পুরমন্ত্রীর ‘আপন দেশে’
ত্রিফলার শহরে এক অন্য কলকাতা, ‘নো লাইট জোন’
খোদ রাজ্যের পুরমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। অথচ, সেখানেই বেশ কয়েকটি রাস্তায় কোনও আলোর ব্যবস্থা হয়নি আজ পর্যন্ত। মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচের ওই সব এলাকার মানুষ এখনও পর্যন্ত স্ট্রিট লাইটের মুখই দেখেননি। তাই সন্ধ্যার পরে ওই সব এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার। কলকাতা পুরসভার রেকর্ডে এলাকাগুলি রীতিমতো ঘোষণা করে ‘নো লাইট জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। শহরে যেখানে বহু রাস্তায় সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্পের পাশাপাশি ত্রিফলা আলো লাগানো হয়েছে, সেখানে পুর-এলাকার মধ্যেই ‘নো লাইট জোন’ থাকার বিষয়টি অস্বস্তিতে ফেলেছে পুরসভাকে।
তাঁর নির্বাচনী এলাকার মধ্যে কিছু রাস্তায় আলো না-থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এলাকার আঁধার ঘোচাতে ফিরহাদ চিঠি দিয়েছেন পুরসভার আলো বিভাগের মেয়র পারিষদকে। তবে শুধু তাঁর নির্বাচনী এলাকার রাস্তাই নয়, সংলগ্ন বেশ কয়েকটি পুর-ওয়ার্ডের রাস্তা ‘নো লাইট জোন’-এর মধ্যে পড়ে। পুরমন্ত্রী বলেন, “৭৯ ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি রাস্তায় কোনও আলো নেই। আলো বিভাগকে জানিয়েছি।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ওই চিঠির কথা জানেন না। তাঁর বক্তব্য, “কলকাতার সীমানা এলাকায় কয়েকটি জায়গায় নো লাইট জোন আছে। সে সব স্থানে ধারাবাহিক ভাবে কাজ চলছে।”
“বেহালার বাসিন্দারা তো স্বর্গরাজ্যে রয়েছেন। আর আমরা নরকে।” নিজের এলাকার কয়েকটি রাস্তায় আলো না-থাকায় এই আক্ষেপ কলকাতা পুরসভার শাসকদল তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলর মইনুল হক চৌধুরীর। তিন বার জেতা, ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মইনুল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “স্ট্রিট লাইটের সঙ্গেই ত্রিফলা আলোয় সেজেছে কলকাতার অনেক এলাকা। আর মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচের কয়েকটি রাস্তায় এখনও কোনও আলো জ্বলে না।”
একই মত গার্ডেনরিচ এলাকার আরও দুই তৃণমূল কাউন্সিলর রামপিয়ারি রাম ও হেমা রামের। ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রামপিয়ারি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার কাউন্সিলর। আগে বিধায়কও ছিলেন। বললেন, “এলাকার প্রায় ১০টি রাস্তায় কোনও স্ট্রিট লাইট নেই।”
দিন ফুরোলেই অন্ধকার...
অয়েল ইনস্টলেশন রোড গোড়াগাছা রোড
হেলেন কেলার সরণি মাঝেরহাট রেলগেট।
রামপিয়ারি আরও বলেন, “স্থানীয় সোনারপুর রোড, অয়েল ইনস্টলেশন রোড, হেলেন কেলার রোড, সোনাই রোড ও গোড়াগাছা রোড-সহ আরও বেশ কয়েকটি রাস্তায় কোনও আলো নেই।” তিনি জানিয়েছেন, মাঝেরহাট থেকে মোমিনপুর মর্গ (কাঁটাপুকুর) যাওয়ার রাস্তাতেও আলোর অভাব রয়েছে। অন্ধকারের মধ্যেই ওই সব রাস্তার উপর দিয়ে ভারী যানবাহন যাতায়াত করে। সেই জন্য মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। পুরসভার আলো বিভাগকে বারংবার জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। অয়েল ইনস্টলেশন রোডের বাসিন্দা সুরজমল সাউ বলেন, “সূর্য ডুবে গেলে মালুমই হয় না যে, কলকাতার কোথাও আছি, না কোনও গণ্ডগ্রামের মধ্যে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, মেটিয়াবুরুজ সংলগ্ন ১৩৯, ১৪০ ও ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকাও নো লাইট জোন হিসেবে রয়েছে। মইনুল জানিয়েছেন, স্থানীয় ওয়ারিশ নগর, আইব নগর ও কাঞ্চনতলার বেশ কিছু রাস্তায় এখনও বাতি নেই। তাঁর অভিযোগ, “পুর-কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। এ দিকে কারও নজরই নেই।”
রামপিয়ারি রাম জানিয়েছেন, নো লাইট জোনের বিষয়টি পূর্বতন ডিজি (আলো) গৌতম পট্টনায়ককে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কিছু হয়নি। পরে মেয়র পারিষদ মনজার ইকবালকেও জানানো হয়েছে। রামপিয়ারির কথায়, “মনজার সাহেব বললেন, এক সঙ্গে অত লাইট আমরা কোথায় পাব?”
এ বার মন্ত্রীর চিঠি পেয়ে কী বলছেন মেয়র পারিষদ?
মনজার ইকবালের বক্তব্য, “পুজোর মরসুম চলছিল বলে কাজ করা যায়নি। এ বার ওই কাজ শুরু করব।” বন্দর এলাকার ওই ওয়ার্ডগুলি পুরসভার পাঁচ নম্বর জোনের আওতায়। ওই জোনের আলো বিভাগের এক অফিসার বলেন, “কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম। নো লাইট জোনে আলো লাগানোর নির্দেশ এলেই কাজ শুরু হবে।”

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.