কুয়াশায় ট্রেন-বিমানের দেরি, মেঘেই কাবু শীত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
উত্তরে কুয়াশার দাপট ছিল সোমবার। মঙ্গলবার ঘন কুয়াশা নেমে এল দক্ষিণবঙ্গেও। তার জেরে বিপর্যস্ত হয়ে গেল ট্রেন ও বিমান চলাচল। দক্ষিণের সঙ্গে সঙ্গে এ দিনও কুয়াশায় হয়রান হয়েছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। এই নিয়ে পরপর দু’দিন। আজ, বুধবারের সকালও কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার কথা গোটা উত্তরবঙ্গ এবং কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার।
শুধু কুয়াশা নয়, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টিও হয় এ দিন। রাতে মহানগরে কয়েক পশলা জোর বৃষ্টি হয়। পরিমণ্ডলে প্রচুর মেঘ থাকায় শীতের দফারফা। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আজ, বুধবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হাল্কা বৃষ্টি হবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন চার ডিগ্রি বেশি হবে। ফলে অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সোমবার বেশি রাত থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা ভেদ করে দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। বিমান ও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। কলকাতা থেকে পাঁচটি উড়ান প্রায় আধ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সোমবার রাত সওয়া ৩টের পর থেকে দৃশ্যমানতা ৩০০ মিটারের নীচে নেমে যায়। ওই সময় কাতার এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছাড়ে। কিন্তু তার পর থেকে দীর্ঘ ক্ষণ আর কোনও বিমান ছাড়তে পারেনি। কুয়াশার দাপট কমলে প্রথম বিমান ছাড়ে ভোর ৬টা ১০ মিনিটে। সেটি ছিল পোর্ট ব্লেয়ারের উড়ান।
কুয়াশায় কোনও ট্রেন বাতিল না-হলেও দূরপাল্লা ও লোকাল ট্রেন চলেছে অনেক দেরি করে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, হাওড়া-বর্ধমান মেন ও কর্ড, শিয়ালদহ মেন, বনগাঁ, হাসনাবাদ ও দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলেছে খুব ধীরে। কুয়াশার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর, খড়্গপুর-ভদ্রক ও খড়্গপুর-টাটা শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় সোমবার রাত আড়াইটের পর থেকেই।
শুধু শিয়ালদহ ডিভিশনেই ১৭টি ইএমইউ লোকাল ট্রেন দেরি করেছে ২০ থেকে ৫০ মিনিট পর্যন্ত। শিয়ালদহ থেকে মালদহ পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার দাপটে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনেরও দেরি হয়েছে। ডাউন ট্রেন দেরিতে পৌঁছনোয় বিভিন্ন শাখায় দূরপাল্লার বিভিন্ন ট্রেন ছাড়তে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।
কুয়াশা ও বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়ার হঠাৎ এই ভোলবদল কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া একটি উচ্চচাপ বলয় জলীয় বাষ্প ঠেলে দিচ্ছে স্থলভূমির দিকে। আর উত্তর ভারত থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সেই জলীয় বাষ্প টেনে নিচ্ছে তার কেন্দ্রে। এর ফলেই সকালে ঘন কুয়াশা হচ্ছে। সারা দিন আকাশ মেঘলা থাকছে। কোথাও কোথাও হাল্কা বৃষ্টিও হচ্ছে। কাল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবহাওয়া এমনটাই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
তা হলে কি বৃহস্পতিবারের পরে প্রকৃত শীত পড়বে? সেই ব্যাপারে আবহবিদেরা এখনও নিশ্চিত নন। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা যত তাড়াতাড়ি দুর্বল হবে, শীতের সম্ভাবনা তত বাড়বে। বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়টি কত দিন সক্রিয় থাকছে, তার উপরেও আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করছে। |