উত্তর কলকাতা
উদাসীন প্রশাসন
চলছে চোলাই
বিষ-মদ কাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির পরেও অবৈধ ভাবে চোলাই মদের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের উদাসীনতা চলছেই। আর তারই সুযোগে যশোহর রোডের মতো ব্যস্ত রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠেছে চোলাই মদের ঠেক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সকলের চোখের সামনেই বিক্রি হয় চোলাই মদ। কয়েকশো খদ্দের ভিড় করে চোলাই খাওয়ার জন্য। সন্ধ্যার পরে চোলাইয়ের ঠেকের আশেপাশে মদ্যপায়ীদের প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে থাকতেও দেখা যায়। অভিযোগ উঠেছে, যশোহর রোডে চলাচলকারী অসংখ্য মানুষের চোখের সামনে চোলাইয়ের এই অবৈধ ব্যবসা রমরমিয়ে চললেও পুরো ব্যাপারটাই পুলিশ ও আবগারি প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে।
যশোহর রোডের বিটি কলেজ বাসস্টপে নোয়াই খালের ব্রিজ পেরিয়ে রাস্তার দক্ষিণ ধারে একটি এবং নোয়াই খালের পূর্ব পাড়ে রয়েছে আর একটি ঝুপড়ি। আপাতদৃষ্টিতে ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত ঝুপড়ি মনে হলেও এখানেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চোলাইয়ের আসর চলে বলে অভিযোগ। ওই দু’টি ঠেক ছাড়াও রয়েছে চাটের দোকান। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দুই ঠেকের কাছেই মধ্যমগ্রাম ও নিউ ব্যারাকপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যারেল ভর্তি করে চোলাই এনে জড়ো করে চোলাই কারবারিরা। তার পরে প্লাস্টিকের পাউচে নির্দিষ্ট মাপে চোলাই মদ ভরা হয়।
১০ টাকা আর ২০ টাকার মাপের পাউচ পাওয়া যায়। ঝুপড়ির পাশে একটি কাঠচেরাই কারখানার জড়ো করা কাঠের গুঁড়ির উপরে জড়ো হন মদ্যপায়ীরা। ওই জায়গায় অজস্র খালি চোলাইয়ের প্যাকেট পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকাল থেকেই দেখা যায়, বাসরাস্তার ধারের ঝুপড়ির মধ্যে ঢুকে কেউ চোলাই পান করে বেরিয়ে আসছেন। কেউ ব্যাগে পাউচ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ আবার পাউচ নিতে নেমে পড়ছেন খালের গায়ে গজিয়ে ওঠা দ্বিতীয় ঝুপড়িতে। টালির চালের ওই ঠেকগুলিতে প্লাস্টিকের চট দিয়ে আড়াল করে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে চোলাইয়ের ব্যবসা। কিন্তু অভিযোগ, গোটা ব্যাপারটা রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের নজরে পড়ে না। এলাকাটি মধ্যমগ্রাম পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এবং বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্গত এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় পড়ে। গঙ্গানগর স্কাউটপাড়া লাগোয়া এই চোলাই ঠেকের জন্য স্থানীয় সারদা জুনিয়র হাইস্কুলের পড়ুয়াদের প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়। ওই স্কুলেরই এক পড়ুয়ার অভিভাবিকা রত্না মণ্ডল বললেন, “মদ্যপায়ীরা রাস্তায় ভিড় করে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে থাকে। কখনও রাস্তায় শুয়ে থাকে। তখন পথ চলা দুরূহ হয়ে ওঠে। কিন্তু কেউ দেখার নেই।”
স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কথায়: “করাতকলের পাশে একটি লাইসেন্সড্ মদের দোকান হচ্ছিল। স্কুলের সমস্যার কারণে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তিতে বছরখানেক আগে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই জায়গার পাশেই যখন চোলাইয়ের ঠেক গড়ে উঠল তখন আর কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।” পথচারী বিশাল সরকার বললেন, “বিষ-মদ কাণ্ডে রাজ্য সরকার এক দিকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, অন্য দিকে বিষ-মদের নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতা দেখাচ্ছে। রাস্তার ধারে প্রকাশ্য দিবালোকে এই চোলাইয়ের ঠেক প্রশাসনের উদাসীনতাকেই তুলে ধরে। পুলিশ আর আবগারি দফতরের কর্তারা সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন।”
অভিযোগের জবাবে আবগারি বিভাগের বিধাননগর জোনের আবগারি সুপার বরুণ রায় বললেন, “এলাকা ভাগাভাগির জন্য একটু অগোছালো অবস্থায় রয়েছি। কিছু দিনের মধ্যেই নিয়মিত অভিযান শুরু হবে। তবু ওই ঠেক দু’টিতে অভিযান চালানোর জন্য যত দ্রুত উদ্যোগী হওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করছি।” আর এ বিষয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি, এ সব কোথায় হচ্ছে।”

—নিজস্ব চিত্র




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.