|
|
|
|
সমুদ্র ভাঙন রোধে উদাসীন প্রশাসন, আন্দোলনে সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
সমুদ্রের আগ্রাসী জলোচ্ছ্বাসে বিপন্ন দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ উপকূলের অস্তিত্ব। রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূলের সরকার সমুদ্র ভাঙন ঠেকাতে নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল। বাস্তবে কাজ প্রায় কিছুই হয়নি। ‘জলের ধারে বাস’ মানে এখনও ‘ভাবনা বারো মাস’। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমুদ্র উপকূলের ভাঙনকে হাতিয়ার করে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা সিপিএম। ‘সমুদ্র ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি’ নামের আড়ালে নানা কর্মসূচি নিয়েছে তারা। সিপিএমের রামনগর জোনাল কমিটির সম্পাদক আশিস প্রামাণিক বলেন, ‘‘কমিটির পক্ষ থেকে উপকূল জুড়ে স্থানীয় মানুষদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের সামনে অবস্থান-কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
যদিও সমুদ্র ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির এই আন্দোলনকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল পরিচালিত রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত দাস। তিনি বলেন, ‘‘দিঘায় উপকূল ভাঙনের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এর কারণ বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের অপশাসন। বাম সরকার দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদে নিজেদের লোক বসিয়ে কুম্ভীরাশ্রু ফেলা ছাড়া ভাঙন প্রতিরোধে এক ঝুড়ি মাটিও ফেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী যখন সমুদ্র ভাঙন প্রতিরোধ নিয়ে সদর্থক ভূমিকা নিতে চলেছেন তখন সিপিএম সমুদ্র ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির ছদ্মবেশে আন্দোলনে নেমে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে।’’
বস্তুত, এক দিকে সমুদ্রের খামখেয়ালি বিচিত্র আচরণ, আর অন্য দিকে সরকারি অবহেলা, বঞ্চনাএই দুইয়ের জাঁতাকলে ইতিমধ্যে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে দিঘা-শঙ্করপুরের উন্নয়ন পর্ষদের এলাকাভুক্ত ‘দিঘা’ ও ‘ঝাওয়া’ নামে দুটি মৌজা। ‘নীলপুর’ ও ‘বেগুনাডিহি’ নামে আরও দুটি মৌজারও দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রগর্ভে চলে গিয়েছে। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্রের জোয়ার পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সরে আসায় পুরাতন দিঘা থেকে আরও পূর্ব দিকে জলধা পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার এলাকায় সমুদ্র ভাঙনের প্রবণতা বেড়েছে। চূড়ান্ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলবর্তী ২৮টি গ্রামের ৬০-৭০ হাজার মানুষ।
গত দশ বারো বছর ধরে সেচ দফতর বা দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ভাঙন প্রতিরোধে কোনও সদর্থক ভূমিকা নিতে পারেনি। শঙ্করপুর থেকে ১ কিলোমিটার দীর্ঘ যে জিওটিউব বসানো হয়েছিল, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে তাও ছিন্নভিন্ন। ‘গ্রোয়েন’ পদ্ধতিতে সমুদ্র বাঁধ তৈরির ফলে দিঘা মোহনা এখন ভাঙন আতঙ্ক থেকে অনেকটাই মুক্ত। কিন্তু মোহনার পূর্ব দিকে তিলতিল করে ভেঙে চলেছে শঙ্করপুর থেকে জলধা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে প্লাবনভূমি। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি দিঘায় সমুদ্র উৎসবের উদ্বোধন করতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙন উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শনের পর অবিলম্বে দিঘার উদয়পুর থেকে জলধা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সমুদ্রবাঁধ সেচ দফতরের মাধ্যমে সংস্কারের প্রতিশ্রুতিও দেন। অভিযোগ, প্রায় বছর ঘুরলেও প্রতিশ্রুতি পালন তো দূরের কথা, সমুদ্রবাঁধ সংস্কারের কোন কাজই শুরু হয়নি। সেচ দফতরের কাঁথি ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন পণ্ডিতের অবশ্য দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই ওই বাঁধ সংস্কারের জন্য ৮১ কোটি টাকার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। উদয়পুর থেকে মন্দারমণি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার স্থায়ী সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ দফতরে ছাড়পত্রের জন্য পাঠানো হয়েছে।’’ |
|
|
|
|
|