রাজ্যের আর্থিক অনটন নিয়ে নিয়মিত হা-হুতাশ করলেও ভর্তুকির জনমোহিনী নীতি ছাড়ছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যেখানেই ক্ষোভের আভাস মিলছে, সেখানেই সরকারের তরফে ভর্তুকির কথা ঘোষণা করে পরিস্থিতি বাগে আনার চেষ্টা চলছে। এ বার তা দেখা গেল দুধের ক্ষেত্রে। দুধ উৎপাদকদের ক্ষোভ সামাল দিতে তার সংগ্রহমূল্য কিলোপ্রতি দু’টাকা বাড়ানো হল। কিন্তু দুধের দাম বাড়াচ্ছে না রাজ্য সরকার। তার ফলে ফি-বছর রাজ্যকে অন্তত ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা বাড়তি ভর্তুকি দিতে হবে, যার চাপ পড়বে রুগ্ণ কোষাগারের উপরেই।
সরকার সংগ্রহমূল্য না বাড়ানোয় তাঁদের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে, এই যুক্তিতে গত শনিবারই সল্টলেকে দুগ্ধ দিবসের অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ দেখান দুধ উৎপাদকেরা। কার্যত তাঁদের বিক্ষোভের মুখে পণ্ড হয়ে যায় ওই অনুষ্ঠান। তার পরেই শুক্রবার এই ভর্তুকির কথা ঘোষণা করেন প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী। যদিও মন্ত্রীর দাবি, “সংগ্রহমূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে আগেই।” সরকারি এবং মাদার ডেয়ারির জন্য এ মাসের ১ তারিখ থেকেই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
এমনিতেই সরকারি ডেয়ারিতে প্রায় পুরো টাকাটাই ভর্তুকি দেয় রাজ্য। তার পরেও এই বাড়তি ভর্তুকি? প্রশাসনের একটি মহলের বক্তব্য, প্রতিটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করে রাজ্যের আর্থিক বেহাল দশার কথা শোনালেও ভর্তুকির চেনা ছক ছেড়ে বেরোতে রাজি নন। বুধবারই এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের বেহাল আর্থিক দশার দায় বাম সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আগে জানলে (ক্ষমতায়) আসতাম না। নিলাম করলেও কেউ এই সরকার কিনবে না।” আর তার দু’দিনের মধ্যেই দুধের ক্ষেত্রে এই ভর্তুকির ঘোষণা! এর পিছনে পঞ্চায়েত ভোটের অঙ্ক রয়েছে বলেই মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। যদিও মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়াতেই সমবায় দুধের সংগ্রহমূল্য বাড়ানোর দাবি উঠেছে।”
সংগ্রহমূল্য বাড়ালেও সরকারি দুধের দাম না বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মন্ত্রী এ দিন বলেন, “এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।” তা হলে আয় বাড়বে কী করে? দুধের পাশাপাশি দুগ্ধজাত অন্যান্য পণ্যের বিক্রি বাড়িয়ে সরকারি ডেয়ারি ও মাদার ডেয়ারিকে তাদের আয় বাড়ানোর দাওয়াই দিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর দাবি, আইসক্রিম, পনির, পানীয় জল বিক্রি করে মাদার ডেয়ারি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। এ বার বড় বড় আবাসনে মাদার ডেয়ারির বুথ খুলতে অল্প জায়গা দেওয়ার জন্য আবেদন জানাবে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। তা হলে সেখানকার আবাসিকরা ঘরের কাছের সেই বুথ থেকে দুধ, পনির, আইসক্রিম, এমনকী সব্জিও কিনতে পারবেন। সারা রাজ্যে দুগ্ধ ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩৮০০ সমবায় সমিতির কাছ থেকে সরকারের অধীন মিল্ক ফেডারেশন শুখা মরসুমে দিনে গড়ে আড়াই লক্ষ কিলোগ্রাম দুধ কেনে। আর ১৬ মে থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে দুধের বাড়তি জোগানের সময় গড়ে কাঁচা দুধ কেনা হয় দৈনিক তিন লক্ষ কিলোগ্রামেরও বেশি। সরকার দু’টাকা সংগ্রহমূল্য বাড়ানোর ফলে ঘাটতির ন’মাসে উৎপাদকেরা প্রতি কিলোগ্রাম দুধে দাম পাবেন ১৯ টাকা। বাকি তিন মাস পাবেন ১৮ টাকা করে। এর পাশাপাশি মন্ত্রী জানান, হরিণঘাটা ডেয়ারির আধুনিকীকরণের জন্য এ দিনই ১৫ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। |