অস্থায়ী কর্মীদের কাজে টিঁকে থাকার আন্দোলনের জেরে বেশ কিছু দিন ধরেই কর আদায় বন্ধ ২ নম্বর জাতীয় সড়কের তিনটি টোলপ্লাজায়। শুক্রবার থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের শুরুতে ডানকুনি টোলপ্লাজায় রাস্তার একাংশ আটকে অনশন শুরু করলেন কর্মীরা। আজ, শনিবারও তা চলার কথা। যা পরিস্থিতি, তাতে জানুয়ারির আগে টোল আদায় ফের চালুর সম্ভাবনা নেই। গত দু’মাসে ক্ষতির বহর অন্তত ১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
কলকাতা থেকে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান সড়কে টোল আদায় বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা রাজস্বের ক্ষতি তো হচ্ছেই, রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও নানা মহলে সংশয় তৈরি হয়েছে। তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে আন্দোলন হলেও সংগঠনের নেতা তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) ঠিকাদার নিয়োগ করতে না পারাতেই টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কর্মীদের বাধাতেই যে দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সংস্থা কাজ শুরু করতে পারেনি, সে প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। বরং তাঁর দাবি, “ওঁরা কাউকে বাধা দেননি। পথ অবরোধও করেননি। শুধু নিজেদের ন্যায্য দাবিটুকু জানিয়েছেন।”
যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে রাজ্যের অন্যতম সেরা রাস্তা, তার ক্ষতি করে এই ধরনের আন্দোলন শাসকদলের পক্ষে লজ্জার নয়? মলয়বাবুর বক্তব্য, “এতে রাস্তার ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে অন্য কর্মীরা রয়েছেন। সেই কাজ ঠিকই চলছে।” এনএইচএআই সূত্রে জানানো হয়েছে, সারা দেশ থেকে যে টোল আদায় হয়, তার একাংশ দিয়েই মেরামতির কাজ চলে। ফলে কেবল তিনটি প্লাজায় টোল আদায় থমকে থাকলে টাকার জোগান বন্ধ হয়ে যাবে না। তৎক্ষণাৎ প্রভাবও পড়বে না। কিন্তু যে মূল তহবিল রক্ষণাবেক্ষণ খাতে টাকা থেকে যায়, তার ক্ষতি নিঃসন্দেহে হচ্ছেই। |
৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’প্রান্তে হুগলির ডানকুনি ও বর্ধমানের পালশিট টোল প্লাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকেই কর আদায় বন্ধ। দু’টিতেই ১৫৫ জন করে কর্মী কাজ করতেন। আসানসোলের গাড়ুই টোল প্লাজাতেও ২১ নভেম্বর থেকে টোল নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার বদল হলেও সবাইকে বহাল রাখার সঙ্গে গত মাসের বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডও দাবি করছেন পুরনো কর্মীরা। এনএইচআইএ-র হিসেবে, প্লাজা প্রতি রোজ গড়ে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা করে রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। এর পরেও ডানকুনি প্লাজায় আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি সুবীর মুখোপাধ্যায়ের সাফ কথা, “দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ছাড়ব না।”
এনএইচএআই সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুতে একটি সংস্থাকে বেছে টোল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাই এই কর্মীদের নিয়োগ করে। সম্প্রতি ওই সংস্থাকে সরিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে জাতীয় স্তরের একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পুরনো কর্মীরা দাবি করেন, কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা যাবে না। সবাইকে একই বেতনে কাজে বহাল রাখতে হবে। তাতে রাজি না হওয়ায় নতুন ঠিকাদারকে কাজে নামতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়নি। এই নিয়ে টানাপোড়েন চলতে-চলতেই ঠিকাদার সংস্থাটির কাজ শুরু করার নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। মলয়বাবুর বক্তব্য, “ঠিকাদার না থাকাতেই এনএইচএআই টোল আদায় করতে পারছে না। এর জন্য কর্মীরা দায়ী নন।” তিনি জানান, ঠিকাদার নিয়োগের জন্য আগামী ১০ জানুয়ারি নতুন করে দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে এনএইচএআই তাঁদের জানিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই দরপত্র ডাকার চেষ্টা চলছে জানিয়েও সংস্থার চিফ জেনারেল ম্যানেজার (পূর্বাঞ্চল) অজয় অহলুওয়ালিয়া বলেন, “স্থানীয় কর্মীদের বাধাতেই আগের সংস্থাটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারেনি। তাই ফের দরপত্র ডাকতে হচ্ছে।” জানুয়ারিতেই যদি নতুন দরপত্র ডাকার কথা থাকে, নতুন ঠিকাদার কী চান তা জানার আগেই কর্মীরা রাস্তা আগলে আন্দোলনে নেমেছেন কেন? মলয়বাবুর ব্যাখ্যা, “কাজ হারানোর ভয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা রাস্তার এক পাশে বসে আছেন। আমাদের দাবি, নতুন ঠিকাদার যত কর্মী নেবেন তা পুরোনোদের মধ্য থেকেই নিতে হবে। সেই ব্যবস্থা পাকা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” |