|
|
|
|
সরকারের ভূমিকা বাড়ুক, চায় ফিকি |
প্রধানমন্ত্রীর সামনেই জমি বিলে আপত্তি বণিকসভার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রের সর্বশেষ জমি অধিগ্রহণ বিল সংসদে পেশ হওয়ার আগেই বিলটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সামনে প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়ে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল বণিকসভা ফিকি। তাদের অভিযোগ, দু’দিন আগে মন্ত্রিসভায় যে জমি বিল সরকার চূড়ান্ত করেছে, তা যেমন কৃষকদের সহায়ক নয়, তেমনই শিল্পবন্ধুও হয়ে উঠবে না। ফিকি-র সভাপতি রাজ্যবর্ধন কানোরিয়া প্রধানমন্ত্রীকে এ-ও বলেন যে, সর্বশেষ জমি বিলটি তাঁরা এখনও পুরোপুরি জেনেবুঝে উঠতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু সার্বিক বিচার-বিবেচনা না করে এখনই যেন বিলটি পাশ না করে সরকার। জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে শিল্পমহলের উদ্বেগ কাটাতে আজ অবশ্য বিস্তারিত কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়া জমি বিল নিয়ে কানোরিয়া উদ্বেগ জানালেও এই জমি নীতিই ভবিষ্যতে আরও
স্বচ্ছতার সঙ্গে অধিগ্রহণের সহায়ক হয়ে উঠবে।”
সরকারের জমি বিলটি সংসদের চলতি অধিবেশনে এমনিতেই পাশ হওয়ার লক্ষণ নেই। কারণ সময় বাড়ন্ত। বড় জোর সোম বা মঙ্গলবার বিলটি সংসদে পেশ করা হবে। কিন্তু বিলটি পাশ করাতে গিয়ে সরকারকে যে বেগ পেতে হবে, তার ইঙ্গিত এখন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতির কারবারিদের মতে, বিশেষত বিলটি নিয়ে শিল্পমহলের উদ্বেগ সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইবে বিরোধীরা।
বর্তমান জমি বিলটি নিয়ে শিল্পমহলের একাধিক অসন্তোষ রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ইস্পাত, সিমেন্ট উৎপাদনের মতো বড় শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্প সংস্থার পক্ষে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে জমি কেনা কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা বাড়াতে হবে। বর্তমান বিলে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিল্প স্থাপনের জন্য অন্তত ৮০ শতাংশ জমির মালিক যদি জমি বিক্রিতে রাজি হন, তবেই বাকি অধিগ্রহণে হস্তক্ষেপ করবে সরকার। কিন্তু শিল্পমহলের আশঙ্কা, ওই পরিমাণ জমির মালিকের সম্মতি আদায় করা মোটেই সহজ হবে না। শিল্প মহলের বক্তব্য, বহু রাজ্যেই জমির মালিকানা ছোট ছোট অংশে বিভক্ত। ফলে জমি মালিকদের সম্মতি আদায় করতে গিয়েই সময় চলে যাবে। তাই অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা না বাড়ালে শিল্পায়ন সম্ভব হবে না।
তা ছাড়া নতুন বিল অনুযায়ী সরকার যদি অধিগ্রহণে সাহায্য করে, তা হলে সব জমির মালিককেই নতুন পুনর্বাসন ও পুনর্স্থাপন নীতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকী শিল্প সংস্থা যদি সরাসরি কৃষকদের থেকে এক লপ্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি জমি কেনে, তা হলে সে ক্ষেত্রেও পুনর্বাসন ও পুনর্স্থাপন নীতি কার্যকর হবে। তবে সেই ঊর্ধ্বসীমা রাজ্য স্থির করবে। এই শর্তেও ঘোর আপত্তি রয়েছে বণিক মহলের। তাদের বক্তব্য, শিল্পসংস্থা যখন দর কষাকষি করে কৃষকদের থেকে জমি কিনছে এবং বাজার মূল্যেই তা কেনা হচ্ছে, তখন আবার কেন পুনর্বাসন দিতে যাবে তারা? তাতে ব্যবসা আর লাভজনক হবে না। তা ছাড়া ক্ষতিপূরণের অর্থ কুড়ি বছর ধরে অ্যানুইটি হিসেবে দেওয়াও মুশকিল। তা অযথা প্রশাসনিক জটিলতাই বাড়াবে।
সর্বশেষ জমি বিলে এ-ও বলা হয়েছে, পুরনো আইন অনুযায়ী যেখানে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, নতুন বিল পাশ হলে সেই সব নোটিস খারিজ করে দেওয়া হবে। এতে আপত্তি জানিয়ে ফিকি-র বক্তব্য, ৬ মাসের মেয়াদ বাড়িয়ে ২ বছর করতে হবে।
বণিক মহলের অভিযোগ, সরকার এমন জমি বিল তৈরি করেছে, যা শিল্পের পরিপন্থী। এবং তা কৃষি ক্ষেত্রের মজুরদের শিল্পের দিকে আকৃষ্ট করবে না। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানও বাড়বে না। তা ছাড়া বহুফসলী জমি অধিগ্রহণ করার ব্যাপারে যে ভাবে বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তাতে সমস্যাই বাড়বে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে
বহুফসলী জমিই বেশি। তা হলে শিল্প হবে কোথায়। |
|
|
|
|
|