পাঁচ দিন আগে কলকাতায় এসে ইনফোসিসের কো-চেয়ারম্যান এস গোপালকৃষ্ণন জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (এসইজেড) তকমা ছাড়া কোনও ভাবেই তাঁরা রাজারহাটে প্রকল্প গড়বেন না। বৃহস্পতিবার নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন, রাজ্য সরকার কোনও অবস্থাতেই ইনফোসিসের এই দাবি মানবে না। তাঁর কথায়, “আমরা নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এসইজেড মানব না। কোনও অবস্থাতেই তা মানা সম্ভব নয়।”
তবে কি এ রাজ্যে ইনফোসিসের প্রস্তাবিত তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পের গঙ্গাযাত্রা নিশ্চিত?
শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটা এক প্রকার স্পষ্ট যে, সরকারের এসইজেড-বিরোধী অবস্থানের জন্য ইনফোসিসের মতো সংস্থা যদি রাজ্য থেকে বিদায় নেয়, তা হলেও তাঁদের কিছু যায় আসে না। যদিও পরে মহাকরণে তিনি বলেন, “আমাদের নীতি এসইজেড-এর বিরুদ্ধে। কিন্তু ইনফোসিস-কে আমরা ছাড়ব না। এ জন্য যা করার করব।” অন্য দিকে, শিল্প মহলের মতে, সরকারের মনোভাব রাজ্যে এমনিতেই প্রায় স্তব্ধ শিল্পায়নের পথে আরও একটা বড় ধাক্কা।
 পাঁচ দিন আগে ইনফোসিস-কর্তার মন্তব্যের পরে শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন, “গোপালকৃষ্ণন আমার বিশেষ বন্ধু। ওঁর সঙ্গে কথা বলেই যা বলার বলব। তবে আমি চাই ইনফোসিস এ রাজ্যে থাকুক।” বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় নিজেই ইনফোসিসের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতি দেন শিল্পমন্ত্রী। কিন্তু গোপালকৃষ্ণনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি পার্থবাবু।
ইনফোসিসের সঙ্গে কথা বলতে গত সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী। সে প্রসঙ্গে গোপালকৃষ্ণন বলেছিলেন, শিল্পমন্ত্রী হাতে হাত মিলিয়ে সমস্যা সমাধানের কথা বলে এলেও তার পর থেকে কাজ কিছুই এগোয়নি। পার্থবাবু এ দিন বলেন, “আমরা এসইজেড করব না। কারণ, মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙতে পারব না। কিন্তু ইনফোসিসকে বলে এসেছি, তার বদলে ‘স্পেশ্যাল টেকনোলজি পার্ক’ করে দেব। সেখানে যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তা আপনারা পাবেন।”
সরকারের এই বিকল্প প্রস্তাব ইনফোসিসকে লিখিত ভাবে দেওয়া হয়েছে কি না, সে প্রসঙ্গে অবশ্য কিছু জানাননি শিল্পমন্ত্রী। গোপালকৃষ্ণন অবশ্য আগের দিনই জানিয়েছিলেন, তাঁরা এ ধরনের কোনও প্রস্তাব পাননি। তা ছাড়া, এসইজেড-এর তকমা থাকলে পরিষেবা কর, শুল্ক, কোম্পানি করের মতো যে সব সুবিধা কেন্দ্র দিতে পারে, তা দেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের নেই।
২০০৫ সালে এ রাজ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে ইনফোসিস। এ জন্য তৎকালীন বাম সরকারের কাছে তারা ১০০ একর জমি চায়। বহু টানাপোড়েনের পরে বাম জমানার শেষের দিকে নিউটাউনে ৫০ একর জমি দিতে রাজি হয় রাজ্য সরকার। সেই জমি কিনে নিয়েছে ইনফোসিস। কিন্তু নতুন সরকার আসার পরে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসইজেড তকমা।
সরকারের একটি মহলের অবশ্য ব্যাখ্যা, বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার কারণে ইনফোসিস এখন নতুন বিনিয়োগ করতে এমনিতেই আগ্রহী নয়। তারা সময় নিচ্ছে। পরিস্থিতি শোধরালে রাজ্যের বিকল্প তারা শেষ পর্যন্ত মেনে নেবে বলেই ওই সরকারি কর্তাদের আশা। |
