শহরে আদিবাসী সমাবেশ
মাওবাদী এখন তৃণমূলের ঘরের বৌ: সূর্যকান্ত
ঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কৃতিত্ব দাবি করেন, এ বারে তাকেই আক্রমণ করল সিপিএম। জঙ্গলমহলের শান্তির নেপথ্য কাহিনি উল্লেখ করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ বার সরকারকে কোণঠাসা করতে সক্রিয় হল তারা। এ দিন এক সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “মাওবাদী নেত্রী রাজ্যের শাসক দলের ঘরের বৌ হলে জঙ্গলমহলে শান্তি তো আসবেই!” বিধানসভার ভিতরে রাজ্যের প্রাক্তন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং আদিবাসী মহিলা বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকেও রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার করা শুরু হল প্রধান বিরোধী দলের তরফে।
‘পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চে’র কেন্দ্রীয় সমাবেশ উপলক্ষে রবিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আদিবাসী জমায়েত করে সিপিএম। সমাবেশে ভিড় হয়েছিল ভালই। বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেনে এবং বাসে এসে, কলকাতার বুকে মিছিল করে নিজস্ব সংস্কৃতির ছবি শহরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন আদিবাসীরা। একের পর এক রঙিন মিছিল ধর্মতলায় যত পৌঁছেছে, সিপিএম নেতৃত্বের স্বস্তি তত বেড়েছে। কলকাতায় দাঁড়িয়ে আদিবাসী অধিকার মঞ্চের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের দাবি এবং ন্যায্য অধিকারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে তৃণমূলের সরকারকে কড়া বিদ্রোহের মুখে পড়তে হবে।
নাচের তালে
রবিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সিপিএম প্রভাবিত আদিবাসী
অধিকার মঞ্চের সমাবেশে শিল্পীদের সঙ্গে বিমান বসু। —নিজস্ব চিত্র
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক তথা সিপিএম সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কের নেতৃত্বে আদিবাসী মঞ্চের প্রতিনিধিরা ২২ দফা দাবি নিয়ে এ দিন রাজভবনেও গিয়েছিলেন। তবে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন রাজভবনে না-থাকায় আধিকারিকদের হাতেই দাবিপত্র দিয়ে আসতে হয়েছে তাঁদের।
তৃণমূলের জমানায় আদিবাসীরা যে ভাবে জমি, পাট্টা এবং বনাঞ্চলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তার প্রতিবাদ করতে গিয়েই জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি উল্লেখ করেন সূর্যবাবু। তাঁর বক্তব্য, মাওবাদীরা ঝাড়খণ্ড থেকে এসে খুন-খারাপি করে পালিয়ে যেত। তৃণমূলই তখন তাদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং এখন তারা অনেকেই তৃণমূল করছে। সূর্যবাবুর কথায়, “আদিবাসী নার্স, ডাক্তার, শিক্ষকদের যারা খুন করেছে, তারা এখন তৃণমূলের নেত্রী! সামনে-পিছনে গাড়ি নিয়ে পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে! গোলমাল থাকবে কেন?”
মমতার জমানায় আত্মসমর্পণকারী সুচিত্রা মাহাতোর নাম না-করেই বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ, “যে মাওবাদী নেত্রী ডজন ডজন খুন করেছেন, তিনি এখন তৃণমূলের ঘরের বৌ হয়েছেন! তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে বিয়ে করেছেন। সেজেগুজে মহাকরণে এসে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন!” বাম জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী শম্ভু মাণ্ডি-সহ সিপিএম নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নিয়ে পুলিশ যে এখন মাওবাদী থেকে তৃণমূলে আসা লোকজনের সুরক্ষার বন্দোবস্ত করছে, তা নিয়েও সরব হয়েছেন সূর্যবাবু।
আদিবাসী সমাবেশের মঞ্চ থেকেই সিপিএম বিধায়ক দেবলীনাদেবী বলেছেন, “সরকার পরিবর্তনের পরে গরিব, আদিবাসী এবং বিশেষত মহিলাদের উপরে যে ঘটনা ঘটছে, আমাদের নতুন করে এখন ভাবতে হবে।”
শাসক দলের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে বিধানসভার মধ্যেই তাঁকে কী ভাবে আক্রান্ত হতে হয়েছিল, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর উপস্থিতিতেই সেই ঘটনার কথা বলেন রানিবাঁধের বিধায়ক। বাঁকুড়া জেলারই বিধায়ক এবং আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন কিস্কু জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার একের পর এক প্রতিশ্রুতি রূপায়ণের কী হাল, তার বিবরণ দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “আদিবাসীরা ব্রিটিশ আমলে অনেক বিদ্রোহ করেছেন। তাঁদের নিয়ে ছেলেখেলা করবেন না! দাবি উপেক্ষা করবেন না!”
আর এ সবের শেষে আদিবাসী মঞ্চের উপদেষ্টা হিসাবে বিমানবাবুর ঘোষণা, “আদিবাসীরা শান্তিপ্রিয়। উৎসব করেন, আনন্দ করেন। কিন্তু দাবি না-মানলে, ন্যায্য পাওনা না-দিলে উত্তেজিত হয়ে বিদ্রোহ (উলগুলান) করে দিলে কোনও সরকার আটকাতে পারে না!” পাশাপাশিই দলীয় কর্মীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-আদিবাসী সব মিলে মহা লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। এই প্রেক্ষাপটেই আজ, সোমবার থেকে আলিমুদ্দিনে বসছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। বস্তি, সমবায়, আদিবাসী সাম্প্রতিক কালে যে সব নতুন সংগঠনকে রাজ্য স্তরে সক্রিয় করা হয়েছে, তাদের কাজের প্রাথমিক পর্যালোচনা ওই বৈঠকে উঠে আসার কথা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.