অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা ‘নিষিদ্ধ এলাকা’র স্কুলের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের ওই স্কুলের খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্র দেখেই নিউ আলিপুরদুয়ারের ডু্য়ার্স অ্যাকাডেমি অফ টেকনোলেজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামের একটি সংস্থার কর্তারা সেখানে গিয়ে স্কুলটি কোথায় চলত তা দেখেন। আলিপুরদুয়ার পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওই পল্লিতে গিয়ে সেখানকার যাবতীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তাঁরা।
ওই সংস্থাটির অধিকর্তা সুমিত ভট্টাচার্য বলেন, “টাকার অভাবে বন্ধ থাকা স্কুলটি চালানোর সমস্ত দায়িত্ব আমরা নিয়ে নিচ্ছি। ঘর ভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য বেঞ্চ তৈরি, স্কুলের সামনে একটি শেড করে দেওয়া ও স্কুলটি রং করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি কম্পিউটারও দেওয়া হবে। বয়স্কদের সেলাই ও হাতের কাজের জন্য আলাদা করে শিক্ষক নিয়োগ করব আমরা।”
এ দিন স্কুলটি যিনি চালাচ্ছিলেন, সেই অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণা শিপ্রা পাল সিংহ সংস্থার অধিকর্তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে কথাবার্তা বলেছেন। অধিকর্তা জানান, শিপ্রাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুল থেকে দরকারি শংসাপত্র পায় সেজন্য সরকারি অনুমোদনের চেষ্টা হবে। নতুন বছর ২০১৩ সালের প্রথম দিন থেকে স্কুলটি চালু করার চেষ্টা করা হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। তার আগে ওই স্কুলটির পরিকাঠামো গড়ে তুলবে স্থানীয় সংস্থা। আলিপুরদুয়ারের দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সম্পাদক তাপসী দাস জানান, প্রায় বছর চারেক আগে স্কুলটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ারের পুরসভার চেয়ারম্যান দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরসভার তরফে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে।
স্কুলের অন্যতম উদ্যোক্তা শিপ্রা এর ফলে ফের আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, ২০০৪ সালে স্কুলটি চালু হয়। বহু বার সরকারি আধিকারিকদের দফতরে গিয়ে সাহায্য চাইলেও সমস্যার সমাধানে কেউ হাত বাড়াননি। তিনি বলেন, “আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের ল্যারি বসু আমাদের বই জোগাড় করে দিতেন। কোনও মতে স্কুলটি চলত। বছর চারেক আগে ঘর ভাড়া-সহ নানা সমস্যার জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে মঙ্গলবার সকালে খবর প্রকাশিত হওয়ায় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে আমাদের সঙ্গে দেখা করে স্কুলটি চালানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। ফের স্কুল চালু হবে শুনে খুব আনন্দ হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে আনার চেষ্টা করব।”
আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু জানান, বহুবার সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে যৌনপল্লির স্কুলটির সরকারি অনুমোদন মেলেনি। তবে বেসরকারি সংস্থা পাশে দাঁড়ানোয় খুশি ল্যারিবাবুরা। তিনি বলেন, “ওই এলাকার শিশুদের পক্ষে সুখবর। আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে যথাসাধ্য সাহায্য করব।” |