ইস্ট-ওয়েস্টে মমতাকেই দুষলেন অধীর
লকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করছে কেন্দ্র। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, “স্রেফ রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার আকাঙ্খায় প্রকল্পের রূপায়ণকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। যার খেসারত দিতে হচ্ছে রাজ্যকে।” সরকারি ভাবে প্রস্তাব পেলে প্রকল্পের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে ছেড়ে দিতে রেল তৈরি বলেও আজ ঘোষণা করেছেন অধীরবাবু।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রসঙ্গে দিল্লির দিকে আগেই আঙুল তুলেছেন মমতা। গত কাল তিনি বলেছিলেন, “রেল ঢিলেমি করছে। রেল যদি না-পারে, তা হলে প্রকল্পটির দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতে ছেড়ে দিক। আমরা করে দেখাব।” মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের চব্বিশ ঘণ্টা না-কাটতেই রেলের তরফে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অধীরবাবু আজ বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবকে স্বাগত। উনি সরকারি ভাবে প্রস্তাব দিন, রেল এখনই রাজ্যের হাতে দায়িত্ব ছাড়তে প্রস্তুত।” রেল প্রতিমন্ত্রীর দাবি: নীতিগত ভাবে রেল কখনওই প্রকল্পটির দায়িত্ব নিতে চায়নি, আজও চায় না। “মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এক প্রকার জোর করেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকে রেলের আওতায় এনেছিলেন।” মন্তব্য অধীরবাবুর। ইউপিএ ছাড়ার আগে তৃণমূলের যে সাংসদ কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, সেই সৌগত রায় অবশ্য বলেন, “সব রাজ্যেই কেন্দ্র-রাজ্য মিলে কাজ করছে। এখন কেন্দ্র ভার দিতে চাইলে রাজ্য ঠিকই কাজ শেষ করতে পারবে। তবে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার ফলে দেরি হবে।”
দেশের মেট্রো শহরগুলোয় গণ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে একদা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকেরই অধীনে মেট্রো করিডর গঠনের নীতি নির্ধারিত হয়েছিল। তা অনুসারে দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদে মন্ত্রকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মেট্রো রেল প্রকল্প গড়ে তুলছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য। আবার কোচিতে কেরল সরকারই মেট্রো বানাচ্ছে। কলকাতায় কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডর গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্মতি দিয়েছিল সাড়ে চার বছর আগে। তাতে জাপানের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘জাইকা’ ঋণ দিতে রাজি হয়। প্রকল্প রূপায়ণের লক্ষ্যে গড়া হয় কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসি), যাতে কেন্দ্র-রাজ্য ৫০% করে অংশীদারি ছিল। পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় তখন বাম সরকার।
কিন্তু পরের বছর কেন্দ্রে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই মমতা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানান, রেল মন্ত্রক ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প অধিগ্রহণ করতে চায়। নীতিগত আপত্তি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী জোট শরিকের দাবি মেনে নেন। রাজ্যের আর্থিক দায় থাকবে না ভেবে বাম সরকারও আপত্তি তোলেনি। গত ২৩ অগস্ট ইস্ট-ওয়েস্টের ভার রেলকে হস্তান্তরে সম্মতি দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর দু’মাসের মধ্যে তৃণমূল ইউপিএ-র সঙ্গ ছাড়ে, রেলমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন মুকুল রায়।
তার পরে, সদ্য গত মাসে সরকারি ভাবে ওই প্রকল্পে রাজ্যের নির্ধারিত অংশীদারিত্ব কেন্দ্রকে হস্তান্তর করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রেল বোর্ডের এক কর্তা আজ বলেন, “এই টালবাহানায় বিস্তর সময় গিয়েছে। উপরন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেওয়ার পরেও রাজ্য সরকার অংশীদারিত্ব হস্তান্তরে অযথা দেরি করেছে। এতে কেএমআরসি-র উপরে প্রশাসনিক দখল নিতে রেলের দেরি হয়েছে।” এই বিলম্বের কারণেই ইস্ট-ওয়েস্ট’কে রেলের ‘পিঙ্ক বুক’-এ তোলা যায়নি বলে দাবি ওই কর্তার। ফলে অর্থ বরাদ্দের কাজ শুরু করা যায়নি।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ভবিষ্যৎ কেন ‘অনিশ্চিত’ হয়ে পড়ছে, রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুও আজ তা তথ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন। অধীরবাবুর বক্তব্য: প্রকল্পটি নিয়ে রেলমন্ত্রী পবন বনশলের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। কিন্তু আর্থিক অনটনের মধ্যেও রেল শুধু একটা রাজ্যের প্রকল্পে কেন এত টাকা ঢালবে, বনশল সে প্রশ্ন তোলেন। অন্য প্রশ্নও উঠেছে। কী রকম?
