবে কার্লোসকে খেলালেন প্রয়াগ কোচ। ইস্টবেঙ্গল বক্সের আশেপাশে পেন্ডুালামের মতো দুললেন তিনি। আর বিশ্বকাপারের ‘তাড়াতেই’ কার্যত মাঝমাঠ-ছাড়া হয়ে গেলেন খাবরা-পেন-ইসফাকরা। অন্য ম্যাচে যা করেন দ্বিতীয়ার্ধে সেই লালরিনডিকা নামক ওষুধ ব্যবহার করেও সফল হলেন না মর্গ্যান। তিন দিনের ব্যবধানে কলকাতার দলের কাছেই দু’টো হার। তাই প্রশ্ন উঠেই গেল, কলকাতার নতুন দ্রোনাচার্য কোচের স্ট্র্যাটেজি কি বদলানোর সময় এসে গেল?
প্রয়াগের জেতার গোল নিয়মিত সেট পিস অনুশীলনের সুফল। গোলের জায়গা বেছে নিয়েছিলেন র‌্যান্টি নিজেই। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি লালকমলের কর্নার উড়ে আসতেই জোড়া মার্কার এড়িয়ে ছিটকে বেরিয়ে এলেন তিনি। নিখুঁত হেডে গোল। “আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল ওরা। কিন্তু দশ সেকেন্ড ছাড়া পেলেই যে আমি গোল করতে পারি সেটা প্রমাণ করে দিয়েছি,” চোখে-মুখে অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে বলছিলেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। র‌্যান্টি-কার্লোস যুগলবন্দির দিনে ঝকমক করলেন প্রয়াগের আরও তিনসুব্রত পাল, লালকমল ভৌমিক এবং বেলো রজ্জাক। কোটি টাকার সুব্রতর পারফরম্যান্স নিয়ে ফিসফাস ছিল এলকোর ড্রেসিংরুমে। মননদীপ, রবিন আর লালরিনডিকার তিনটে শট বাঁচিয়ে সোদপুরের মিষ্টু বোঝালেন তিনি আছেন, আরও বহু দিন থাকবেনও। আর বেলো রাজ্জাক তো নড়তেই দেননি চিডিকে।
কার্লোস-গৌরমাঙ্গী-বেলো-লালদের ব্যবহার করে নিজের বক্সের বাইরে যে চতুষ্কোণ জাল বিছিয়ে ছিলেন প্রয়াগ কোচ, তা কেটে বেরোতে পারলেন না পেনরা। দুটো কারণে। এক) মর্গ্যানের প্ল্যান বি দ্বিতীয়ার্ধে কাজ করেনি। দুই) মগজাস্ত্র ব্যবহার করে এলকো ঘেঁটে দিয়েছিলেন লাল-হলুদের মাঝমাঠ। এ দিনের হার তাঁর দলকে তিন নম্বরে ঠেলে দিলেও হতাশ নন ব্রিটিশ। বলেন, “আজই তো বিশ্ব থেমে গেল না। আই লিগও চলবে। কখনও কখনও এ রকম হয়।”
প্রয়াগের ধাক্কা মর্গ্যানকে কাবু করতে না পারলেও ম্যাচের পর জার্সি খুলে উগা ওপারার রণং দেহী মূর্তি নিয়ে তেড়ে যাওয়া তাঁকে বিব্রত করবেই। উগা-বেলো মারামারি-রক্তারক্তি যখন হয় তখন মর্গ্যান চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমে। কিন্তু মাঠে ছিলেন কেরলের রেফারি সন্তোষ কুমার। পুরো দল নিয়ে। তাঁর নিষ্ক্রিয়তা দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। সন্তোষ ফিফা প্যানেলের রেফারি। কিন্তু ফিফার আইনেই বলা আছে, প্রয়োজনে ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে গিয়েও কার্ড দেখাতে পারেন রেফারি। কড়া হাতে ম্যাচ খেলালেও র‌্যান্টিকে যে হলুদ কার্ড সন্তোষ দেখিয়েছেন সেটাও বিতর্কিত। টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে, নিজেদের বক্সে অর্ণবই বরং পা বাড়িয়ে ফেলে দিয়েছিলেন র‌্যান্টিকে।
রবিবার থেকে রবিবার রেফারি নিয়ে সপ্তাহ ধরে চলা বিতর্ক কিন্তু থামল না। বরং এই ম্যাচ তা আরও উস্কে দিল।

প্রয়াগ: সুব্রত, দীপক, বেলো, গৌরমাঙ্গী, ধনচন্দ্র, আসিফ (অনুপম) লালকমল, শঙ্কর (রফিক), বিনীত (রবিন্দর),কার্লোস, র‌্যান্টি।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা (অ্যালভিটো), ওপারা, অর্ণব, সৌমিক খাবরা, ইসফাক (্লালরিন), মেহতাব, পেন, মননদীপ, চিডি।

ইস্টবেঙ্গল নামল তিনে

ম্যাচ জয় পয়েন্ট
ডেম্পো ১১ ২৫
চার্চিল ১১ ২৫
ইস্টবেঙ্গল ১০ ২১
প্রয়াগ ১১ ১৭ (৫ নম্বর)
মোহনবাগান ১২ (৯নম্বর)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.