|
|
|
|
কাঁচামালের অভাবে ধুঁকছে কাগজ কল |
উত্তম সাহা • শিলচর |
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের কাছাড় কাগজ কল। মাঝেমধ্যেই কখনও বাঁশ, কখনও কয়লা না মেলায় বন্ধ থাকছে উৎপাদন। সঙ্কট দীর্ঘ দিন ধরেই। পাশাপাশি, অগস্ট থেকে শুরু হয়েছে কয়লা সমস্যা। সেপ্টেম্বরে ক’দিন খোলা, ক’দিন বন্ধ। পরের দু’ মাস মোটামুটি চলে গেলেও ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই সঙ্কট তীব্রতর আকার নিয়েছে। ১ থেকে ৫ ডিসেম্বর উৎপাদন বন্ধ ছিল বরাক উপত্যকার একমাত্র বড় শিল্প সংস্থাটিতে। এ বারের সমস্যা বাঁশের। গত কয়েকটা দিন মিল চললেও ক’দিন তা চালু থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কারণ বাঁশ এবং কয়লা দু’য়ের মজুতই তলানিতে।
মিল সূত্রে জানা গিয়েছে, চাহিদা মতো প্রতিদিন বাঁশ না আসায় মজুতের পরিমাণ কমছে। কয়লার চিত্র আরও করুণ। বকেয়া মেটানোর দাবিতে সরবরাহকারীরা এ ভাবেই মিল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ।
স্বভাবতই উদ্বেগে রয়েছে সব ক’টি শ্রমিক ইউনিয়ন। আইএনটিইউসি, স্বতন্ত্র ও বাম সংগঠন জোট বেঁধে মিল বাঁচানোর জন্য বিশেষ মঞ্জুরির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। স্বতন্ত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ললিত রাজ বলেন, ভৌগোলিক কারণে হাইলাকান্দি জেলার পাঁচগ্রামের এই মিলে কাঁচামাল সংগ্রহে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। দেড় দশক আগে ব্রডগেজ রূপান্তরের কাজ শুরু হলেও কবে শেষ হবে, তার কোনও ঠিক নেই। অন্য দিকে, মিটারগেজ লাইনেও পর্যাপ্ত রেক মেলে না। জাতীয় সড়কের অবস্থাও খারাপ। বিশেষ করে, অসম ও মেঘালয়ের সীমায়, মালিডহরে যে বেইলি সেতু রয়েছে, সেটি নড়বড়ে। সেই কারণে ট্রাকগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য বহন করতে পারে না।
সমস্যা আছে আরও। উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদ তাদের এলাকা থেকে সংগৃহীত বাঁশের দর অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। এর প্রভাব পড়ছে অন্যান্য অঞ্চলের বাঁশেও। আবার বকেয়া না মেটানোয় জন্য সরবরাহকারীরা কাঁচামাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। বলে এক দিকে উৎপাদন কমে যাচ্ছে অন্য দিকে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ বাড়ছে। বাড়ছে লোকসানও। শ্রমিক সংগঠনের নেতা ললিতবাবু ২০০০-২০০১ থেকে ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত বাঁশের ইউনিট প্রতি ব্যয়ের হিসেব দেখিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেলের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছেন। ওই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ২০০০-২০০১ আর্থিক বর্ষে প্রতি মেট্রিক টন বাঁশের মূল্য ছিল ১ হাজার ২০ টাকা। ২০০৫-০৬ বর্ষে তা হয় ১ হাজার ৫২৫ টাকা। ২০০৯-১০-এ ২ হাজার ৩৩২ এবং পরের বছর ২ হাজার ৪২০ টাকা। গত বছর এই অঙ্ক এক লাফে পৌঁছয় ৪ হাজার ২৩১ টাকায়। অন্য দিকে, ২০০৫-০৬ সালে কাছাড় কাগজ কলের উৎপাদন ১ লক্ষ টন স্পর্শ করে। ২০০৬-০৭ সালে তা বেড়ে হয় ১ লক্ষ ৩ হাজার ১৫৫ টন। এটিই বার্ষিক সর্বোচ্চ উৎপাদন। এরপর ক্রমে ক্রমে তা নেমে গিয়ে ২০১০-১১ সালে হয় মাত্র ৫২ হাজার ৭৮১ টন, এক দশকে সবচেয়ে কম উৎপাদন। গত বছর তা বেড়ে ৮০ হাজার টন হলেও চড়া দামে কাঁচামাল ব্যবহারের দরুন লোকসান ঊর্ধ্বমুখী। |
|
|
|
|
|