ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম |
সার্বিক উন্নয়নে জোর প্রশাসনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নদীমাতৃক দেশ। তাই তার সার্বিক উন্নয়নেও গুরুত্ব দিতে হবে নদীকে। সমান্তরাল ভাবে রক্ষা করতে হবে পরিবেশের ভারসাম্য। এই ভাবনা থেকেই চালু হয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম।’ সম্প্রতি এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনগ্রসর এলাকার সার্বিক উন্নয়নে জোর দিয়েছে সরকার।
এ রাজ্যের পিছিয়ে পড়া ১০টি জেলাকে এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলাগুলি হল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার। প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি ১০ শতাংশ দেবে রাজ্য। প্রকল্প ব্যয়ের ৬ শতাংশ অর্থ ‘ইনস্টিটিউশনাল ফান্ড’ বা পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “আমরা পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে অর্থ পেয়ে গিয়েছি। দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণে পদক্ষেপও করা হচ্ছে।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। আগামী জানুয়ারিতে তা জমা দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পে কী ভাবে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে?
প্রকল্প অনুসারে মূলত নদী বিধৌত এলাকা বেছে নিয়েই শুরু হবে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড। সেচের ব্যবস্থা, চাষবাস, জমির মানোন্নয়ন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ সবই রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। সম্প্রতি এই প্রকল্পে অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের পরিকল্পনাও যুক্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে কোনও একটি পিছিয়ে পড়া এলাকাকে চিহ্নিত করা হবে। সেই এলাকায় কত জমি রয়েছে, তার মধ্যে কতটা সেচসেবিত, কত পরিমাণ জমিতে সেচের ব্যবস্থা করলে ফসল ফলানো সম্ভব, কতটা জমিতে আদৌ চাষ করা যাবে না এই সব তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি করা হবে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট। তাতে এলাকার জনসংখ্যা, তার মধ্যে পুরুষ-মহিলার হার, শিক্ষিতের হার, এলাকার মানুষ কোন পেশার উপর নির্ভরশীলএই সব তথ্যও থাকবে। উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সার্বিক রূপ দিতেই এই বন্দোবস্ত। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট অনুমোদিত হলে কাজ শুরু হবে।
ঠিক কী ধরনের কাজ হবে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও এলাকায় বড় সেচ বাঁধ তৈরি করা যেতে পারে। সেই বাঁধ থেকে পাশাপাশি এলাকার জমিতে সেচের জন্য ছোট খাল কাটা হতে পারে। সেই সঙ্গে উন্নত পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যদি কৃষি দফতর মনে করে, তা হলে আরও লাভজনক ফসল ফলানোর জন্য উৎসাহিত করা হবে চাষিদের। যাঁরা চাষ করার পরিবর্তে ক্ষুদ্রশিল্প বা ছোট্ট মুদি দোকান বা সাইকেল সারানোর দোকান করেছেন তাঁদের ঋণ দেওয়া হবে।
সমীক্ষার কাজেও স্থানীয় যুবকদেরই নিযুক্ত করা হবে। তাঁদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার উন্নয়নে সামিল করানো হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক ভাবে ১৬টি ব্লকে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা করেছে। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা। বাঁকুড়া জেলা ১৫টি, পুরুলিয়া ১৩টি, জলপাইগুড়ি ৮টি প্রকল্প তৈরি করেছে। দশটি জেলা মিলিয়ে ৭৭টি প্রকল্প তৈরি করেছে। যার পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে সরকার। প্রত্যেক জেলাকে প্রাথমিক ভাবে ১৩ লক্ষ করে দেওয়া হচ্ছে। তারপরই প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। যার পরিমাণ ১৬ কোটি ৭০ লক্ষ।
প্রশাসন জানিয়েছে, একটি এলাকায় কেবলমাত্র পানীয় জল প্রকল্প, সেচের প্রকল্প বা অন্য কোনও প্রকল্প করা হয়েছে এতদিন। এ বার কোনও একটি প্রকল্প নয়, সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এক-একটি এলাকা ধরে সব ধরনের কাজ করবে প্রশাসন। জলাধার তৈরি করলে সেখানে মাছ চাষ, জলাধারের পাড়ে ফলের বাগান, এলাকার জমিকে চাষের উপযোগী করা, এমনকী দোকান করলে বা ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলে ঋণ দিয়ে সাহায্য করা সবই করা যাবে এই প্রকল্পে। তবে বিদ্যালয় তৈরি বা বড় রাস্তা তৈরির মতো কাজ করা যাবে না। প্রকল্প রূপায়ণে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যার চেয়ারম্যান জেলাশাসক। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা গেলে সহজেই পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। |