বাবা জ্ঞান দিয়ো না
আ মরি নতুন বাংলা ভাষা

—কেমন বগলিং দেখছিস!
—মনে হয় কেএলপিডি।
—চল ফুলটাস কি গোলি লে।


ইউনিভার্সিটির লাল বেদিতে বসে কথা বলছিল তিন মেয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই এই কথোপকথনের অর্থ বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। এটাই তো এখন জেন ওয়াই-য়ের ভাষা। টুইটার, চ্যাট, এসএমএস পেরিয়ে এখন এই ভাষাতেই কথা বলছে জেন ওয়াই-য়ের সদস্যরা।
“আমি যখন প্রথম কলকাতায় আসি পড়তে, হোস্টেলে সিনিয়রদের প্রায় কোনও কথাই বুঝতে পারতাম না,” বলছিল সোশিওলজির ছাত্রী দেবরূপা, “এখন আমার কথাও যে আগের প্রজন্মের কেউ বুঝবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক।”
শুরুটা হয়েছিল টেক্সট মেসেজ দিয়ে। ইংরেজি হরফে বাংলা, তার পর সেটাও সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। সেটাই তার পর ঢুকে গিয়েছে কথ্য ভাষায়। এখন তো এলওএল বলাটা হাসির থেকেও বেশি জনপ্রিয়।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই পপুলার কালচারেও ঢুকে গেছে এই ভাষা। টিভি, সিনেমা কী গান, সবেতেই তাই এখন নেক্সট জেন ভাষারই ব্যবহার।
“এই যেমন কথায় কথায় অস্যামশালা বলা, এটা তো এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলল আর এক জেন ওয়াই সদস্য শুভদীপ, “সব থেকে মজাদার হল নেগেটিভ বাক্য করা। যেমন ধর, আমি যাব। এটাকেই নেগেটিভ করা যায়, আমি ** যাব।”
স্ল্যাং বা গালাগালি যে জেন ওয়াই-য়ের ভোকাবুলারির একটা বড় অংশ, সেটা মানছেন অনেকেই। “স্ল্যাং সব সময়ই ছিল। ওটা তরুণ প্রজন্মের কথাবার্তায় উঠে আসবেই,” বলছিলেন মনস্তত্ত্ববিদ জয়রঞ্জন রাম, “তবে পপুলার কালচারে সেটা চলে আসা মানে কিন্তু কোথাও একটা লেজিটিমেসি দেওয়া হয়।”
পপুলার কালচারে স্ল্যাং-য়ের ব্যবহারের সব থেকে বড় উদাহরণ অবশ্যই সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘২২শে শ্রাবণ’। ফেসবুকে তো রীতিমতো জোকস্ চালু হয়েছিল, ‘২২শে শ্রাবণ’ একটা পারিবারিক সিনেমা। অনেক বাবা-মা আছে সংলাপে! সৃজিত মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমার সব ছবির বিষয়ই জীবন থেকে নেওয়া। বিভিন্ন লোকের ভাষা বিভিন্ন হবে এটা স্বাভাবিক। যাদবপুর আর প্রেসিডেন্সির মধ্যে কী ভবানীপুর আর গড়িয়ার মধ্যেও সেই তফাত। আর সেটাই আমার সিনেমায় থাকে। না হলে তো জেন ওয়াইয়ের কাছে গ্রহণযোগ্যই হবে না সিনেমা।
‘আওয়ারা’ ছবির সংলাপ
জিৎ: মারব গুড় দিয়ে রুটি,
চিনি দিয়ে চা, ফু দিয়ে খা
‘আমরা’ ছবির সংলাপ
রুদ্রনীল: তোর পুটকিটা আমি ধরতে পেরেছি।
পরমব্রত: কী কী কী...