রেল মন্ত্রকের খবর: মূল নক্শা অনুযায়ী মেট্রো করিডরটি হাওড়া ময়দান থেকে শুরু করে গঙ্গা পেরিয়ে মহাকরণ-সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-বৌবাজার-শিয়ালদহ হয়ে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত যাবে। কেএমআরসি সেই মতো কাজ শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা প্রস্তাব দেন, বৌবাজার-সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের বদলে মেট্রোপথটি শিয়ালদহ থেকে এসএন ব্যানার্জি রোড-এসপ্লানেড হয়ে মহাকরণ পৌঁছাক। সেই অনুযায়ী রাইটস-কে দিয়ে একটি রিপোর্ট বানানো হয়।
রেল-সূত্রের দাবি: নতুন নক্শা মানলে প্রস্তাবিত মেট্রো-করিডরের দৈঘ্য প্রায় দু’কিমি বাড়বে, তাতে খরচও বাড়বে। পাশাপাশি আগের নক্শা অনুযায়ী কাজে নামার আগে প্রকল্পের স্বার্থে বহু পরিবারকে সরাতে হয়েছে। তাঁদের পুনর্বাসনে রেল বাড়ি বানিয়েছে। পুরনো নক্শা বাতিল হলে সে টাকাও জলে যাবে। সর্বোপরি রেল-কর্তাদের আশঙ্কা, মোট প্রকল্প-ব্যয়ের ৪৫% ঋণ হিসেবে দিচ্ছে যারা, নক্শা বদলালে সেই জাইকা-ও বেঁকে বসতে পারে। এ হেন টালবাহানার দরুণ হাওড়ার দিকে টানেল খুঁড়তে আনা যন্ত্রপাতিগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা সরিয়ে নিতে চেয়েছে বলে অভিযোগ অধীরবাবুর। “কার্যত জোর করে ওদের আটকে রাখা হয়েছে।” বলেন তিনি।
সব মিলিয়ে এই মেট্রো প্রকল্প সময়ে শেষ করা যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা অধীরবাবু দিতে পারেননি। তাঁর ব্যাখ্যা, “একে তো রেলের অর্থ সঙ্কট। তার উপরে এক জন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি আর কত চাপ দিতে পারব? তার চেয়ে বরং রাজ্যই দায়িত্ব নিয়ে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়িত করুক।” যা শুনে সৌগতবাবু বলছেন, “রেল তৃণমূলের হাতে থাকলে অসুবিধে হত না। তবে কেন্দ্র দায়িত্ব দিলে রাজ্য করতে পারবে। শুধু হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে রেলের সহযোগিতা লাগবে। এতে সামঞ্জস্য থাকবে না। কিন্তু প্রকল্পটা তো সম্পূর্ণ হবে!”

পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো
প্রকল্প মঞ্জুর জুলাই ২০০৮
আনুমানিক ব্যয় ৪৮৭৮ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা
প্রাথমিক দায়ভার কেন্দ্র: ৫০%
রাজ্য: ৫০%
পরিবর্তিত দায়ভার কেন্দ্র: ২৬%
রেল: ৭৪%
কাজ হয়েছে ২৭%
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.