আরামবাগ পুর এলাকার বাসিন্দা বলেই সকলে তাঁদের চেনে। দিব্যি বাড়ি-ঘর আছে সেখানে। কেউ আবার পুরসভার কাউন্সিলরও বটে। কিন্তু পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা হিসাবে নিজেদের দাবি করে সেখানকার ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়েছেন আরামবাগের কয়েক জন প্রথম সারির তৃণমূল নেতা। দলের অন্দরের খবর, আসন্ন ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতির আসনকে পাখির চোখ করেই এমনটা ঘটিয়েছেন ওই নেতারা।
ভোটার তালিকা-সংক্রান্ত গোলমালে বিষয়টি প্রশাসনের কানে গিয়েছে দলীয় তরফেই। এক গোষ্ঠীর নেতার বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর তরফে নালিশ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে মহকুমা প্রশাসনেরই একটি সূত্র।
ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়। তাঁর বক্তব্য, “বিষয়টি বিচারাধীন। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।” অন্য দিকে, হুগলি জেলা তৃণমূল নেতা তপন দাশগুপ্ত ঘটনাটি শুনে কার্যত বিস্মিত। বললেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি। গোলমাল পেলে দলীয় স্তরে পদক্ষেপ করা হবে।”
আরামবাগ পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বৃন্দাবনপুরে নিজের বাড়ি আছে তৃণমূল নেতা সমীর ভান্ডারির। কিন্তু নতুন ভোটার তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে মায়াপুর ২ পঞ্চায়েতের মহেশপুর মহাকালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের ভোটার হিসাবে। ওই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মানিক ঘোষ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকেন বলে সেই নথিপত্র প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছিলেন সমীরবাবু। তাঁর স্ত্রী-পুত্রের নাম অবশ্য বৃন্দাবনপুরের ভোটার তালিকাতেই আছে। গত পঞ্চায়েত ভোট, পুরসভা ভোট কিংবা বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে সমীরবাবুর নামও ছিল ওই তালিকায়।
তাঁর বক্তব্য, “গত বছর দ্বিতীয় দফায় ভোটার তালিকা সংশোধনীর সময়েই বৃন্দাবনপুরে আমার নাম কাটিয়েছি। দলীয় কাজে মহেশপুরেই থাকতে হয় আমাকে। সে জন্য এখানেই নাম তুলিয়েছি।” তৃণমূল নেতার সাফাই, “পঞ্চায়েত ভোটের কথা ভেবে কিছু করিনি।”
তদন্তে নেমে তৃণমূলের আরও দুই নেতার ক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় এই বিষয়টি চোখে পড়েছে প্রশাসনের।
স্বপন নন্দীর আদি বাড়ি মায়াপুর ২ পঞ্চায়েতের বলুন্ডিতে। পুর এলাকার গৌরহাটি মোড়ের কাছে তাঁর নিজের বাড়ি আছে। স্বপনবাবুর নাম ভোটার তালিকায় বলুন্ডির ১৪৪ অংশে আছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত পুর ভোটের আগে বলুন্ডি থেকে নাম কাটিয়ে পুর এলাকার ১১৯ অংশে নিজের নাম নথিভুক্ত করান স্বপনবাবু। নিয়ম মোতাবেক, তাঁর নাম গ্রামীণ এলাকার ভোটার তালিকা থেকে এমনিতেই বাদ যাওয়ার কথা। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে তেমনটা হয়নি।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে সমীরবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতা বলেই পরিচিত স্বপনবাবু। তিনি আবার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভায় বিরোধী দলনেতা।
স্বপনবাবুর বক্তব্য, “আমি প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছি, আমার নাম পুর এলাকাতেই থাকুক। বলুন্ডির ভোটার তালিকায় নাম প্রশাসনের গাফিলতিতে থেকে গিয়েছে, নাকি আমি নতুন করে তা নথিভুক্ত করিয়েছি তা খতিয়ে দেখা হোক।” পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিট পেতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেননি স্বপনবাবুও।
মহম্মদ সেলিম নামে তৃণমূলের আরও এক প্রভাবশালী নেতার বাড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় রাজনীতিতে কখনও তিনি সমীরবাবু আবার কখনও স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। তিনি আবার তিরোল পঞ্চায়েতের চণ্ডীবাটি বুথে নাম তোলার আবেদন করেছেন।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করে নিজেকে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবেও দাবি করেছেন সেলিম। এই তৃণমূল নেতা অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মনোনয়ন দিতে পারল না বাম। হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার তিনটি স্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতল তৃণমূল। তিনটি স্কুলেই দীর্ঘদিন ধরে পরিচালন সমিতির ক্ষমতা ছিল বামেদের হাতে।
বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের বাধায় ডানপন্থীরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যোগদান করতে পারত না বলে অতীতে বার বার অভিযোগ উঠেছে। এ বার মনোনয়ন জমা করতে পারল না বামেরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, চুঁচুড়া পুর-এলাকার ভারতী বিদ্যাভবন বালিকা বিদ্যালয়, মল্লিকবাটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং বালিকা শিক্ষামন্দিরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল শনিবার।
ভোটের দিন ধার্য করা হয়েছিল আগামী ২৩ ডিসেম্বর। তৃণমূল বাদে কোনও দলই মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। |