|
|
|
|
|
|
 |
নাটক সমালোচনা... |
|
নাট্যমেলার নায়ক |
সাত দিন ধরে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে দশটি নাটকের উৎসব। লিখছেন তাপস সিংহ |
বাংলা নাট্যজগতে আবার মেলা!
আবার নাট্যমেলা এক অভিনেতাকে ঘিরে। দেবশঙ্কর হালদার, ব্রাত্য বসুর পরে এ বার সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়! শিরোনাম- ‘সাত দিন সুরজিৎ’। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে টানা ছ’দিন সুরজিৎ অভিনীত ছ’টি নাটক। সপ্তম দিনে সুরজিৎকে ঘিরে আড্ডা। আয়োজনে ‘নাট্যরঙ্গ’।
এর আগেও এ শহর দেখেছে অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার অভিনীত নাটকগুলিকে নিয়ে সাত দিনে দশটি নাটকের উৎসব। সেটা ছিল ২০১০-এর এপ্রিল। মাঝখানে ‘স্বপ্নসন্ধানী’র আয়োজনে নাট্যকার-অভিনেতা ব্রাত্য বসুকে নিয়েও নাট্যোৎসবের আয়োজন হয়েছিল। আর এ বার সুরজিৎ। দেবশঙ্করের সঙ্গে সুরজিতের একটি মূল পার্থক্য হল, দেবশঙ্কর তাঁর নিজের নাট্যদল ‘নান্দীকার’ ছাড়াও আরও অন্যান্য দলে নিয়মিত অভিনয় করে চলেছেন। কিন্তু সুরজিৎ মূলত অভিনয় করেন তাঁর পুরনো দল ‘নাট্যরঙ্গ’-তেই। তবে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নাট্যোৎসবে সুরজিৎ অভিনীত ছ’টি নাটকের মধ্যে চারটি নাটক ‘নাট্যরঙ্গ’র প্রযোজনায় হলেও দু’টি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন অন্য দলের হয়ে।
সেই ’৮৫ সাল থেকে নাট্যাভিনয়ের যে যাত্রা তিনি শুরু করেছেন, তা কি পূর্ণতা পাচ্ছে শুধু তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই উৎসবে? সুরজিৎ বলছেন, “না, একেবারেই নয়। বরং এই পরিভ্রমণ চলতেই থাকবে। পূর্ণতা কখনও আসে না এক জন অভিনেতার জীবনে। তা ছাড়া, আমিই প্রথম নই। এর আগেও দেবশঙ্কর ও ব্রাত্যকে নিয়ে নাট্যোৎসব হয়েছে। আসলে, এই ধরনের মঞ্চ এক অভিনেতাকে তাঁর নানা স্বাদের ও মাপের অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়। আরও ভাল কাজ করার ইচ্ছে জাগায়।” আর এ ব্যাপারে অভিনয়ের জগতে সুরজিতের বন্ধু ও সহকর্মী দেবশঙ্কর কী বলছেন? “এখনও ওই প্রসঙ্গটা উঠলে আমি লজ্জায় পড়ি। মনে আছে, চার দিকে আমার ছবির মধ্যে অ্যাকাডেমিতে ঢুকতাম মাথা নিচু করে। খুব লজ্জা করত। সত্যি বলতে কী, প্রথম যখন প্রস্তাবটা ওঠে, আমি আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, দর্শক নানা ভাবে দেখতে চান অভিনেতাকে।” দেবশঙ্করের মন্তব্য,“দর্শক এ বারে অভিনেতা ও নাট্যকারের মিশেলে ওকে দেখতে পাবে।”
কী কী থাকছে ‘সাত দিন সুরজিৎ’-এ? ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি গিরিশ মঞ্চে পর পর থাকছে ‘শ্রী শম্ভু মিত্র’, ‘বিনোদিনী কথা’ এবং ‘মিস্টার ভুলু’। আর ৪, ৫ ও ৬ জানুয়ারি মধুসূদন মঞ্চে থাকছে যথাক্রমে ‘বিকেলে ভোরের সর্ষে ফুল’, ‘আত্মকথা’ এবং ‘হ্যামলেট’। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি বাংলা আকাদেমি হলে ‘সুরজিতের সঙ্গে আড্ডা’য় মাতবেন এই প্রজন্মের আর এক অভিনেতা-নির্দেশক কৌশিক সেন।
উচ্ছ্বসিত কৌশিকও, “ব্রাত্য বসুকে নাট্যকার হিসেবে ধরে ‘স্বপ্নসন্ধানী’ ওই কাজটা করেছিল। আমার মনে হয়, থিয়েটারের ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘শোকেস’ করার খুব প্রয়োজন আছে। বস্তুত, ‘বহুরূপী’র দেবেশ রায়চৌধুরী এবং আরও কয়েক জনকে নিয়েও এ ধরনের কাজ করা যায় বলে আমি মনে করি।” সুরজিৎকে নিয়ে এই উদ্যোগ কেন? ‘নাট্যরঙ্গ’র সভাপতি ও নির্দেশক স্বপন সেনগুপ্তের কথায়,“নাট্যরঙ্গ’ ৪০ বছর ধরে নাট্যচর্চা করলেও খ্যাতিমান হয়েছে সুরজিৎ। যদি দলের কোনও ছেলে ভাল কাজ করে, তা হলে সেই কাজটা করতে আপত্তি কোথায়?” ব্রাত্য বসু যেমন মনে করেন,“ভালই হচ্ছে এই কাজ। যে কোনও প্রয়াসই তো এক দিন না এক দিন শুরু হয়। যেমন, ‘ব্রাত্যজন’ নাট্যদলের আরও চারটি শাখা হয়েছে। এটাও তো আগে কখনও হয়নি। সুপ্রিয় দত্তকে নিয়েও এ ধরনের কাজ হওয়া উচিত বলে মনে করি।”
শান্তি ঘোষ স্ট্রিটের বাড়ি থেকে প্যান্ট আর পাঞ্জাবি পরা সাড়ে পাঁচ ফুটের যে চেহারাটা কাঁধে ঝোলা নিয়ে শহরের পথে নামে, তার এই পরিভ্রমণের বৃত্ত কি কখনও সম্পূর্ণ হবে? সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, হবে না! কিন্তু, হয়তো যা জানেন না, তা হল, নিত্যকার নাগরিক-আখ্যানের বাইরে, এ শহর-ও শহর, মফস্সল, গ্রামগঞ্জের আরও অনেক সুরজিৎ-ব্রাত্য-দেবশঙ্করেরা তাঁকে দেখে, তাঁদের দেখেই পথে নামেন, আজও! |
|
|
 |
|
|