রুদ্রনীল: ... মড মেয়েদের তুই কী করে
বুঝবি তোর তো বোঁদে শুকিয়ে ল্যাংচা
তবে শুধু গালাগালি নয়, শরীর নিয়ে কথা বলতেও আর ‘কান বেড় দিয়ে নাক’ ধরছেন না এই সময়ের পরিচালকেরা। ‘আমরা’ সিনেমায় যেমন মৈনাক ভৌমিক সাবলীল ভাবে ব্যবহার করেছেন ‘শোয়া’, ‘লাগাতে পারে’-র মতো শব্দ।
তবে জেন ওয়াই-য়ের ভাষা মানেই যে শুধু স্ল্যাং, তা কিন্তু একেবারেই নয়। কোনও ভাষা বেঁচে থাকে নতুন নতুন শব্দের সংযোজনে। সেটা আসতে পারে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং থেকে বা জনপ্রিয় কোনও গান থেকে।
এন কে সলিলের স্ক্রিপ্টে যেমন অবলীলায় চলে আসে ‘ঝিঙ্কু’, ‘সুইটু’, ‘সেন্টু’-র মতো হিন্দি মেশানো বাংলা। “কোনো শব্দই আমার তৈরি করা নয়। রাস্তা-ঘাটে যা শুনি সেটাই ঢুকিয়ে দিই স্ক্রিপ্টে। আমার দর্শক জেন ওয়াই। ওদের সঙ্গে কানেক্ট করতে গেলে এই ‘মকটেল’ ভাষাই দরকার। তা না হলে তো ওরা রিলেট করতে পারবে না। এই তো সুইটু শব্দটা, ওটা কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ডের থেকে পাওয়া। ও বলেছিল মিষ্টি যদি মিষ্টু হতে পারে, সুইট সুইটু হবে না কেন?” বললেন তিনি।
আগের শব্দ নতুন শব্দ
ব্লোয়িং
সুইট
দেখা করা
টপ ফরোয়ার্ড
পাতলা হ
পেট ফেটে গেল
দাগা
পয়েন্ট
কেটে পড়
বগলিং
সুইটু
অ্যাপো
ঝিঙ্কু
ফুলটাস খা
এলওএল
সেন্টু
পুটকি
সটক লে
ভাষাতত্ত্ববিদ ডক্টর পবিত্র সরকার বললেন, “এক এক প্রজন্ম যে এক এক শব্দের সৃষ্টি করে এগুলো সবই নিজের গোষ্ঠীর এক্সক্লুসিভ দেওয়ার চেষ্টা। আমাদের সময় যেমন ছিল ‘ফান্ডা’, ‘টপ ফরোয়ার্ড’। তেমনই এই প্রজন্ম তৈরি করছে ‘সেন্টু’, ‘অ্যাপো’-র মতো শব্দ।”
“দেখো একটা মানুষ কিন্তু এক এক জায়গায় এক এক রকম ভাবে কথা বলেন,” বলছিল অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়, ভাষা নিয়ে এমফিল করলেও আদতে সে জেন ওয়াই-য়েরই সদস্য, “বন্ধুদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলি, এম ফিল পেপার তো আর সেই ভাষায় লিখব না। বন্ধুদের সঙ্গে তো কথায় কথায় গালাগালি ব্যবহার করি, সেমিনারেই আবার চোস্ত বাংলা।”
ভাষার ব্যবহার নিয়ে কিন্তু বরাবরই বিস্তর গবেষণা চলেছে অ্যাকাডেমিক মহলে। সোশিও লিঙ্গুইস্টিক বা সমাজ ভাষাবিজ্ঞান ভাষার ব্যবহার নিয়েই গবেষণা করে। প্রেসিডেন্সির সোশিওলজি বিভাগের প্রধান অংশুমান সরকার বললেন, “জেন এক্স আর জেন ওয়াইয়ের ভাষার সব থেকে বড় যে তফাত তা হল পিয়ার প্রেশার। অন্য ভাষাভাষীর বন্ধুত্বটাও এখন বেশ স্বাভাবিক। এটা আগের জেনারেশনে ছিল না। তাই এই প্রজন্মের বাঙালির ভোকাবুলারিতে দিব্যি ঢুকে পড়েছে হিন্দি শব্দ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.