অস্বস্তিই বাড়াল মালিকের সফর
খনও ২৬/১১-র অন্যতম চক্রী আবু জুন্দলকে ভারতীয় গুপ্তচর বলে দাবি করেছেন, কখনও মুম্বই হামলার পাশে রেখেছেন বাবরি মসজিদের ঘটনাকে, কখনও আবার ২৬/১১-র জন্য ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে দুষেছেন। হাফিজ সইদ সম্পর্কেও তাঁর সেই পুরনো কথা আগে ভারত সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিক, তার পর তাকে গ্রেফতার করা হবে। ভারত সফরে এসে এমন নানা মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তথা ইউপিএ সরকারকে যারপরনাই অস্বস্তিতে ফেলেছেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক।
ভারতে আসার ব্যাপারে মালিক বেশ কিছু দিন ধরে উৎসাহ দেখাচ্ছিলেন। সম্প্রতি রোমে ইন্টারপোলের অধিবেশনেও তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে বলেছিলেন, দু’দেশের নয়া ভিসা নীতির আনুষ্ঠানিক সূচনা করতে তিনি দিল্লি আসতে চান। কিন্তু মালিকের সফর নিয়ে গোড়া থেকেই প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। যুক্তি ছিল, ২৬/১১-র তদন্তে পাক সরকার যখন সহযোগিতা করছেই না, তখন মালিকের সফরে আদৌ লাভ হওয়ার নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই যুক্তি সমর্থন করেননি। ক্ষুব্ধ হয়েছিল বিদেশ মন্ত্রকও। প্রাক্তন ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বোঝানো হয়, আলোচনার পথ বন্ধ করাটা ভারতের বিদেশনীতি নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় লাহৌর বাসযাত্রা শুরুর পরেই কার্গিলের যুদ্ধ হয়েছিল। তাও বাজপেয়ী সেই কার্গিল যুদ্ধের প্রধান মস্তিষ্ক পারভেজ মুশারফের সঙ্গে আগরায় বৈঠকে বসেছিলেন। কারণ, মুশারফই তখন প্রেসিডেন্ট। মৈত্রীর যুক্তিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে চিদম্বরম-শিন্দের আপত্তি খারিজ হয়ে যায়।
কিন্তু আসা ইস্তক একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে গিয়েছেন মালিক। ভিসা নীতির সূচনার পর সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, “আমরা ৯/১১ চাই না, মুম্বই বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেস, বাবরি মসজিদের মতো ঘটনা চাই না।” জুন্দল সম্পর্কে বলেছেন, “ভারতের একটি প্রথম সারির গুপ্তচর সংস্থায় সে কাজ করেছে। কিন্তু সে ডাবল এজেন্ট হয়ে যায়” যে মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ। রবিবার আবার ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে’ বক্তৃতা দিতে গিয়ে মালিক দাবি করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়মিত তথ্য আদানপ্রদান চললে হয়তো ২৬/১১ হামলা এড়ানো যেত। কিন্তু এই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিন্দুমাত্রও অবহিত ছিল না ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিল্লিকে তিনি ফের অনুরোধ করেন যত দ্রুত সম্ভব হাফিজের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে।
স্বভাবতই গোটা ঘটনাপ্রবাহে মনমোহন সরকার ঘরে-বাইরে অস্বস্তিতে। বিজেপি ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে, একের পর এক সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে পাক মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য সত্ত্বেও সরকার নীরব কেন? বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ অবশ্য বলেছেন, “পাক প্রেসিডেন্ট এ সব বললে অন্য ভাবে দেখতাম। এ ক্ষেত্রে মনে হয় উনি (মালিক) কী বলবেন, তা ভাল করে ঠিক না করেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলে ফেলেছেন।” কিন্তু সরকারের যুক্তি উড়িয়ে এ নিয়ে আগামিকাল বিজেপি সংসদ অচল করবে বলে ঠিক করেছে।
ভেতরে ভেতরে দিল্লি মনে করছে, ভারত নিয়ে মালিকের এত বিস্ফোরক মন্তব্যের আসল উদ্দেশ্য হল, নিজের দেশে ঘরোয়া রাজনীতিতে ফায়দা তোলা। কারণ, আগামী বছরেই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, সংসদে বিরোধীদের জবাব দিতে গিয়ে ইউপিএ সরকারকেও এ বার পাক-বিরোধিতার সুর চড়াতে হবে। কাজেই ঘরের ফায়দা দেখতে গিয়ে মনমোহনের মৈত্রী-প্রয়াসকেই জোরালো ধাক্কা দিয়ে গেলেন
রেহমান মালিক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.