৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম হাউসফুল। ১৯ বছর পরে কলকাতায় পণ্ডিত রবিশঙ্করের একক অনুষ্ঠান। প্রায় আড়াই ঘণ্টা টানা বাজিয়েছিলেন। প্রথমে দু’টো পূর্ণাঙ্গ রাগ। পরে বিভিন্ন রাগ নিয়ে রাগমালা। সেতার সঙ্গতে অনুষ্কাশঙ্কর, সঞ্জীবশঙ্কর। সেটিই হয়ে রইল এই শহরে তাঁর শেষ অনুষ্ঠান।
এর আগে ২০০০ সাল নাগাদ একটি অনুষ্ঠান দেখতে এসে রবিশঙ্কর নিজেই বলেছিলেন, ‘অনেক দিন কলকাতায় অনুষ্ঠান করা হয় না।’ তার পরেও অবশ্য ৯ বছর কেটে গিয়েছে তাঁর নিজের শহরে পণ্ডিত রবিশঙ্করের একটি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে। স্মৃতিচারণ করছিলেন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন’-এর সাধারণ সম্পাদক বাপ্পা সেন।
প্রথমে অবশ্য ২০০৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় সময় দিয়েছিলেন রবিশঙ্কর। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত চলে ডোভার লেনের বার্ষিক সম্মেলন। ওই দিনই সন্ধ্যায় আবার অত বড় মাপের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সংগঠনের পক্ষে বেশ অসুবিধের। এ দিকে, তখন রবিশঙ্করের সময় পাওয়া সহজ নয়। মাথায় হাত উদ্যোক্তাদের।
বাপ্পাবাবু বলেন, “সমস্যার কথা জানিয়ে, অনুষ্ঠানের জন্য অন্য একটি দিন চেয়ে অনুরোধ পাঠালাম পণ্ডিতজির কাছে।” এল বিকল্প দিন। ৭ ফেব্রুয়ারি পণ্ডিত রবিশঙ্কর অনুষ্ঠান করবেন কলকাতায়। উদোক্তারা জানান, নিজের সহযোগীদের গোটা দলকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন রবিশঙ্কর। এসেছিলেন স্ত্রী সুকন্যাও। মঞ্চসজ্জা থেকে অংশগ্রহণকারীদের মঞ্চে বসার ব্যবস্থাসবই হয় পণ্ডিতজির নির্দেশমতো। |
ওই দিন নিজের শহরে অনুষ্ঠান করে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। অনেকক্ষণ টানা বাজানোর পরে একটু থেমে বলেছিলেন, “অনেক দিন পরে ঘরে ফিরলাম।”
এর আগে ২০০০-এ নজরুল মঞ্চে ডোভার লেনের বার্ষিক সম্মেলনে রবিশঙ্কর চলে আসেন বিনা নিমন্ত্রণেই। বাজাতে নয়, শ্রোতা হিসেবে। বাপ্পাবাবু জানান, উস্তাদ আলি আকবর খানের সরোদ ছিল সে দিন। রবিশঙ্কর যে কলকাতায় আছেন, তা বিশেষ কেউ জানতেন না। তাই খবরও পাঠানো হয়নি তাঁকে। ওই দিনই নিজের শহরে ফের বাজানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। যা শেষ পর্যন্ত হয় ২০০৯-এ।
তার আগে ১৯৯০-এ বিবেকানন্দ পার্কে বাজান তিনি। সঙ্গতে আল্লারাখা। মাঝে কলকাতায় আর কোনও অনুষ্ঠান করেননি রবিশঙ্কর। নেতাজি ইন্ডোরের ওই অনুষ্ঠানে ‘ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন’-এর তরফে জীবনকৃতি সম্মান জানানো হয়েছিল তাঁকে।‘‘সে দিন স্টেডিয়াম ছেড়ে যাওয়ার আগে পণ্ডিতজি বলেছিলেন, আবার কবে কলকাতায় আসা হবে, কে জানে!’’ সেই কথাই মনে পড়ছে বাপ্পাবাবুর। |