হুল্লোড় |
রাজীব গাঁধী বলিউড আর আমাদের বুম্বা
শেষ অবধি ছবিটা কিন্তু হল না। কেন? অলিখিত ইতিহাস জানাচ্ছেন
পরিচালক সুজিত সরকার। প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত-কে |
শ্রীলঙ্কা ১৮ মে, ২০০৯
প্রভাকরণ এক লহমায় নিউজ হেডলাইনে উঠে এলেন। প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলে এলটিটিই সুপ্রিমোর মৃত্যুর খবরটা ছড়ানো মাত্রই। পার্শ্ববর্তী তথ্যপ্রমাণ থেকে অনুমান করা গেল যে তাঁর মৃত্যুর কারণ এক গভীর হেড ট্রমা। হয়তো খুব কাছ থেকে গুলি করার দরুন। কিন্তু সঠিক কারণটা আজও বোঝা যায়নি।
বলিউড ২০১২
পরিচালক সুজিত সরকার তাঁর নতুন ছবির শ্যুটিং শুরু করলেন। নাম ‘জাফ্না’। ছবিটি প্রযোজনা করছেন জন আব্রাহাম। প্রাথমিক কানাঘুষোয় শোনা যায় সিনেমাটার মূল বিষয়বস্তু এলটিটিই এবং রাজীব গাঁধীর হত্যাকাণ্ড। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় নাকি অভিনয় করার কথা ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের? কিন্তু ‘ভিকি
|
সুজিত সরকার |
ডোনর’-এর বক্স অফিস সাফল্যের কিছুটা মূল্য সুজিতকেও দিতে হল। রাতারাতি নাম বদলে নতুন নামকরণ হল ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’। ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর চিত্রনাট্যেরও নাকি অনেকটাই বদলাতে হল। সেন্সর বোর্ডের আপত্তি এবং রাজনৈতিক চোখরাঙানির ভয় এর জন্য খানিকটা দায়ী। সুজিতের আর একটা সিনেমা, ‘শুব্যাইট’, এখনও বেড়াজালে আটকে। যে কোনও বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি করার ঝুঁকি অনেক। ‘নিষিদ্ধ’ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই চিত্রনাট্য খানিকটা পাল্টায়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অস্বীকার করেন অভিনয় করতে। সুরকার শান্তনু মৈত্রকে সুর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কেউ কেউ বলেন, রাজনৈতিক সিনেমা ছেড়ে ফিল্মটা এখন নিখাদ প্রেমের গল্পে পরিণত হয়েছে। অনেকের ধারণা, একটা বাণিজ্যিক থ্রিলার হয়ে গিয়েছে। এত সব কিছুর মধ্যে সেলুলয়েডে নিঃশব্দ মৃত্যু হল প্রভাকরণের।
সুজিত অবশ্য এই সব জল্পনা-কল্পনা এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বললেন এরকম কোনও হস্তক্ষেপের ঘটনাই নাকি ঘটেনি। আর একবার সুযোগ পেলে তিনি এখন যেভাবে সিনেমাটা বানাচ্ছেন সেই ভাবেই নাকি বানাবেন।
তাঁর সঙ্গে কথোপকথন...
|
জোর গুঞ্জন যে প্রোডিউসার জন আব্রাহাম নিজে ঠিক করে দিয়েছেন কে আপনার ছবিতে অভিনয় করবে?
কে বলল এ সব? জন কাস্টিং নিয়ে কখনও কথা বলে না। বুদ্ধিমান নায়ক। আবার অভিনয়ও করছে এই সিনেমায়। ও শুধুমাত্র সিনেমার মার্কেটিংয়ের এর ব্যাপারে মতামত দেবে। একজন পরিচালক হিসেবে আমি কোন অভিনেতাকে কোন চরিত্রে নেব তা ঠিক করার পূর্ণ স্বাধীনতা আমার আছে। জনের সঙ্গে কাজ করে একটা মজা আছে। ওর একটা ‘হাঙ্ক’ ইমেজ প্রাধান্য পায়। তবে আমার ওকে ভীষণ ‘পারসেপটিভ’ মনে হয়। কিছু বললেই ও সেটা চট্ করে ধরে নেয়। সিনেমায় ও একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার কখনও শ্যুট করতে গেলে যদি একটু মাসল দেখা যায়, ও বলে, ‘দাঁড়ান নর্ম্যাল করে দিই। বেশি হিরো হিরো লাগছে।’
কলকাতায় কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে, জন একটা ‘ক্লোজড ডোর’ মিটিং-এ স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন প্রোডিউসার হিসেবে ওনার কী শর্ত....
গুজবে কান দেবেন না। আমি দিই না।
এই ইন্ডাস্ট্রিতে তো ষাট শতাংশ সময়ই যা রটে তার কিছুটা ঘটে। জনের কী কোনও হাত ছিল না আপনার সিনেমার নাম বদলানো নিয়ে?
শুরুতে সিনেমাটার ‘ওয়ার্কিং টাইটেল’ ছিল ‘জাফনা’। আমরা অনেকগুলো নাম নিয়ে ঝাড়াই-বাছাই করছিলাম। ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ নামটা অনেক বেশি স্মার্ট। শুনতেও যেমন ভাল, তেমন চিত্রনাট্যের সঙ্গেও মানানসই।
‘জাফনা’ থেকে ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ হওয়ার জন্য সিনেমাতে আর কি পরিবর্তন এনেছেন?
এটা একটা বাণিজ্যিক স্পাই থ্রিলার। যার পটভূমি শ্রীলঙ্কা।
একটা রাজনৈতিক সিনেমা থেকে একটা বাণিজ্যিক স্পাই থ্রিলার ছবি! কতটা আপস করলেন মনে হচ্ছে?
