আর সংঘাত নয়, শিল্পমহল চাইছে, সিঙ্গুর নিয়ে এ বার আলোচনায় বসে কোনও সমাধান সূত্র বার করুক পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও টাটা গোষ্টী। এমন কোনও সমাধান, যেখানে দু’পক্ষই জেতে।
সিঙ্গুর নিয়ে রবিবার যে হতাশা রতন টাটা প্রকাশ করেছেন, তাকে সঙ্গতই মনে করছে শিল্পমহল। তবে তাদের বক্তব্য সিঙ্গুর থেকে ন্যানোর বিদায় টাটার পক্ষে যত না হতাশার, তার চেয়ে বহু গুণ বেশি হতাশাজনক পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে। কিন্তু সিঙ্গুর নিয়ে হতাশা জানানোর পাশাপাশি রবিবার রতন টাটা এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা নিয়ে এখনও উৎসাহ রয়েছে তাঁর। এর সমান্তরালে শিল্পমহলেরও বক্তব্য, এখনও সময় আছে। টাটাদের ফিরিয়ে আনলে শিল্পবিমুখ পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা হলেও অক্সিজেন পাবে। সে জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আলোচনায় বসুক। খুঁজে বের করুক এমন একটা রফাসূত্র যাতে সব পক্ষেরই জয় হয়।
‘ভারতীয়’ বহুজাতিক শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটার এ দিনের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হলেও বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত বলেন, “ওঁর হতাশার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ওঁকে আনতে পারিনি বলে আমরাও হতাশ। কারখানাটা হলে ভালই হত। হয়তো গোটা সমস্যাটাও অন্য ভাবে মেটানো যেত। তবে যাই হোক না কেন, আমরা একটা বড় সুযোগ হারিয়েছি।”
অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াতও সুযোগ হারানোর প্রশ্নে একমত। তিনি বলেন, “এটা টাটা-র পক্ষে যতটা না হতাশার, বেশি হতাশাজনক রাজ্যের পক্ষে।” বস্তুত, তাঁর মতে, টাটা মোটরস-এর এই বিনিয়োগ পশ্চিমবঙ্গের দিকে অন্য লগ্নিকারীদেরও চোখ ফেরাতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল।
“কিন্তু লগ্নিকারীদের সেই আস্থা টলে যায়, যখন তাঁরা দেখেন যে সেই টাটাদের প্রকল্পই অনিশ্চয়তার মুখে,” বলছেন রাওয়াত। তাঁর বক্তব্য, যখন লগ্নিকারীরা দেখেন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা যে দলের সবচেয়ে বেশি, তাদের জন্যই ওই প্রকল্প গুটিয়ে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে, তখন রাজ্য সম্পর্কে তাঁদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ে। তাই শিল্পায়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও এখনও সরকার লগ্নিকারীদের কী ভাবে সাহায্য করছে সে দিকেই সকলে তাকিয়ে রয়েছেন। কল্লোালবাবু ও রাওয়াত উভয়েরই দাবি, সময় পেরিয়ে যায়নি। কল্লোলবাবু বলছেন, “এখনও ওঁদের ফিরিয়ে আনলে সর্বত্র যে বার্তা ছড়াবে, তা শিল্পায়নের পক্ষে যথেষ্ট।” রাওয়াত বলছেন, “এটা শুধু যে সদর্থক বার্তাই দেবে তাই নয়, অতীতের এমন ভুল যে আর হবে না, সেটাও বোঝানো যাবে সকলকে।” তাই তাঁরা চাইছেন, প্রয়োজনে আদালতের বাইরে মীমাংসার পথেও হাঁটুক উভয় পক্ষ।
আদালতের বাইরে মীমাংসার সূত্র সমর্থন করছেন ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অশোক আইকতও। তিনি বলেন, “আজ টাটা যা বলেছেন, তা তিনি আগেও বলেছেন। টাটা অবসর নিলে নতুন টিম কাজ শুরু করবে। কী রফাসূত্র বেরোবে জানি না। কিন্তু সব পক্ষই আলোচনায় বসুক।” তাঁর দাবি একটাই। যা-ই হোক না কেন, তা যেন সকলের পক্ষেই ভাল হয়, সকলেই জেতে। সেটাই মূল বিবেচ্য। কারণ কোনও পক্ষই হেরে যেতে চায় না। আর এ দেশে আইন-আদালত দীর্ঘমেয়াদি বলেই তিনি জোর দিচ্ছেন আলোচনার উপর। তাতেই অচলাবস্থা দ্রুত কাটবে বলে মনে করেন তিনি।
|
আলোচনা করে কারখানা করাই যেত। গোঁয়ার্তুমির জন্য সিঙ্গুরে শিল্প হয়নি।
প্রদীপ ভট্টাচার্য
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি |
ওঁর হতাশার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আর আমরাও হতাশ যে ওঁকে আনতে পারিনি।
কল্লোল দত্ত
প্রেসিডেন্ট, বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স |
এটা টাটা-র পক্ষে যতটা না হতাশার, তার চেয়ে বেশি রাজ্যের পক্ষে।
ডি এস রাওয়াত
সাধারণ সচিব, অ্যাসোচ্যাম |
টাটা-র পর নতুন টিম এলে জানি না কী সূত্র বেরোবে। কিন্তু সবাই আলোচনায় বসুক।
অশোক আইকত
প্রেসিডেন্ট, ভারত চেম্বার অফ কমার্স |
|