প্রযুক্তির জোরে মঞ্চ মাতিয়ে মোদী মাত করলেন বিরোধীদেরও
শ্-শ্-শ্-শ্-শ্-শ্-শ্...
চুপ...সবাই চুপ...সূর্য ডুববে...অন্ধকার হবে..
তার পর?...হা-লু-ম...
গুটিগুটি পায়ে কে আসবেন??? বাঘ... গুজরাতের বাঘ...
নরেন্দ্র মোদী।
হা-হা-হা-হা-হা-হা
পাড়ার মোড়ে মস্করায় মশগুল ওসমান। গপ্পো জুড়েছেন বন্ধুদের সঙ্গে।
সন্ধে হলেই পাড়ার মাঠে মোদী আসছেন। কিন্তু এ কি! উসখুস হাজারো জনতার ভিড়। শুধু পাঁচ জন ভুড়ি বাগানো কনস্টেবল? পুলিশ নেই। বাড়াবাড়ি নেই। ট্র্যাফিক জ্যাম নেই। রাস্তা আটকানো নেই।
মাঠের মধ্যে মঞ্চ হয়েছে। নীল পর্দায় ঢাকা। লোকে বলছে, পর্দা সরলেই নাকি মোদী বেরোবেন ভিতর থেকে। সূয্যি না ডুবলে না কি বেরোবেন না। উঁকিঝুঁকি মেরেও লাভ নেই। পর্দা সরানোর জো নেই। গাঁট্টাগোঁট্টা চেহারার কয়েকটা লোক মঞ্চ পাহারায়।
সত্যি! সন্ধে হল। আলো নিভল। ঘোষণা হল, মোদী আসছেন। থ্রি-ডি প্রযুক্তিতে। কেউ ছবি তুলবেন না। ফ্ল্যাশ জ্বালাবেন না। পর্দা উঠল। লাল পাঞ্জাবী। গেরুয়া উত্তরীয়। বুকে পদ্মফুল। দু’হাত তুলে, হাত নাড়িয়ে মোদী এলেন মঞ্চে। চিল-চিৎকার জনতার। যেন সিনেমার তারকা।
বিলকুল সিনেমাই। খবর নিয়ে জানা গেল, মোদী তখন শহরের উপকণ্ঠে এক হোটেলে। সেখানে বানানো হয়েছে আধুনিক স্টুডিও। বলছেন সেখানে। আর স্যাটেলাইট দিয়ে একই সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছেন রাজ্যের ৫৩টি মঞ্চে! থ্রি-ডি প্রযুক্তি। মনে হচ্ছে, চোখের সামনের মঞ্চটিতেই দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। রাজনীতিক মোদী। অভিনেতা মোদী।
নিপুণ অভিনয়। রাজ্যের ৫৩টি জায়গায় কেমন ভিড়, তা যেমন জানা নেই, তেমনই জানা নেই উপস্থিত জনতা কে কোথায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু হঠাৎ যেন কাউকে দেখার ভান করে হাসি মুখে হাত নাড়লেন। ঘুটঘুটে অন্ধকারে অনেকেই গদগদ হয়ে পড়লেন। ভাবলেন, তাঁকেই চিনতে পেরেছেন মোদী! বক্তৃতার মাঝেই গান। মোদী তাল দিচ্ছেন।
থ্রি-ডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোদীর বক্তৃতা। আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই
সম্মিলিত জনতাও। মোদী বলছেন, ‘ভারত মাতা কী...’। জনতা বলছে, ‘জয়’। ‘জয়’ বলার সময়টিও মেপে ছাড়ছেন মোদী। মঞ্চ থেকেই তুলোধোনা করছেন সনিয়াবেন (গাঁধী), মনমোহনজি (সিংহ), রাহুলবাবাকে (গাঁধী)। কখনও সনিয়ার পাল্টা জবাব দিতে, কখনও মনোমহনকে স্যর ক্রিক ইস্যুতে, কখনও রাহুলবাবার বংশ পরিচয়ে। একের পর এক প্রশ্ন করছেন। এই কংগ্রেস কি গুজরাত বোঝে? উন্নয়ন? উত্তর আসছে ভিড় থেকে।
এক ঘণ্টার টানা বক্তৃতা। কারও মনে আক্ষেপ নেই। সশরীরে ছিলেন না। এসেছেন মায়াবী আলোয়। তবু পুষিয়ে দিয়েছেন ষোলো আনার উপরে আঠারো আনা।
অনেক কিছুতেই প্রথম মোদী। এ বারে এই প্রযুক্তির খেলাতেও প্রথম মাতলেন তিনি। এবং মাতও করলেন। বিরোধীদের। এর আগে একজন রাজনীতিকই এই অভিনব প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। না। ভারতের কেউ নন। আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও করতে চেয়েছিলেন। হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ভারতে এই প্রযুক্তি নিয়ে গোটা গুজরাত চষে বেড়াচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু কী তাই? গোটা বিশ্বে যে বিদেশি সংস্থাটি এই প্রযুক্তি সরবরাহ করে, তাদের সঙ্গে চুক্তিও করেছেন। আগামী দু’বছরে ভারতে এই প্রযুক্তি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না।
এমন চুক্তির অর্থ কী? এর অর্থ, মোদীর শ্যেন দৃষ্টি। দিল্লি। দেড় বছরের মাথায় লোকসভা ভোট। সে সময় গোটা দেশে এই থ্রি-ডি দিয়েই হাজার হাজার এলাকায় পৌঁছে যাবেন মোদী। বা বিজেপি। আর কালঘাম ছুটবে কংগ্রেসের। বেগতিক দেখে এখন থেকেই আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেস। বলছে, খোলামকুচির মতো পয়সা খরচ হচ্ছে। পাঁচশো কোটি টাকার প্রযুক্তি। নির্বাচন কমিশনেও নালিশ জানিয়েছে। বলছে, মোদী ভয় পাচ্ছেন জনতার সামনে আসতে। তাই পর্দার আড়াল থেকে যুদ্ধ করছেন। মোদী বলছেন, “সারা দিন সভা করি। আর যেখানে যেতে পারি না, রাতে প্রযুক্তি দিয়ে পৌঁছই। কংগ্রেসের এত হিংসে কীসের?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.