সল্টলেক পুলিশের এক বছর
রাত একটু বাড়লেই ঘুমিয়ে পড়ে সুরক্ষা
রাত ১১টা। নিউ টাউন রোডের ধারে চিনার পার্কের কাছে একটি মাল্টিপ্লেক্সে নাইট-শো দেখে কাছেই বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালেন এক দম্পতি। সঙ্গে বছর পাঁচেকের মেয়ে। একাধিক ট্যাক্সি থাকলেও বেশি ভাড়া দাবি করছিলেন চালকেরা। বাধ্য হয়ে শাট্ল গাড়ির অপেক্ষায় নিউ টাউন রোডে দাঁড়ালেন তাঁরা। কিন্তু কোনও গাড়িই দাঁড়াচ্ছে না।
বাসস্ট্যান্ডের পাশেই তালাবন্ধ পুলিশ-কিয়স্ক। ভিতরটা অন্ধকার, রয়েছে ফাঁকা চেয়ার। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও নম্বরও নেই সেখানে। প্রায় মিনিট পনেরো অপেক্ষার পরে একটি শাট্ল গাড়ি এসে দাঁড়াল ওই দম্পতির সামনে। চালকের পাশে বসে এক যুবক। ভিতরে জোরে গান চলছে। ওই পরিবারটিকে তুলে নিয়ে নিউ টাউনের অন্ধকার রাস্তায় মিশে গেল গাড়িটি। বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখা মিলল একটি পুলিশের গাড়ির। শাট্ল গাড়িটি ততক্ষণে বহুদূর চলে গিয়েছে।
১১:০২ চিনার পার্ক, নিউ টাউন ১১:৩৪ ভি আই পি রোড
১১:৪৭ লেক টাউন ১২:১২ সল্টলেকের প্রবেশপথ
কমিশনারেট হয়েছে নামেই। বেহাল নিরাপত্তার এই চিত্র বদলায়নি এতটুকু। (উপরের দু’টি ছবি) রাত বাড়তেই
ফাঁকা পুলিশের কিয়স্ক। (নীচে বাঁ দিকে) লেকটাউনের ফাঁকা রাস্তায় এক জন টহলদার পুলিশেরও দেখা
মিলল না। (নীচে ডান দিকে) শুধু সল্টলেক থেকে বেরোনোর পথে চোখে পড়ল পুলিশের তল্লাশি। ছবি: শৌভিক দে
রাত ১১টা ৩০। ভিআইপি রোডে লেকটাউন ফুটব্রিজের কাছে পুলিশ কিয়স্কে দু’টি তালা মারা। আশপাশে কোথাও কোনও পুলিশের গাড়ি বা পুলিশকর্মীর দেখা নেই। মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি সাইকেল হাতে নিয়ে ফুটব্রিজ ধরে হন্তদন্ত হয়ে নামছেন। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে তিনি জানালেন, ফুটব্রিজে কয়েক জন সশস্ত্র যুবক দাঁড়িয়ে মদ্যপান করছিল। তাই ভয় পেয়ে কোনও রকমে নেমে এসেছেন তিনি। ফুটব্রিজে উঠে অবশ্য কাউকে আর দেখা গেল না।
পুলিশের দাবি, গত এগারো মাসে বেড়েছে কর্মীর সংখ্যা থেকে পরিকাঠামো। ফলে নজরদারি বাড়ারই কথা। অথচ লেকটাউন, বাগুইআটি, নিউ টাউন, বিমানবন্দর থানা, ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা এলাকায় একটি-দু’টি পুলিশের গাড়ি ছাড়া নজরদারির কোনও প্রমাণ মিলল না।
সল্টলেকের ছবিটা আবার অন্য রকম। রাত ১২টা ১০। বাইপাস ধরে সল্টলেকে ঢোকার মুখে পুলিশের নজরদারি চলছে। যে সব গাড়ি সল্টলেক থেকে বেরোচ্ছে, সেগুলোর ডিকি খুলে রীতিমতো পরীক্ষাও করা হচ্ছে। যে সব গাড়ি সল্টলেকে ঢুকছে, তাদের অবশ্য কোনও পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে বিনা বাধায় কোনও রকম ‘চেকিং’ ছাড়াই সল্টলেকে ঢুকে পড়ছে যে কোনও গাড়ি। যেখানে চেকিং হচ্ছে, তার কিছুটা দূরেই হেডলাইট জ্বালিয়ে একটি গাড়িকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। সেই গাড়ি কেন দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার উত্তর খোঁজার চেষ্টাও করলেন না কর্তব্যরত কোনও পুলিশকর্মী।
প্রবেশপথের তল্লাশি অবশ্য ওই একটি জায়গাতেই। রাত যত বেড়েছে, বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় নিরাপত্তা যেন ততই আলগা হয়েছে। এএ ব্লক থেকে কেষ্টপুর খাল বরাবর ডিএল ব্লক, আবার ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল বরাবর ইই ব্লক থেকে বাইপাস কানেক্টর পর্যন্ত কোনও নজরদারির প্রমাণ মিলল না। জে কে সাহা সেতু ছাড়া দু’টি বক্সব্রিজে পুলিশ থাকলেও গাড়ি তল্লাশি করতে দেখা যায়নি।
ব্লকগুলির ভিতরে গ্রিন পুলিশের দেখা মেলেনি। এক ঘণ্টারও বেশি সময়ে কোনও পুলিশকর্মীর দেখা মেলেনি রাজারহাট বক্সব্রিজ হয়ে গোটা পাঁচ নম্বর সেক্টরেও। রাতের শিফ্ট শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বলেন, “এমনিতেই চার দিক নিস্তব্ধ, কোনও গাড়ি দাঁড় করাতেও ভয় লাগে। মাঝেমধ্যে পুলিশ থাকে, রোজ দেখতে পাই না।”
নিউ টাউন রোডে আবাসিক এলাকায় মোটরবাইকে হেলমেটবিহীন একাধিক যুবক ঘোরাফেরা করছিলেন। এখানেও পুলিশের গাড়ির দেখা মিলল না। যাত্রাগাছি মোড় বা নারকেলবাগান মোড়ে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ পুলিশের টহলদারি জিপ চোখে পড়েছিল। রাত বাড়তে তা-ও উধাও।
নিউ টাউন ও সেক্টর ফাইভ এলাকায় অসংখ্য অফিসের কর্মীরা মধ্যরাত পর্যন্ত অফিসে থাকেন। অফিস থেকে বেরিয়ে তখন কার্যত নিরাপত্তাহীন ভাবেই ফিরতে হয় বলে অভিযোগ করলেন ওই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী একাধিক কর্মী।
অথচ গত এক বছরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুনের মতো একাধিক অপরাধ ঘটেছে। কমিশনারেট হওয়ার আগে রাতভর এ সব এলাকায় নজরদারি নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল। কিন্ত কমিশনারেট হওয়ার পরে এক বছরের দোরগোড়াতেও এমন হাল কেন? বিধাননগর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সদর) সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগের থেকে নজরদারি বেড়েছে। পুলিশি টহলদারির জন্য বিভিন্ন জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেখানে আমাদের টহলদারি ভ্যান থাকে। তবে সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.