স্থগিতাদেশে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ৫৫ লক্ষের
লকাতা হাইকোর্টে ফের ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। এ বার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। কোর্টের নির্দেশে আপাতত স্থগিত গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া। যার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ৫৫ লক্ষ প্রার্থীর ভবিষ্যৎ।
একেই শিক্ষক কম থাকায় এ রাজ্যে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কেন্দ্রীয় আইনের থেকে বেশি। যার অর্থ, বাড়তি চাপ নিয়ে পড়াতে হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাক-প্রাথমিকেও ছাত্র ভর্তি শুরু হবে। ফলে শিক্ষকের অভাব আরও বাড়বে। শিক্ষকমহল বলছে, এ বারের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে সুরাহাও হয়ে পড়বে দূর অস্ৎ। এবং আরও ব্যাহত হবে প্রাথমিকে পড়াশোনা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই ৫০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করার ইচ্ছে ছিল রাজ্য সরকারের। সেই মতো গত ১৫ অক্টোবর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই অনুযায়ী, যাঁরা দু’বছরের ডিএলএড (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন) পাশ করেছেন (রাজ্যে এখন তাঁদের সংখ্যা ১৪ হাজার) তাঁদের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে। এখানেই আপত্তি তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হাজারের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (যাঁরা ডিএলএড পাশ) আবেদনকারী। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, সেই আর্জির শুনানির পর বৃহস্পতিবার সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে দিল হাইকোর্ট। ফলে স্থগিত হয়ে পড়ল এই সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রক্রিয়া।
আবেদনকারীদের অভিযোগ ছিল, এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যদের পরীক্ষা নেওয়া যায় না। কিন্তু রাজ্য সরকার সেটাই করছে। এনসিটিই-র আইনজীবী আশা গুটগুটিয়া আদালতে আবেদনকারীদের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ শেষ না করে কখনই প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করা যায় না। পর্ষদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত বলেন, “প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের স্বীকৃতি দিতেই তাঁদের অতিরিক্ত ২০ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ।” এনসিটিই-র বিধি উল্লেখ করে আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কোর্টকে বলেন, “এ ভাবে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়াও নীতিবিরুদ্ধ।” বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত আবেদনকারীদের বক্তব্যকে আপাতগ্রাহ্য মনে করে এ দিন বলেন, “এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত রাখা হল।”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, “স্থগিতাদেশের কথা শুনেছি। আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।” স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর ডিভিশন বেঞ্চে যাবে রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ রাজ্যের পক্ষে গেলে ১৫ অক্টোবরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া যাবে। না হলে সিঙ্গল বেঞ্চের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বিচারপতি করগুপ্ত এ দিন তাঁর নির্দেশে বলেন, “মামলা চলাকালীনই যদি পরীক্ষা হয়ে যায়, তা হলে চূড়ান্ত রায় পর্ষদের বিরুদ্ধে গেলে রাজ্যকে নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে। ফলে সরকারের ঘাড়ে শুধু বিশাল খরচের বোঝাই চাপবে না, যে ৫৫ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরির আবেদন করেছেন, তাঁদের নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। তাই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পর্ষদের ওই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত থাকবে।”
• ১৫ অক্টোবর শিক্ষক পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি
• পদ ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ৫০ হাজার
• ৫৫ লক্ষ আবেদনকারী, ফর্মের দাম ১০০ টাকা
• পরীক্ষা হওয়ার কথা এ মাসের শেষে
১৬ নভেম্বর হাইকোর্টে মামলা, হাজারেরও বেশি আবেদনকারী
• মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত
• এনসিটিই*-র নির্দেশিকা মেনে বিজ্ঞপ্তি দেয়নি রাজ্য
• প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যদের পরীক্ষা অবৈধ
• প্রশিক্ষিতদের ২০ নম্বর গ্রেস নিয়মবিরুদ্ধ
* ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার্স এডুকেশন
• দুই সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দেবে রাজ্য
• তার এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর আবেদনকারীদের
• রায় চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে রাজ্য
• সেখানে জিতলে পরীক্ষা পুরনো বিজ্ঞপ্তিতেই
দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা। তা হতে হতে বড়দিনের ছুটি পড়ে যাবে। আদালত খুলবে ২ জানুয়ারি। অর্থাৎ, চূড়ান্ত শুনানি শুরু হতে হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাবে। রায় যার বিরুদ্ধে যাবে, সেই পক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানাতে পারে। ফলে সহজে মামলা মিটবে না বলেই শঙ্কা আইনজীবীদের।
তাঁরা বলছেন, রাজ্য সরকার যদি দু’বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী এবং সাধারণ প্রার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া কথা ঘোষণা করত, তা হলে এই জটিলতার সৃষ্টি হত না। এখনও যদি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, তা হলেও সমস্যার সমাধান হয়। বস্তুত, নানা আইনি জটিলতায় রাজ্যে ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা যায়নি। এর মধ্যে অনেক নতুন পদও তৈরি হয়। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার পদ এখনও শূন্য। এখন এই সমস্যারও আশু সমাধান দূর অস্ত।
এ দিন রাজ্যের আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। তিনি বলেন, “ক, খ শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দরকার হয় না। প্রাথমিকে পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ তত গুরুত্বপূর্ণ নয়।” আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “বিশ্বের সব শিক্ষাবিদই প্রাথমিক শিক্ষায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। কারণ তখনই ভিত তৈরি হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.