|
|
|
|
রাস্তা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা |
রাতে প্রায় বন্দির জীবন বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের
উত্তম সাহা • শিলচর |
কাছাড় জেলার কুম্ভীরগ্রাম-মাটিছড়া মোটেও আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকা নয়। তবু এই এলাকার মানুষকে প্রায় বন্দির জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিমান বাহিনীর এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া পূর্ত দফতরের রাস্তাটিতে যান চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই রাস্তাটি শিলচর থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার রাস্তাও বটে। ফলে সমস্যা বিমানযাত্রীদেরও।
প্রথমে তিন দফায়, মোট আট ঘন্টা যান চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল বিমান বাহিনী। পরে গণ-আন্দোলনের চাপে পড়ে সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত যান চলাচলের অনুমতি দেয় তারা। ফলে জরুরি প্রয়োজনেও সন্ধ্যা সাতটার পরে আশপাশের গ্রামের মানুষ বেরোতে পারছেন না। যারা বাইরে যাচ্ছেন তাঁদেরও সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ঘরে ফিরে আসতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশ ক’টি চা-বাগানের কাজকর্মও।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে মিহিরকান্তি সোম, প্রদীপ তাঁতি, পল্টু গোয়ালারা জানান, ১৯৬৪ সালে শিলচরের কুম্ভীরগ্রামে বিমানবন্দর লাগোয়া জমিতে বিমান বাহিনীকে ঘাঁটি গড়ার জন্য জমি দেওয়া হয়। শিলচর-মাটিছড়া, পূর্ত দফতরের সড়কের দুই দিকে তাদের জমি দেওয়া হয়। কিন্তু সড়ক ব্যবহারে কোনও সময় সমস্যা দেখা দেয়নি। মাটিছড়া, গুমটিবাড়ি, দ্বিগুণছড়া, পাতিছড়া, ইটাছড়া, কুম্ভা, নীচতল, লাংলাছড়া, ভান্ডুল, কুম্ভীরগ্রাম, ইন্দুগ্রাম, টিকল-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের এটাই প্রধান রাস্তা। কুম্ভা, কুম্ভীরগ্রাম, পাতিছড়া, মাটিছড়া, দেওয়ান বড়থল এবং লাবক চা-বাগানও এই রাস্তাটিই ব্যবহার করে। |
|
হঠাৎই, গত ২৭ নভেম্বর বিমান বাহিনীর তরফে জানানো হয়, সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা, বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা এবং বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সড়কে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। বাকি ১৬ ঘন্টা যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন চা-উৎপাদকরাও। জেলা প্রশাসন ১ ডিসেম্বর বিমানবাহিনীর স্থানীয় উইং কমান্ডারকে চিঠি পাঠিয়ে পূর্ত বিভাগের রাস্তাটি খোলা রাখতে বলে। কিন্তু বিমানবাহিনী কোনও গুরুত্ব দেয়নি। প্রতিবাদে গত ৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে শিলচর-কুম্ভীরগ্রাম সড়কে অবরোধের ডাক দেয় এলাকাবাসী। মানুষের চাপে সেদিনই বিমান বাহিনী সকাল সাতটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত রাস্তা খোলা রাখার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তী তাঁদের এলাকাবাসীদের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ দেন। পরদিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর জেলাশাসক হরেন্দ্রকুমার দেবমহন্ত দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে বিমান বাহিনীর তরফে জানানো হয়, রাতে এই রাস্তায় যান চলাচল বিমান ঘাঁটির নিরাপত্তার পক্ষে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই কারণে রাতে কোনও যান চলাচলের অনুমতি বিমান বাহিনী দেবে না। পরিবর্তে বিমান বাহিনীর কর্তারা জানিয়ে দেন, সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত যান চলাচল তারা করতে দেবে। তারপরে নয়।
অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, একটি বিকল্প রাস্তার কথা অনেক দিন থেকেই তাঁরা ভাবছেন। প্রয়োজনীয় সার্ভেও শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন পূর্ত দফতরের ‘ফিজিবিলিটি রিপোর্ট’-এর অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। সব ঠিকঠাক থাকলে শীঘ্রই বিকল্প রাস্তা তৈরিতে হাত দেবেন তাঁরা। তবে গ্রামবাসীদের তরফে জানানো হয়েছে, রাতে যাতায়াতের এই বিধি নিষেধ তাঁরা মানবেন না। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|