অভিযোগ আনলেন পুরকর্মীদের একাংশ |
|
‘তালিকা’ হিমঘরে পাঠাতে সক্রিয় কিছু প্রোমোটারই
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
|
বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণ ভাঙার অভিযান শুরুর তিন দিনের মাথায় স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এ বার ওই ফাইল দীর্ঘ দিনের জন্য হিমঘরে পাঠানোর জন্য প্রোমোটারদের একটি অংশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, কয়েকজন প্রোমোটার পুর ভবনের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে কথা কার্যত ঘোষণাও করে দিয়েছেন। কয়েকজন পুরকর্মীর অভিযোগ, শীঘ্রই পুরসভায় অফিসার-কর্মী কিংবা মেয়র পারিষদ পর্যায়ে অদল-বদল করে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ফাইলটিকে আপাতত ঠাণ্ডা ঘরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে এক প্রোমোটার দাবি করেছেন। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য বলেন, “পুরসভার অন্দরে কোনও রদবদল হলে সবাই জানতে পারবেন। এখনই কিছু বলার নেই। তবে কোনও শক্তিই বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণ ভাঙার কাজ স্তব্ধ করতে পারবে না।”
মেয়রের ‘বলিষ্ঠ’ বক্তব্য সত্ত্বেও পুরসভার অফিসার ও ইঞ্জিনিয়রদের অনেকেই আস্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ, প্রোমোটারদের একাংশের ‘ঔদ্ধত্য’ তাঁদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। অফিসারদের একাংশ জানান, পুরসভার মেয়র, মেয়র পারিষদরা নির্দেশ দিলে তালিকা ভুক্ত বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণ ভাঙতে বড় জোর সাত দিন লাগবে। এক ইঞ্জিনিয়রের আক্ষেপ, “আমাদের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা হয়। বাস্তবে, আমরা যে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ ছাড়া এক পা চলতে পারব না সেটা সকলের বোঝা উচিত।” পুরকর্মীদের একাংশ জানান, এই মুহূর্তে নানা স্তরে রদবদল হলে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার যাবতীয় প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও প্রোমোটারদের সংগঠনের (ক্রেডাই) তরফে শুক্রবার দাবি করা হয়েছে, তাঁরাও চান তালিকা ভুক্ত সব কটি বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পুরসভা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। কয়েকজন অসাধু প্রোমোটারের জন্য সংগঠনের সুনাম হানি হোক সেটা তাঁরা চান না বলে সংস্থার তরফে পুরসভাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের একাংশের তরফে জানানো হয়েছে, মেয়র পারিষদ পদে রদবদল হলে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধি কিছুটা সময় চাইলে তা জনসমক্ষে গ্রহণযোগ্য হওয়ার সুযোগ থাকবে। এর পরেই ইংরেজি নতুন বছর। বর্ষপূর্তির পরে উত্তরবঙ্গ উৎসব, মাধ্যমিক পরীক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিক ও পঞ্চায়েত ভোট, নানা কারণে ওই বেআইনি নির্মাণের কাজ পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের কয়েকজনের অভিমত।
ঘটনা হল, মাসখানেক আগে পুরসভা বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণ ভাঙার অভিযানে নামে। দু’দিনে তিনটি বাণিজ্যিক ভবন ভাঙা হয়। কিন্তু, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ভবনে বিনা নকশায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ভাঙার ঘোষণা করেও তৃতীয় দিনই পিছু হটে পুরসভা। সব মিলিয়ে প্রথম পর্যায়ে ১৫টি বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণ ভাঙার কাজ স্থগিত হয়ে যায়।
যদিও শিলিগুড়ি পুরসভার তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি নির্মাণ না-ভাঙায় মেয়রের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। পক্ষান্তরে, তাঁর বিরুদ্ধেও এখই ভাবে বেআইনি নির্মাণে মদতের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের মেয়র পারিষদ সীমা সাহা। দুপক্ষের চাপানউতোর চললেও বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ কিন্তু এগোয়নি। শিলিগুড়ির নাগরিক সমাজের তরফে নেতা-কর্তাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের বক্তব্য, “রদবদল কিংবা অন্য কোনও অছিলায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অভিযান দীর্ঘদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কী ভূমিকা নেন সেটাই দেখতে হবে। কারণ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বচ্ছ পুর প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।” অবশ্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, “আমি পুরসভার ব্যাপারে এখনই কিছু বলব না। সব খেয়াল রাখছি। যথাসময়ে যা করণীয় করব।”
এখন সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কবে উদ্যোগী হবেন ও আদতে বেআইনি বাণিজ্যিক নির্মাণগুলি সত্যিই ভাঙা হয় কি না সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় শিলিগুড়ির নাগরিক সমাজ। |