আমি কখনওই এই সিনেমার চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করিনি। জানি না কেন গুজব ছড়িয়েছে ছবিটার কনটেন্ট নিয়ে।
|
|
প্রথমে বলা হয়েছিল যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে রাজীব গাঁধীর মতো একটা চরিত্রে ভাবা হচ্ছে...
রাবিশ! একদম বাজে কথা। ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’র গল্প একেবারেই কল্পনাপ্রসূত। রাজীব গাঁধীর মতো একটা চরিত্র সেখানে কী করে থাকবে?
তা হলে প্রভাকরণের এর কোনও চরিত্রই নেই সিনেমার মধ্যে?
নো কমেন্টস। স্টুডিওর সঙ্গে চুক্তির দরুন আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।
আপনি কি সিনেমার মধ্যে এলটিটিই-র আন্দোলন দেখিয়েছেন?
না। কোনও এলটিটিই-র বিষয় নেই। এটা একটা বাণিজ্যিক স্পাই থ্রিলার।
প্রসেনজিৎ তো বলেছেন যে, সিনেমা আর স্ক্রিপ্ট দুটোই বদলে যাওয়ার জন্যই নাকি তিনি ছবিটি করছেন না। এত পাল্টালেন কেন?
আমি একটা বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করে সিনেমা বানাই। চিত্রনাট্য লেখার পরেও আমি সেটাকে ডেভেলপ করি। চার নম্বর ড্রাফ্ট-এর ভিত্তিতে শ্যুটিং করছি এখন। চিত্রনাট্য এতটুকুও বদলাইনি। বরং আরও পরিণত করেছি ওটাকে। প্রথম থেকেই বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু থাকবেন কিনা সেটাতো বুম্বাদারই সিদ্ধান্ত। আমি ওঁর সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।
তাহলে প্রসেনজিৎ-এর ভূমিকায় এখন কে অভিনয় করছেন?
একদম নতুন এক অভিনেতা।
তার মানে আপনার পরিণত চিত্রনাট্যে ‘সাংহাই’ ফেরত প্রসেনজিতের মতো একজন দক্ষ অভিনেতার কোনও প্রয়োজন নেই?
বুম্বাদার নিশ্চয়ই নিজস্ব একটা লজিক থাকবে ছবিটা না করার পেছনে। একজন পরিচালক হিসেবে আমি এমন একটা চিত্রনাট্য করব যার সঙ্গে আমার সিনেমার উদ্দেশ্য এবং ভাবনা দুটোই খাপ খায়। চরিত্র বাছাই করার আগে প্রচুর অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। বুম্বাদার সঙ্গেও এই প্রজেক্টটা নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু কোনও সই-সাবুদ হয়নি। আর আমার সঙ্গে ওঁর সম্পর্কও খুব ভালো। আরও অনেক প্রজেক্ট নিয়ে কথা চলছে আমাদের। |
|
কখনও শ্যুট করতে গেলে
যদি একটু
মাসল দেখা যায়, জন বলে, ‘দাঁড়ান
নর্ম্যাল করে দিই। বেশি হিরো হিরো লাগছে।’ |
|
|
নার্গিস ফকরিকে নেওয়ার পরে অনেকেই বলছেন ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ এখন নাকি জাস্ট একটা প্রেমের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে...
না। এটা একটা স্পাই থ্রিলারই।
‘বন্ড’ সিনেমার ভারতীয় সংস্করণ বানাচ্ছেন? মৎস্যকন্যা হয়ে নার্গিস কি সমুদ্রমন্থন করবেন?
(হাসি) না না। ও সব না। নার্গিস অভিনয় করছেন এক বিদেশি সাংবাদিকের ভূমিকায়।
আইটেম নাম্বারও আছে?
হ্যাঁ অবশ্যই। চারটে গান আছে। শান্তনু মৈত্র সুর করছেন। কিন্তু কোনও আইটেম নাম্বার নেই। খুব কম সংখ্যক লোকই জানেন নার্গিস তাঁর প্রথম ভারতীয় বিজ্ঞাপনে আমার সঙ্গে কাজ করেন। লন্ডনে ওঁকে নিয়ে একটা বিজ্ঞাপন শ্যুট করেছিলাম। এর পরই ইমতিয়াজ ওঁকে নিয়ে কাজ করে ‘রকস্টার’ সিনেমায়। বক্স অফিসে জনপ্রিয়তার জন্যেই যে নার্গিসকে নিয়েছি তা কিন্তু নয়। এই তো সেদিন কলকাতার একটা পার্টিতে গিয়ে অরিজিৎ দত্তকে বললাম, আমার ছবিতে অভিনয় করতে।
ক্যুইজমাস্টার সিদ্ধার্থ বসু তো আপনার প্রাক্তন বস। তাঁকে পরিচালনা করার কাজটা কতটা কঠিন?
দীর্ঘকাল সিড ক্যামেরার সামনে কোনও কাজ করেননি। কিন্তু উনি একজন দারুণ থিয়েটার অভিনেতা। আমার মনে যাই থাক সেটা ওঁকে অভিনয় করে দেখাতে হয়। শ্যুটিং শুরু করার আগের দিন রাতে উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তোর মনে হয় আমি পারব? তুই চাইলে অন্য কাউকে নিয়ে নে।” কিন্তু সেটে ইন্টেলিজেন্স অফিসারের চরিত্রে ওঁকে দারুণ মানিয়েছিল। এখনও শ্যুটিং-এর অনেকটাই বাকি। কেরলে শ্যুট করছি। এক দিন তো শ্যুটিং-এর মধ্যে একপাল হাতি ঢুকে গেল। সে কী ভয় আমাদের। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে সবাই ছুট! এখন শ্যুটটা ঠিকঠাক হয়ে গেলেই শান্তি। |
|