দূষণে অতিষ্ঠ ইকড়া
পুকুর থেকে বিছানা, ছাই জমেছে সব কিছুতেই
লের উপরে কালো আস্তরণ। জানালা বন্ধ, তবু বিছানা-বালিশে ছাইয়ের স্তর। গ্রামের আকাশ সব সময়ই ধূসর। এমন সব দৃশ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন জামুড়িয়ার ইকড়া গ্রামের বাসিন্দারা। ইকড়া শিল্পতালুকের কারখানাগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধি না মানার ফলেই এমন পরিস্থিতি, অভিযোগ বাসিন্দাদের। কারখানার মালিকেরা অবশ্য তা মানতে নারাজ।
বছর দশেক আগে গড়ে ওঠে এই শিল্পতালুক। অধিকাংশই স্পঞ্জ আয়রনের কারখানা। শিল্পতালুক লাগোয়া ইকড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুধীর চট্টোপাধ্যায়দের দাবি, কারখানাগুলি গড়ে ওঠার আগে এলাকার সায়রের জল ছিল স্বচ্ছ। সেই জল পানীয় হিসেবেও ব্যবহার করতেন গ্রামবাসীরা। নানা অনুষ্ঠানে রান্নার জন্যও ব্যবহৃত হত সায়রের জল। এখন অবশ্য সায়রের দিকে তাকালে তা কল্পনাও করা যায় না। গ্রামে রয়েছে চারটি পুকুরজগুরবাঁধ, ডুমুরগোড়িয়, করমগোড়িয়া ও লুইখুড়ি। গ্রামের বধূ নারায়ণী বাগদি, সুভদ্রা বাদ্যকরেরা জানান, তাঁরা পুকুরে বাসনপত্র ধুতে যান। আগের তুলনায় এখন বাসন ধুতে অনেক বেশি সময় লাগে। জলের উপরের স্তর কালো ছাইয়ে ভরে থাকাই এর জন্য দায়ী বলে তাঁদের দাবি।
কারখানার কালো ধোঁয়া। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, বাবন বাগদিরা জানান, পাঁচ-ছ’বছর আগেও জোড়ের পাড়ে চড়ুইভাতি করা হত। কিন্তু জোড়ের জল এখন আর ব্যবহারের উপযোগী না থাকায় চড়ুইভাতির জায়গা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। ইকড়ায় তিনটি শ্মশানকালী মন্দির রয়েছে। জামাকাপড় কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে বসতে পারেন না বলেও তাঁদের অভিযোগ। গ্রামবাসী বুধন বাউরি, তপন ঘোষদের দাবি, কালো খড় খেয়ে গবাদি পশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে গরু-ছাগলের দুধ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এলাকার মানুষজন শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন। সব থেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে সদ্যোজাত শিশুদের। জানালা বন্ধ করে রাখলেও ভেন্টিলেটর দিয়ে কালো গুঁড়ো ঘরে ঢুকছে।
সিপিএম কাউন্সিলর বন্দনা চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, দূষণের সমস্যা দিনদিন বাড়ছে। একই অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের ইকড়া অঞ্চল কমিটির সভাপতি গুণময় বাউরি। তাঁর দাবি, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কিছু দিন দূষণের প্রকোপ কমেছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে তা ফের বেড়েছে। তাঁর অভিযোগ, “নিয়ম অনুযায়ী, পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি, বড় গর্ত ইত্যাদি জায়গায় বর্জ্য ছাই ফেলার কথা। কিন্তু কারখানাগুলি তা মানে না। ছাই উড়ে ইকড়া ছাড়াও আশপাশের এলাকার মানুষকেও অসুবিধায় ফেলছে। পাশাপাশি, কারখানার ধোঁয়ার অসুবিধা তো রয়েছেই।” মহকুমাশাসক থেকে বণিকসভা, দলের তরফে সব স্তরে দরবার করেও প্রতিকার মেলেনি বলে তাঁর দাবি। গ্রামের বাসিন্দারাও জানান, প্রশাসনের নানা স্তরে ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদে চিঠি পাঠানো হলেও ফল হয়নি।
কারখানা কর্তৃপক্ষগুলি অবশ্য দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ মানেননি। জামুড়িয়া বণিকসভার সম্পাদক অজয় খেতানেরও দাবি, “ওই শিল্পতালুকে যে সব কারখানা রয়েছে, তারা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের নিয়ম মেনেই কাজ করে। পর্ষদও কয়েক বার এসে পরিদর্শন করে গিয়েছে।” আসানসোলের মহকুমাশাসক শিল্পা গৌরী বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে পরিস্থিতি দেখতে বলা হয়েছে।” দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোলের আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.