মৃত্যু এক জনের
আট এক্সডিআর যক্ষ্মারোগীর খোঁজ
ক্ষ্মার প্রচলিত কোনও ওষুধ এঁদের দেহে কাজ করে না। এঁদের থেকে অন্য রোগীর দেহে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হলে তাঁদেরও প্রচলিত কোনও ওষুধ কাজ করবে না। এঁরা প্রত্যেকেই ‘এক্সট্রিমলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ (এক্সডিআর) যক্ষ্মারোগী। গত সাত-আট মাসে পশ্চিমবঙ্গের দু’টি সরকারি যক্ষ্মা হাসপাতালে এই রকম মোট ৮ জন এক্সডিআর যক্ষ্মারোগী পাওয়া গিয়েছে বলে স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যে এক জনের মৃত্যুও হয়েছে।
রাজ্যে প্রচুর এক্সডিআর যক্ষ্মা রোগী পাওয়া যাচ্ছে বলে গত কয়েক বছর ধরেই দাবি করছিলেন বেসরকারি যক্ষ্মা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কিন্তু তখনও পর্যন্ত সরকারি যক্ষ্মা হাসপাতালে কোনও এক্সডিআর রোগী ভর্তি হননি। তা ছাড়া, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ অনুমোদিত ভারতের কোনও পরীক্ষাগারে কফ পরীক্ষা করে পশ্চিমবঙ্গের কারও এক্সডিআর জীবাণু পাওয়া যায়নি। তাই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছিল।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “গত কয়েক মাসে রাজ্যে সরকারি ভাবে ৮ জনের দেহে এক্সডিআর যক্ষ্মারোগী মিলেছে। বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস ইনস্টিটিউট’-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত পরীক্ষাগারে এঁদের কফ পরীক্ষার পর এক্সডিআর যক্ষ্মার জীবাণুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।”
যাদবপুর কেএস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালে আপাতত তিন জন এক্সডিআর রোগী ভর্তি রয়েছেন। আরও দুই এক্সডিআর রোগীকে এখান থেকে কিছু দিন আগে ছাড়া হয়েছে। তাঁরা এখন বাড়িতেই ওষুধ পাচ্ছেন। এ ছাড়া, দার্জিলিংয়ের রানি অশ্রুমতী যক্ষ্মা হাসপাতালে আরও ৩ জন এক্সডিআর রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। ভারতে মহারাষ্ট্রের পরে পশ্চিমবঙ্গই হল দ্বিতীয় রাজ্য যেখানে সরকারি ভাবে এক্সডিআর যক্ষ্মারোগী পাওয়া গিয়েছে।

যক্ষ্মা চিত্র
• ২০১০ সাল পর্যন্ত এক্সডিআর যক্ষ্মা ধরা পড়েছে ৫৮টি দেশে
• পৃথিবীতে প্রতি বছর এক্সডিআর যক্ষ্মা আক্রান্ত ৪০ হাজার
• ভারতে প্রতি বছর মোট যক্ষ্মা-আক্রান্তের ১৫ শতাংশের দেহে ওষুধ-প্রতিরোধী ক্ষমতা
• ভারতে প্রতি দিন যক্ষ্মায় মৃত্যু ১ হাজার জনের
• ভারতে বছরে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১ লক্ষ

এক্সডিআর যক্ষ্মারোগীর ওষুধ প্রায় হয় না বললেই চলে। যতটুকু রয়েছে সেটা বিনা পয়সায় কেন্দ্রের সরবরাহ করার কথা। বাজারে কিনতে গেলে ওষুধের দাম প্রচণ্ড। ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ (এমডিআর) যক্ষ্মার থেকেও এই যক্ষ্মা মারাত্মক। কারণ, এমডিআর রোগীদের ক্ষেত্রে যতটুকু ওষুধ কাজ করে এঁদের ক্ষেত্রে সেটাও হয় না।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি চিকিৎসকদের দাবি মতো যদি ধরা যায়, রাজ্যে অনেক দিন আগে থেকে এক্সডিআর রোগী রয়েছে, তা হলে এত দিন এই রকম কোনও রোগী কোনও সরকারি যক্ষ্মা হাসপাতালে পাওয়া যায়নি কেন? বেসরকারি চিকিৎসকদের জবাব, “কারণ, রাজ্যে এক্সডিআর যক্ষ্মার চিকিৎসা হয় শুধু যাদবপুরের কেএস রায় হাসপাতাল ও দার্জিলিঙের রানি অশ্রুমতী যক্ষ্মা হাসপাতালে। অন্য জেলা থেকে রোগীদের সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করানোটাই কঠিন। তার উপর, সরকারি ভাবে যক্ষ্মার চিকিৎসায় এত নিয়মকানুনের ফাঁস যে লোকে এখনও বেসরকারি ক্ষেত্রেই চিকিৎসা বেশি করে। ফলে সরকারি ভাবে তাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়নি।
বেসরকারি চিকিৎসকদের দাবি, রাজ্যে বহু যক্ষ্মারোগীর দেহে এক্সডিআর-এর জীবাণু জন্মাচ্ছে, অথচ তাঁরা চিহ্নিত হচ্ছেন না।
এবং তাঁরা সরাসরি সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের মতো যক্ষ্মাপ্রবণ এবং ঘনবসতিযুক্ত রাজ্যে পক্ষে যা মারাত্মক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, এক্সডিআর যক্ষ্মা সাধারণত দু’ভাবে হতে পারে। এক, যক্ষ্মারোগীর চিকিৎসা চলাকালীন মাঝপথে ছেদ পড়লে বা চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে। দুই, অন্য কোনও এক্সডিআর রোগীর থেকে সরাসরি জীবাণু সংক্রমণ হলে।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, কেএস রায় যক্ষ্মা হাসপাতালের পাঁচ জন রোগীর কারও ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় ছেদ পড়ে শরীরে এক্সডিআর জীবাণু জন্মায়নি। তাই চিকিৎসকদের আশঙ্কা, বাইরে থেকে এঁদের দেহে সরাসরি এক্সডিআর যক্ষ্মার জীবাণুই ঢুকেছে। ফলে পরোক্ষে প্রমাণিত হচ্ছে, রাজ্যে আগে থেকেই এক্সডিআর রোগীর অস্তিত্ব রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.