তৃণমূলের সন্ত্রাসে পঞ্চায়েতের যে সব আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়া যাবে না, সেখানে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করবে সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই বার্তা দিতে চলেছেন নেতৃত্ব। কাল, সোমবার থেকে আলিমুদ্দিনে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পেশ করবেন জেলার নেতারা।
সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, প্রত্যেক জেলার কিছু এলাকায় সন্ত্রাস চলছে। কিন্তু তার জন্য ময়দান ছেড়ে দেওয়া হবে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের কথায়, “তৃণমূল বোমা মারবে বলে ভয়ে যদি দলের নেতারাই ময়দান ছেড়ে চলে যান, তা হলে মানুষ ভরসা পাবে কী ভাবে? কমিউনিস্টরা এ ধরনের কাজ করতে পারে না।” কিন্তু যেখানে সন্ত্রাসের ভয়ে কেউ সিপিএমের প্রার্থী হতে চাইবেন না, সেখানে কী হবে? গৌতমবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “প্রতীক ছাড়াও তো প্রার্থী হয়!” অর্থাৎ সেখানে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করবে সিপিএম।
সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। গত বছর বহু জায়গায় কৃষকরা ফসলের দাম না পেয়ে অভাবি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। বেড়েছে কৃষক-আত্মহত্যা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কৃষক নেতা মদন ঘোষ ও নৃপেন চৌধুরীরা মনে করছেন, এ বছরও পরিস্থিতি একই থাকলে গ্রামের যে সব মানুষ অনেক আশা নিয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের একটা অংশের মোহভঙ্গ ঘটবে। এই অবস্থায় সন্ত্রাসের ভয়ে বামেরা লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে দিলে কংগ্রেসই গ্রামবাংলায় কৃষকের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরে সেই সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব জানেন, তৃণমূলের উপর বিরক্ত হতে শুরু করলেও মানুষ এখনও বামমুখী হননি। এই পরিস্থিতিতেও ক্ষুব্ধ কৃষকরা যাতে কংগ্রেসকে তৃণমূলের বিকল্প না ভাবেন, সেই উদ্দেশ্যেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যত বেশি সম্ভব আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, ছ’মাস আগেও পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। তখন গুটিয়ে ছিলেন দলের নেতারা। পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেনের কথায়, “পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে অবস্থার আরও কিছুটা পরিবর্তন হবে। সেই অবস্থার সুযোগ নিতে হবে।” এই মূল্যায়ন থেকেই রাজ্য কমিটি প্রত্যেক জেলা নেতৃত্বের কাছে জানতে চেয়েছে, সন্ত্রাসের কারণে কোথায় কোথায় প্রার্থী দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। নয়া সংরক্ষণ নীতিতে পঞ্চায়েতে প্রার্থী পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা-ও দ্রুত হিসেব করতে বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করবে আলিমুদ্দিন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের উপরে লাগাতার চাপ সৃষ্টি করা হবে। সেই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রত্যেক বাড়িতে সই সংগ্রহ, নিচুতলায় শরিকদের সঙ্গে আলোচনাকেও গুরুত্ব দিতে বলা হবে রাজ্য কমিটিতে। কর্মীদের চাঙ্গা করতে কলকাতা জেলা কমিটি বিভিন্ন দাবিতে ১০ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনার ময়দানে সভা করবে। |