তিনি নাকি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী! তাই তাঁকে আর বার্ধক্য ভাতা দেওয়া যাবে না।
ব্লক প্রশাসনের এ হেন নিদানে বিপাকে পড়েছেন মায়া চক্রবর্তী। আমতা ১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের কুমারিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিধবা মায়াদেবীর বয়স প্রায় ৭০। অসুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি জানালেন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসাবে তো দূরের কথা। কোনও দিন কোথাও চাকরি করেননি। তাঁর অভিযোগ, এ কথা পঞ্চায়েতকে জানানো সত্ত্বেও তাঁর বার্ধক্য ভাতা এখনও চালু হল না।
মায়াদেবী গত তিন বছর ধরে বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছিলেন। বর্তমানে ভাতা মাসে ৪০০ টাকা। এক সঙ্গে চার বা ছ’মাসের ভাতা সরাসরি তাঁর নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। পঞ্চায়েতের কাছ থেকে খবর পেলে ব্যাঙ্ক থেকে তিনি সেই টাকা তুলে আনেন।
কালীপুজোর সময়ে খবর পান, সেপ্টেম্বর মাস থেকে পরবর্তী চার মাসের টাকা এসে গিয়েছে। কিন্তু ভোজান গ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা আসেনি।
মায়াদেবীর নিজের মাটির বাড়িটুকু ভেঙে গিয়েছে বছর দুই আগে। এখন পাশেই কলিকাতা গ্রামে মেয়ের বাড়িতে থাকেন। বার্ধক্য ভাতার সামান্য কয়েকটি টাকা তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। মায়াদেবীকে নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন মেয়ে সুমিত্রা। তিনি বললেন, “মা চলাফেরা করতে পারেন না। পয়সা খরচ করে রিকশায় চাপিয়ে মাকে ব্যাঙ্কে নিয়ে গেলাম। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরতে হল।”
স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা রসপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য জয়ন্ত পোল্যে বলেন, “সমস্যাটি হওয়ার পরে আমি মায়াদেবীর বিষয়টি জানতে গ্রাম পঞ্চায়েতে যাই। সেখান থেকে বলা হয়, ব্লক থেকেই তাঁর ভাতা আটকে দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি নাকি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। এ কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। কারণ সকলেই জানেন মায়াদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নন।” অন্য দিকে, সুমিত্রাদেবী বলেন, “মায়ের পেনশন যাতে চালু হয় সে জন্য আমরা পঞ্চায়েতের কাছে বার বার জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি।” রসপুর পঞ্চায়েতের সচিব হারাধন দে বলেন, “প্রথমে আমরাও জানতাম না কেন মায়াদেবীর ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। পরে ব্লকে উন্নয়ন-সংক্রান্ত বৈঠকে বিষয়টি তোলার পরে আমাদের জানানো হয়, ওই মহিলা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। সে কারণেই তাঁকে ভাতা দেওয়া যাবে না। এ কথা শোনার পরে ব্লক প্রশাসনকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, মায়াদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নন। তাঁর ভাতা যেন চালু করে দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে আমতা ১ ব্লকের পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট অফিসার তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কাছে খবর ছিল, অনেক মহিলা বার্ধক্য ভাতা নিচ্ছেন আবার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসাবেও কাজ করছেন। শুধুমাত্র তাঁদেরই ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মায়াদেবীর নামটি যে ভাবে হোক ওই তালিকায় চলে এসেছে। আমরা একবার তাঁর বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করে দেখে নেব। তিনি খুব শীঘ্রই ভাতা পেয়ে যাবেন।” তাঁকে ভাতার বকেয়া টাকাও দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই সরকারি আধিকারিক।
মায়াদেবীর অভিযোগ, বিপিএল তালিকায় নাম থাকলেও তাঁকে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হয়নি। তার উপরে বার্ধক্য ভাতাও বন্ধ করে দেওয়া হল। তিনি বলেন, “নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। মেয়ের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। ভাতাও বন্ধ হয়ে গেল। মেয়ের উপরে আর কত চাপ দেব?” প্রশাসনের আশ্বাসটুকুই আপাতত সম্বল বৃদ্ধার। |