সরকারি অনুদান আর মিলছে না। তাই মুম্বইয়ের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া সতেরো জন মহিলাকে ফিরিয়ে দিল রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের অনুদানে চলা একটি হোম। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে প্রায় ঘন্টা সাতেক বুঝিয়েও ওই হোম কর্তৃপক্ষকে রাজি করানো যায়নি। অগত্যা ওই মহিলাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে হুগলির উত্তরপাড়ার অন্য একটি সরকার অনুমোদিত হোমে।
রাজ্যের কোষাগারের হাঁড়ির হালের চিত্রটা অনেক দিনই সামনে এসে পড়েছে। নারী-শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের হাত ধরে তা আরও একবার সামনে এসে পড়ল।
নভেম্বরে মুম্বই থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বিভিন্ন বয়সী ৪৫ জন মহিলাকে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন বাংলাদেশিও ছিলেন। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়শ্রী দাশগুপ্ত বলেন, “মুম্বইয়ের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ওই মহিলাদের নভেম্বরে এ রাজ্যে আনা হয়। ঠাঁই হয় উত্তরপাড়ার হোমে।” কিন্তু সেখানে এত জন মহিলার স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না বলে বৃহস্পতিবার ১৭ জনকে বদলি করা হয় তমলুকের ওই হোমে। কিন্তু পৌঁছন মাত্র হোম কর্তৃপক্ষ জানান, একসঙ্গে অতজনকে রাখা সম্ভব নয়।
কেন? হোমটি যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালায় তার সম্পাদক যোগেশ সামন্তের প্রশ্ন, “টাকা কোথায় যে অত জন মহিলাকে রাখব?” তাঁর দাবি, গত তিন বছর সরকারি অনুদান অনিয়মিত। তার উপর গত ৯ মাসের মধ্যে পাঁচ মাসের টাকাই পাঠায়নি সরকার। তিনি বলেন, “টাকার অভাবে হোমের পরিকাঠামো তৈরি করা যায়নি। প্রশাসনের চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমরা ৯ জনকে রাখতে রাজি হয়েছিলাম।”
নারী-শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর দাবি, “বড়জোর এক-আধ মাস দেরি হতে পারে, তা বলে সরকার কোনও হোমেরই অনুদান বন্ধ করেনি।” সরকারি অনুদান থমকে যাওয়া নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমন হাওলাদার মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “ওই মহিলাদের তমলুকের হোমে নিয়ে আসার আগে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি, এটুকুই বলতে পারি।” এই দর কষাকষির মাঝে ওই মহিলারাও বেঁকে বসেন। দাবি তোলেন, ৯ জনকে নয়, যেখানেই রাখা হোক তাঁদের একসঙ্গে রাখতে হবে। পুলিশের গাড়িতেই কথাবার্তা চলে। হোম কর্তৃপক্ষও স্পষ্ট করে দেন, সবাইকে রাখা সম্ভব নয়। পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ। সবাইকেই ফিরিয়ে আনা হয় উত্তরপাড়ায়। |