মাতৃহারা বাঘের ছানা উদ্ধার অরুণাচলের গ্রামে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
মাস দুয়েক আগে মাকে হারিয়েছে তারা। নিতান্তই ছোট চারটি বাঘের ছানা। পেটের দায়ে নিজেরাই অরুণাচলের দিরাং উপত্যকায় বনেবাদাড়ে ও আশপাশের গ্রামে হাঁস-মুরগি-ছাগল শিকারের চেষ্টায় নেমেছিল। এ মাসের গোড়ায় ছাগল শিকার করতে গিয়ে জখম হয় একটি ছানা। তারপর থেকেই সেটির খোঁজ নেই। কাল দিবাং উপত্যকার গ্রাম থেকে উদ্ধার হল তিনটি বাঘের ছানা। শুকনো জলাধারের ভিতরে ছিল তারা। এর মধ্যে একটি মারা গিয়েছে। বাকি দুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় রোয়িং-এ।
অরুণাচলপ্রদেশের পার্বত্য এলাকায় রয়্যাল বেঙ্গলের বিচরণ প্রত্যক্ষ করতে গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার পশুপ্রেমী, বিশেষজ্ঞরা অভিযান চালিয়েছেন। স্নো-লেপার্ডের সন্ধান মিললেও, রয়্যাল বেঙ্গলের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি মোলাকাত হয়নি। নামদফাতেও বাঘ থাকার প্রমাণ মিলেছে। দিবাং উপত্যকার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গলের বিচরণ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই খবর মিলছিল। |
উপ মুখ্য বনপাল পি রিঙ্গু জানান, আনিনি থেকে বৃহস্পতিবার খবর আসে, তিনটি বাঘের বাচ্চা এলাকায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। ইপরা মেকোলা ও সৌম্য দাশগুপ্তর নেতৃত্বে ডব্লিউটিআই বাঘের বাচ্চাদের সন্ধান শুরু করেন। সৌম্য দাশগুপ্ত জানান, অক্টোবরে এই শাবকগুলির মায়ের দেহই মিলেছিল। নভেম্বরের শেষে গ্রামের কালভার্ট-এর নীচে প্রথমবার শাবকগুলির দেখা মিলেছিল। সেবার, কুকুর ও গ্রামবাসীদের তাড়ায় পালিয়েছিল তারা। এরপর, এ মাসের প্রথমে ছাগল শিকার করতে গিয়ে জখম হয় একটি শাবক। তার সন্ধান মেলেনি। দিন চারেক আগে, একটি হরিণশিশুকে ধাওয়া শুকনো রিজার্ভারের ভিতরে পড়ে যায় অন্য তিনটি বাঘের ছানা। গ্রামের মোড়ল চিপি মোলোর নেতৃত্বে, গ্রামবাসীরা ডালপালা, পাথর দিয়ে তাদের চাপা দিয়ে রেখেছিলেন। শাবকদের উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখা হয়েছিল যাতে তাদের কোনও ক্ষতি না হয়। চিকিৎসক জাহান আহামেদ ও নূপুররঞ্জন বুঢ়াগোহাই রিজার্ভারেই ঘুম পাড়িয়ে তাদের উদ্ধার করেন। একটি শাবক অত্যন্ত অসুস্থ ছিল। উদ্ধার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। অন্য দু’টি শাবককে রোয়িং মিনি চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে শুশ্রূষা করা হয়। তারা আপাতত সুস্থ। দুই জনের বয়স আট মাস। একটি পুরুষ, অন্যটি স্ত্রী। মৃত শাবকটির ময়না তদন্ত করে দেখা গিয়েছে সে নিউমনিয়া ও হাইপোগ্লাইসিমিয়ায় ভুগছিল। ডব্লিউটিআইয়ের প্রধান চিকিৎসক ভাষ্কর চৌধুরী জানান, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পরে, শাবকদুটিকে প্রথমে নজরবন্দি অরণ্যে ছাড়া হবে। বড় শিকার ধরার উপযুক্ত হলে, গভীর অরণ্যে রেখে আসা হবে তাদের। জখম শাবকটির সন্ধানে গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ইপরার মতে, দিবাং উপত্যকার অরণ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৫ কিলোমিটার দূরে দিবাং অভয়ারণ্য রয়েছে। বাঘ মেলার পরে, এটিকে ‘টাইগার রির্জাভ’ হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। গ্রামপ্রধানের প্রশংসনীয় ভূমিকার উল্লেখ করে মেকোলা বলেন, “এখানকার গ্রামে বাঘকে মানুষের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়। যা এখানকার অন্যান্য গ্রামে দেখা যায় না। এই ঐতিহ্যকেই হাতিয়ার করে দিবাং বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।” উদ্ধার হওয়া শাবক দু’টির নাম দুই স্থানীয় জীবনদাতার নাম অনুসারে ইপরা ও চিপি রাখা হয়েছে। দু’টি ছানাকে বাঁচাতে পারলেও মৃত্যু ঘটেছে দু’টির। সেই ছোট্ট দুই প্রাণীকে হারিয়ে বিষাদগ্রস্ত গ্রামবাসীরা। |