আদতে গোয়ান, রিবেইরো পরিবার ১০০ বছরেরও বেশি এ শহরে। আর আলজিরিয়ার চাকরি ছেড়ে বছরখানেক হল কলকাতায় থিতু হওয়ার চেষ্টায় দার্জিলিঙের বিমল ভূষল। রবিবারের পার্ক স্ট্রিট তাঁদের একসঙ্গে মিলিয়ে দিল।
ফ্রি-স্কুল স্ট্রিটে রিবেইরোদের আদ্যিকালের বাজনার দোকানটা শহরের সঙ্গীত-রসিকদের চেনা ঠিকানা। সে-বাড়ির গিন্নি পলিন রিবেইরোর হাতের ক্রিসমাস কেক এ বার আম-কলকাত্তাইয়াদের সামনে। বিমল ও তাঁর স্ত্রী অন্তরাও নেপালের মিষ্টি-মিষ্টি পিঠে ‘সেল রুটি’, রকমারি মোমো, রাইস-নুড্ল ফিং-এর পসরা পেশ করলেন। সর্ষের তেলে রাঁধা শুখা-শুখা মাংস, নেপালি খাসি কো তরকারি চেখে শীতহীন শীতের সন্ধেয় যেন মুখটা ছেড়ে গেল কলকাতার।
ঔপনিবেশিক আমলে দেশের এক নম্বর শহর কলকাতার কসমোপলিটান চরিত্র এ যুগে অনেকটাই চিড় খেয়েছে। অন্য প্রদেশ বা বিদেশি পর্যটকদের কাছে এ শহর এখন ততটা পছন্দের নয়। তবু পর্যটন দফতরের সৌজন্যে কলকাতায় লুকিয়ে থাকা নানা কিসিমের সংস্কৃতির রামধনু রংটাই এক দিনের জন্য মূর্ত হয়ে উঠল। মহানগরের বর্ণময় জীবনযাত্রার স্মারক কলকাতা ক্রিসমাস উৎসব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে যার ক্যালেন্ডারে নতুন সংযোজন এই পার্বণ। |
রকমারি সুখাদ্য ঘিরে ভিড়। রবিবার, পার্ক স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র |
রবিবারের পরে ১৮, ২১, ২৩ ডিসেম্বর ও বড়দিনে বিক্ষিপ্ত ভাবে এই উৎসব চলবে পার্ক স্ট্রিটে। থাকবে ক্যারল, আশপাশের ঐতিহ্যশালী গির্জায় সফর, অ্যামেচার ও নামজাদা ব্যান্ডের গান। এ দিন অ্যালেন পার্কে ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস, স্প্যান, ক্রসউইন্ডজের গানে আসর শুরুর পরে বিদেশি পর্যটকেরাও উৎসবে মজে গেলেন। পশ্চিমবঙ্গে বেড়ানোর হাল-হদিস দিতে সেখানেই এক কোণে স্টল খুলে বসেছিল পর্যটন দফতরও।
ফুটপাথেও জমজমাট মেলা। পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন চার্লিবেশি চাঁদ বা ‘সান্তাক্লজ’ ওয়াসিম। জ্যান্ত মিকিমাউস, টাইগারদের ঢং দেখতে দেখতেই চোখ টানল টুপি নিয়ে ব্যান্ডেলের উত্তম-প্রসেনজিৎদের জাগলিং। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বাসুদেব অধিকারীর কথা-বলা পুতুল ‘শর্ট-সার্কিট’-এর ‘জিঙ্গল বেল’ গান শুনে দেদার হাততালি কচি-কাঁচাদের।
মেদিনীপুরের মোষের শিংয়ের বাসন, পান্ডুয়ার রঙিন কাগজের দুল থেকে নানা লোকশিল্পের সামগ্রীও মজুত ছিল। তবে প্রধান আকর্ষণ চেনা চাট-ভেলপুরির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া দুর্লভ সব অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রান্না। ম্যাকলয়েড স্ট্রিটের ওয়ারেন ক্লাইভ টাকারের পর্ক ভিন্দালু, দমদমের সানি গোমসের চিকেন প্যান্ত্রাস চেখে বর্তে গেল কলকাতা।
কিন্তু বচ্ছরকার উৎসবের দিন ছাড়া শহরের পাঁচমিশেলি জীবনযাত্রার এ সব রং কেন সচরাচর দেখা যায় না? কার্নিভ্যালের হই হই মেজাজেও বাতাসে দীর্ঘশ্বাসের মতো থেকেই গেল প্রশ্নটা। |