আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন শুরু হতে চলেছে রাজ্যের স্কুলে। কিন্তু তার আগেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ওই ক্লাসে ছাত্রভর্তি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে। সেখানে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে ছ’বছরের শিশুদের প্রাক প্রাথমিক স্তরে ভর্তি করা হবে। অন্যান্য বছরে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় থাকলেও এ বার তা নেই। এর জেরেই ক্ষুব্ধ অনেক স্কুল-প্রধান এবং অভিভাবকেরা।
কেন্দ্রীয় শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, ছ’বছরের কম বয়সীদের জন্য প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য সরকারগুলিকে। আইন মেনে প্রাক প্রাথমিক ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর। সেই মতো সরকারি নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে যে শিশুদের বয়স পাঁচের বেশি কিন্তু ছয়ের কম, তারা প্রাক প্রাথমিক ক্লাসে ভর্তি হতে পারবে।
সরকারের এই নির্দেশকে কেন্দ্র করেই বিভ্রান্তি। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, “গত বছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ছেলেমেয়েরা। সে বারও ভর্তি সংক্রান্ত যে নির্দেশিকা বেরিয়েছিল, সেখানে পাঁচের জায়গায় ৪ বছর ৯ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এ বার কোনও ছাড় দেওয়া হল না।”
তা ছাড়া, গত বছর পাঁচ বছরে যারা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে, এ বার ছ’বছরে তারা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়বে। আবার সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, এ বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে ছ’বছর বয়সীরা। একই বয়সী দু’জন পড়ুয়া দু’টি ভিন্ন ক্লাসে পড়বে। এর জেরে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যদিও স্কুলশিক্ষা দফতরের ব্যাখ্যা, শিক্ষার অদিকার আইন মেনেই ছ’বছরে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিয়ম চালু করতে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক-সহ অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেক স্কুল প্রধানের। টাকি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড (বয়েজ) স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরেশকুমার নন্দ বলেন, “ভর্তির বয়সে হঠাৎ করে পরিবর্তন না ঘটিয়ে আস্তে আস্তে সেটাকে পাল্টালে ভাল হত। একই বয়সী দু’জন ছেলে উঁচু-নীচু ক্লাসে পড়বে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। তা ছাড়া, যে শিশুর পাঁচ বছর হতে মাত্র ২-৩ মাস বাকি রয়েছে, তারা এ বছর প্রাক প্রাথমিকে ভর্তির সুযোগ পাবে না। কয়েক দিন বা মাসের জন্য তাদের একটা বছর নষ্ট হবে? এটা কেমন নির্দেশ!”
স্কুলশিক্ষা দফতর অবশ্য জানিয়েছে, কোনও স্কুল চাইলে বয়সে ছাড় দিতে পারে। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ছাড় দেওয়াটা স্কুলের হাতে। স্কুল চাইলে কিছুটা কম বয়সী শিশুদেরও ভর্তি করতেই পারে।” যদিও সরকারি নির্দেশিকায় এ কথার উল্লেখ না থাকায় তাঁরা ছাড় দিয়ে ছাত্রভর্তি করবেন না বলেই জানিয়েছেন অধিকাংশ স্কুল-প্রধান।
পাশাপাশি, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়স নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছে। গত বছর যারা পাঁচ বছরে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে, এ বছর তাদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ছ’বছরে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা। তা হলে এই ছাত্রছাত্রীদের কী হবে? স্কুলশিক্ষা দফতর অবশ্য জানিয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই স্কুলে পড়ছে,তাদের জন্য বয়সে ছাড় মিলবে। নিয়ম লাগু হবে যারা নতুন করে স্কুলে ভর্তি হবে, তাদের উপরে। |